এক বছরে ১৭৯ নির্মাণ শ্রমিক নিহত
নির্মাণখাতে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ২০১৭ সালে ১৭৯ শ্রমিক নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ৪২ জন। বাংলাদেশ ওকুপেশনাল সেফটি, হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ফাউন্ডেশন (ওশি) প্রকাশিত বার্ষিক সমীক্ষা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ওশির নিজস্ব তথ্য সংগ্রহকারী এবং সংবাদপত্রে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, শ্রমিক হতাহতের দিক থেকে নির্মাণখাতের অবস্থান দ্বিতীয়। ২০১৬ সালেও দেশের নির্মাণখাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক শ্রমিক নিহত হয়। সে বছর নিহত হয় ১৪৭ শ্রমিক। অর্থাৎ গত বছর নির্মাণ শ্রমিক নিহতের সংখ্যা বেড়েছে।
গত দশ বছরে ঝরে গেছে এক হাজার ৫০৯ নির্মাণ শ্রমিকের প্রাণ। অর্থাৎ প্রতিবছর গড়ে ১৫০ নির্মাণ শ্রমিক মারা গেছেন। শ্রমিক হতাহতের প্রধান দুটি কারণ হচ্ছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া এবং উপর থেকে পড়ে যাওয়া। তাছাড়া নির্মাণসামগ্রীর আঘাত, গ্যাস বা ধোয়ায় দমবন্ধ হওয়া এবং আগুনে পুড়ে অনেকে হতাহত হয়েছেন। নির্মাণ শ্রমিকরা পেশাগত নানা স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন শ্বাসকষ্ট, কানে কম শোনা এবং বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগে ভোগেন।
২০১৭ সালে নিহত ১৭৯ জনের মধ্যে ১৭৫ জনই ছিলেন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের নির্মাণ শ্রমিক। ফলে এই বিপুল সংখ্যক অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক শ্রম আইনের আওতায় না থাকায় তাদের পরিবার কোনো ক্ষতিপূরণ পাবে না। তাছাড়া জরিপ অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ১০৩ জন দিনমজুর মারা গেছেন যাদের অধিকাংশই কোনো না কোনোভাবে নির্মাণ সংশ্লিষ্ট কাজে জড়িত ছিলেন। এ সংখ্যা যোগ করলে নির্মাণখাতে নিহতের সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে।
ওশি নির্বাহী পরিচালক এ আর চৌধুরী রিপন বলেন, হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ হচ্ছে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা উপকরণ ব্যবহার না করা। অথচ হেলমেট, হাত মোজা, সুরক্ষা চশমা, সেফটি বেল্ট ব্যবহার করলে অনেক দুর্ঘটনাই কমানো যেত। তাছাড়া নির্মাণাধীন স্থাপনা বা ভবনে প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জামের ব্যবস্থা রাখলে ছোটখাটো দুর্ঘটনা থেকে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি অনেকাংশেই কমানো সম্ভব। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে স্থাপনা নির্মাণকালে সেইফটি সংস্কৃতি বাস্তবায়নে আমরা অনেক পিছিয়ে।
দেশের মোট শ্রমশক্তির ৪ দশমিক ৪ শতাংশ জুড়ে রয়েছে নির্মাণখাতের শ্রমিক। কিন্তু হতাহতের পরিমাণের দিক থেকে নির্মাণ শ্রমিকরা হচ্ছেন ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০১৭ সালে দেশে বিভিন্ন খাতে মোট ১২৪২ শ্রমিক মারা যায়।
এফএইচএস/বিএ