চট্টগ্রামে পাহাড় ধস : ৮ বছরে নিহত ২ শতাধিক
বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ও দেওয়াল ধসে চট্টগ্রামে গত ৮ বছরে প্রাণ হারিয়েছে দুইশতাধিক মানুষ। প্রতি বছর পাহাড় ধসে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও তা প্রতিরোধে প্রশাসনের নেই কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা।
২০০৭ সালে পাহাড় ধসের ঘটনার পর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে একটি কমিটি ২৮টি কারণ নির্ধারণ করে ৩৬ টি সুপারিশ প্রণয়ন করে। তবে সুপারিশগুলো আজ পর্যন্ত সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি।
বর্ষা আসলেই দুই সপ্তাহ মাইকিং করে কিছু লোককে সরিয়ে নিয়ে কার্যক্রমের ইতি টানেন কর্তৃপক্ষ।
পাহাড় ধসের ঘটনায় এ পর্যন্ত গঠিত তদন্ত কমিটি গুলোর তদন্ত প্রতিবেদনের কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি।
প্রতিবারই একশ্রেণির পাহাড় খেকোদের কাছে পরাস্ত হন প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা। পাহাড় দখল করে নিরীহ ভূমিহীন মানুষের জীবন নিয়ে রীতিমত খেলায় মত্ত থাকা এসব পাহাড় দস্যুরা রয়ে যায় প্রশাসনের ধরা ছোয়ার বাইরে।
২০০৭ সালের ১১ জুন স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড় ধসে চট্টগ্রামে ১২৭ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ২০০৮ সালের ১৮ আগস্ট লালখানবাজারের মতিঝর্ণা এলাকায় পাহাড় ধসে মারা যান ১১ জন, ২০০৯ ও ২০১০ সালে নগরীর পাহাড়তলী, সিআরবি, ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে মারা যান আরো ১৫ জন।
২০১১ সালের ১ জুলাই পাহাড় ধসে একই পরিবারের ৮ জনসহ বাটালি পাহাড়ের রিটেইনিং দেয়াল ধসে ১৭ জন মারা যান। ২০১২ সালে ১৭ জুন নগরীর ফিরোজ শাহ কলোনিসহ বিভিন্ন এলাকায় ২৩ জন মারা গেছেন। ২০১৩ সালে পাহাড় ও দেয়াল ধসে মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ৫ জনের। সর্বশেষ শনিবার রাতে পাহাড় ধসে লালখান বাজার ও আমিন কলোনীতে মারা যায় ৬ জন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, নগরীর ১১টি পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে ৬৬৬টি পরিবার বসবাস করছে। এর মধ্যে নগরীর একে খান মালিকানাধীন পাহাড়ে ১৮৬ পরিবার, ইস্পাহানি পাহাড়ের দক্ষিণ পাশে হারুন খানের পাহাড় ও বায়তুল আমান সোসাইটির কাছে পাহাড়ে ৫টি, কৈবল্যধাম বিশ্ব কলোনি পাহাড়ে (পানির ট্যাংক) ২৭টি, লেকসিটি আবাসিক এলাকার পাহাড়ে ১২টি, আকবর শাহ আবাসিক এলাকা পাহাড়ে ২২টি, পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে সিটি কর্পোরেশন পাহাড়ে ১১টি, ফয়েজ লেক আবাসিক এলাকার কাছে পাহাড়ে ৯টি, ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট একাডেমির উত্তর পাশে মীর মোহাম্মদ হাসানের মালিকানাধীন পাহাড়ে ৩৮টি, নাসিরাবাদ শিল্প এলাকা সংলগ্ন পাহাড়ে ৩টি, জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটি সংলগ্ন পাহাড়ে ৩৩টি, মতিঝর্ণা ও বাটালি হিল পাহাড়ে ৩২০টি পরিবার ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। এ ১১টি পাহাড় ছাড়াও আরো ১৪টি পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি রয়েছে।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়,চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি পাহাড়গুলোতে প্রভাবশালীদের সহায়তায় নিম্ন আয়ের লোকজন অবৈধভাবে বসতি গড়ে তোলে। প্রতি বছরই চট্টগ্রামে পাহাড় ও মাটি ধসে বিভিন্ন এলাকায় লোকজন মারা যায়।
শনিবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে আমিন কলোনিতে শাহজাহান মিস্ত্রীর ঘরে পাহাড় ধসে পড়লে একই পরিবারের তিন শিশুর প্রাণহানির এ ঘটনা ঘটে।
এর আগে রাত দেড়টার দিকে লালখান বাজারের পোড়া কলোনি এলাকায় দেয়াল ধসে মরিয়ম বেগম (৩০) তার মেয়ে সুরাইয়া (২) এবং একই এলাকার আঁখির (৫) এক শিশুর প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
পাহাড় ধসের ঘটনায় আরাফাত হোসেন ফরিদ (১২), উম্মে সালমা (৫) ও বিবি মরিয়ম (২) নামে ওই তিন ভাই-বোন মাটিচাপায় মারা যায়।
স্থানীয় লোকজন মাটিচাপা পড়া শিশুদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
এসকেডি/এমএস