ক্ষুদে এক ব্যবসায়ীর গল্প

আবু সালেহ সায়াদাত
আবু সালেহ সায়াদাত আবু সালেহ সায়াদাত , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:০৬ পিএম, ২৮ জানুয়ারি ২০১৮

মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানা। দর্শনার্থীদের সমাগমও বেশ । আর তাদের ঘিরে চিড়িয়াখানার প্রধান ফটকের সামনে রয়েছে নানা পসরা সাজিয়ে অসংখ্য স্থায়ী, অস্থায়ী, ভ্রাম্যমাণ দোকান। বাহারি সব পণ্য, খাদ্য দ্রব্য নিয়ে ঘুরছেন হকাররা।

নানা দোকান, শত শত হকারের মাঝে সবার দৃষ্টি আটকাচ্ছে একটি দোকানে। দোকান বললে অবশ্য ভুলই হবে। একটি কাঠের স্ট্যান্ডের ওপরে রাখা সিলভারের পাত্র, তার ওপরেই থাকা ছোট ছোট প্যাকেটে বিক্রি হচ্ছে বরই, আমড়া, জলপাই। প্রতি প্যাকেটের দাম ১০ টাকা।

কিন্তু চিড়িয়াখানায় আগত দর্শনার্থীদের দৃষ্টি অন্য জায়গায়। বরই, আমড়া, জলপাইয়ের চেয়ে তাদের আগ্রহ এর বিক্রতার দিকে। কারণ বিক্রেতা একজন শিশু। নাম তুহিন, বয়স ৫ বছর। আলাপ হয় ক্ষুদে এই ব্যবসায়ীর সঙ্গে। জানায় চিড়িয়াখানা সংলগ্ন একটি স্কুলে শিশু শ্রেণিতে পড়ে সে।

Tuhin

আলাপকালে তুহিন বলে, ‘দুপুর ২টা থেকে স্কুল থাকে, বাকি সময় চিড়িয়াখানার সামনে এই দোকান চালাই। প্রতিদিন ৪০০/৫০০ টাকা বিক্রি হয়। ওই টাকা আব্বার কাছে দিয়ে দেই। আমি ৩০/৪০ টাকা নিই খাওয়ার জন্য। আমি যখন দোকানে থাকি না তখন আম্মা বসেন। সামনের দিকে আব্বার আরেকটা দোকান আছে। এ রমক আমাদের মোট ৩টা দোকান। একটাতে আমি, অন্য দুইটা আব্বা আর আমার বড় ভাই চালায়। বাণিজ্য মেলা চলছে তাই বড় ভাই সেখানে এসব (বরই, আমড়া, জলপাই) বিক্রি করে। তিন জনের ইনকাম দিয়েই আমাদের সংসার চলে’।

‘আমি পড়া লেখা করছি, বড় হলে অফিসার হবো’জানিয়ে তুহিন বলে, ‘আমি অফিসার হলে আব্বা, বড় ভাই, আমার আর দোকান করা লাগবে না। অফিসার হয়ে আমিই সবাইকে খাওয়াবো, পড়াবো। তখন সুখ-শান্তি থাকবে আমাদের সংসারে’।

Tuhin

ক্ষুদে এই ব্যবসায়ীর সঙ্গে গল্প চলাকালেই দোকানের বেচা বিক্রির খবর নিতে আসেন তুহিনের বাবা রবি মীর। তিনি বলেন, ‘আমি ছোট ছেলেদের দিয়ে দোকান করাতে চাই না। কিন্তু কি করবো? অভাবের সংসার। তাই বাধ্য হয়ে আমার দুই ছেলে ব্যবসায় সময় দেয়। আমার ৩ ছেলে মেয়ের মধ্যে তুহিন সবার ছোট। সে শিশু শ্রেণিতে পড়ে। বয়স ৫ বছর হলেও ব্যবসা সে ভালো বোঝে। কাস্টমাররা তার কাছেই বেশি আসে’।

চিড়িয়াখানা এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স সংলগ্ন বাঁশ পট্টিতে তাদের বাসা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এখানে এ ব্যবসা করি প্রায় ১৫ বছর ধরে। নিজেই দোকান চালাই। অভাবের কারণে ওদের জন্য আরও দুইটা এমন দোকান দিয়েছি, ওরা কিছুটা সময় দেয়। যা আসে সব মিলিয়েই সংসার চলে যায়। আরেক ছেলে একই রমক দোকান নিয়ে বাণিজ্য মেলায় গেছে। ওদের দিয়ে দোকান না করিয়ে পড়াতে চাই, শিক্ষিত বানাতে চাই। কিন্তু অভাব অনটনের কারণে বাধ্য হয়েই তা করাতে হয়’।

এএস/এমএমজেড/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।