লেকহেড : ঘুষের চুক্তি ছিল সাড়ে ৪ লাখ টাকার

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:৩৬ পিএম, ২৩ জানুয়ারি ২০১৮

ধর্মীয় উগ্রবাদ, উগ্রবাদী সংগঠন সৃষ্টি, জঙ্গি কার্যক্রমে পৃষ্ঠপোষকতাসহ স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ওঠা লেকেহেড গ্রামার স্কুলের মালিকের সাথে সাড়ে ৪ লাখ টাকায় চুক্তি হয়েছিল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) উচ্চমান সহকারী মো. নাসির উদ্দিন ও শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোতালেব হোসেনের।

নানা অভিযোগের মুখে লেকহেড স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর পরিস্থিতি আবার নিজেদের পক্ষে আনতে এ ঘুষের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

মঙ্গলবার সকালে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন।

এ তিনজনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে মামলা হয়েছে। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, মোতালেব ও নাসিরের বিরুদ্ধে লেকহেড স্কুল খুলে দেওয়ার তদবিরে ঘুষ লেনদেন হয়েছে। এছাড়া ঘুষ প্রদানকারী লেকহেড গ্রামার স্কুলের মালিক খালেদ হাসান মতিনের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। গত রোববার (২১ জানুয়ারি) গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের একটি দল রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে এক লাখ ত্রিশ হাজার টাকাসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) উচ্চমান সহকারী মো. নাসিরউদ্দিনকে গ্রেফতার করে। পরে তার সঙ্গে যোগাযোগের সূত্র ধরে শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. মোতালেব হোসেন ও লেকহেড গ্রামার স্কুলের মালিক মো. খালেদ হাসান মতিনকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।

তবে এর আগে শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোতালেব হোসেনকে শনিবার (২০ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৪টায় মোহাম্মদপুরের বসিলা সড়ক থেকে ‘অপহরণ’ করা হয় বলে অভিযোগ করে তার পরিবার। এ বিষয়ে হাজারীবাগ থানায় একটি জিডিও করা হয়।

এছাড়া তারও দুইদিন আগে বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে বনানী থেকে নাসিরউদ্দিনকে ‘অপহরণ’ করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনায়ও রাজধানীর বনানী থানায় আরও একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন নাসিরের শ্বশুর আব্দুল মান্নান।

আবদুল বাতেন বলেন, চুক্তি ৪ লাখ ৩০ হাজার থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকায় হয়েছিল। আসামিরা প্রাথমিকভাবে পুলিশের কাছে এসব স্বীকার করেছে। তাদের আদালতে পাঠিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে।

আসামিদের ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রাখার ব্যাখ্যা
রোববার রাতে আসামিদের গ্রেফতার করা হলেও সোমবার রাত পর্যন্ত তাদের আদালতে তোলা হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুল বাতেন বলেন, আসামি গ্রেফতারের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে তোলার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু রাতে তাদের গ্রেফতারের পর সোমবার সকালে ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়েছে। এসময় নাসিরের কাছ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। ১০০০ টাকার ১৩০ টি নোটের প্রতিটির নম্বর নোট করতে করতে একটু সময় লেগে গেছে। তাই আজ তাদের আদালতে নেয়া হবে।

গ্রেফতারের আগে নিখোঁজ রহস্য
গ্রেফতারের দুইদিন আগে আসামিদের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আবদুল বাতেন বলেন, তারা হয়তো আত্মগোপনে যেতে পারে। আমরা তাদের রোববার রাতে গ্রেফতার করেছি।

ঘুষের মামলা তদন্ত করবে দুদক
নিখোঁজের পর গ্রেফতার শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) মোতালেব হোসেন, মন্ত্রণালয়ের উচ্চমান সহকারী নাসির উদ্দিন এবং লেকহেড গ্রামার স্কুলের মালিক খালেদ হাসান মতিনের বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেনের মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলাটি আজকে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) হস্তান্তর করা হবে। তারাই মামলাটি তদন্ত করবে।

পৃথক মামলা হতে পারে মতিনের বিরুদ্ধে
লেকহেডের মালিক খালেদ মতিনের বিরুদ্ধে আপাতত ঘুষ লেনদেনের মামলা করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কথা শোনা গেছে। যদি তদন্তে তেমন কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় তাহলে পৃথক মামলা দায়ের করা হবে।

এআর/এনএফ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।