নির্বাচন না থাকায় খুলনায় অনুপস্থিত মৌসুমী নেতারা


প্রকাশিত: ১২:০৭ পিএম, ১৬ জুলাই ২০১৫

জাতীয় অথবা স্থানীয় কোনো নির্বাচন নেই সামনে, তাই নেই মনোনয়নের জন্য লবিংগ্রুপিং আর নেতাকর্মীদের তোয়াজ করারও কোনো বিষয় নেই। ফলে খুলনায় এবার মৌসুমী পাখির মতো আসা রাজনৈতিক নেতাদের দেখা মেলেনি। তবে ক্ষমতাসীন দলের এমপি ছাড়া আর কাউকে এলাকায় নেতাকর্মীদের জন্য কিছু করতে দেখা যায়নি। ফলে রাস্তাঘাটেও দেখা যাচ্ছে না ঈদ শুভেচ্ছার ফেস্টুন ও বিলবোর্ড।

অথচ নির্বাচনী বছরের ঈদগুলোতে উঠতি নেতাদের দাপট ছিল খুলনার সর্বত্র। সে সময় ঈদ শুভেচ্ছার ব্যানার-ফেস্টুন এবং বিলবোর্ডে নগরীর মহাসড়কগুলো যেন ছবির অ্যালবাম হয়ে যেতো।

এসব নেতাদের অর্থ আর দাপটের কাছে ত্যাগী নেতারা হয়ে পড়তেন কোণঠাসা। সামনে কোনো নির্বাচন না থাকায় এবছর তাদের আনাগোনা একেবারেই নেই। বেশিরভাগ মৌসুমী নেতাই এবার খুলনায় ঈদ করতে আসেননি। তবে দলগুলোর স্থানীয় নেতারা প্রতিবারের মতো নিজ বাসায় নেতাকর্মীদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেছেন। সারাদিনই তারা লোকজনের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে সময় কাটাবেন বলে জানিয়েছেন।

দলগুলোর জ্যেষ্ঠ নেতারা জানান, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সর্বত্র অনিশ্চয়তা চলছে। কবে নির্বাচন হবে এই নিয়ে সংশয়ে সবাই। নির্বাচন না থাকায় তৃণমূলের রাজনীতি উৎসবহীন হয়ে পড়েছে। মনোনয়ন প্রত্যাশী মৌসুমী নেতারা এলাকায় না আসায় ঈদে রাজনীতিবিদদের তৎপরতা দৃশ্যমান হচ্ছে না। এখন স্থানীয় নেতারা নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে যার যার মতো করে ঈদ পালন করছেন।

নেতাকর্মীরা জানান, বিগত নির্বাচনগুলোয় খুলনা-১ আসনের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা এবারো নিজ এলাকায় অবস্থান করছেন। এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছিলেন পার্টির চেয়ারম্যানের প্রেস সচিব সুনীল শুভ রায়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর তিনি খুব একটা এলাকায় আসেননি। এবার ঈদেও তিনি খুলনায় আসেননি। খোঁজ নেননি নেতাকর্মীদের।

খুলনা-২ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই প্রার্থীই এলাকায় আছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান এমপি ও নগর বিএনপি সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু খোঁজখবর নিচ্ছেন নেতাকর্মীদের। তবে ঈদে খুলনায় আসেননি এই আসনের সাবেক সাংসদ ও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী আলী আজগার লবী। রমজানেও তার দেখা মেলেনি। বর্তমানে তিনি সৌদি আরবে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।

খুলনা-৩ আসনে মৌসুমী নেতাদের তৎপরতা ছিল সবচেয়ে বেশি। কিন্তু কর্মীদের দুঃসময়ে তাদের কাউকেই এলাকায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বেশিরভাগ নেতাই গত দুই বছর ধরে খুলনায় আসেননি।

কর্মীরা জানান, এই আসনে বিএনপির হয়ে প্রার্থী হতে তৎপরতা চালিয়েছেন ৬ জন নেতা। এর মধ্যে ঈদে খুলনায় আসেননি স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা জাহিদ হোসেন অমল। একই অবস্থা গুলশান অফিস কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম বকুলের। ২০১৪ সালের পর থেকে তাকে আর খুলনায় পাওয়া যায়নি। আন্দোলন বা কোনো বিপদে কর্মীরা তাদের পাশে পাননি। এই আসনের সাবেক সাংসদ সেকেন্দার আলী ডালিম এলাকায় থাকলেও নিষ্ক্রিয়। কর্মীদের বিপদে তাকে কেউ পাশে পায় না বলে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। এলাকায় থাকার মধ্যে থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এম আরিফুল ইসলাম মিঠু ও অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম রয়েছেন। প্রতিবছরের মতো এবারো এলাকার দুঃস্থদের মাঝে শাড়ি ও খাবার বিতরণ করেছেন আরিফুল ইসলাম মিঠু। অসহায় কর্মীদের মাঝেও অর্থ সাহায্য করেছেন বলে জানা গেছে।

এই আসনের সাংসদ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এলাকায় আছেন। পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধের ব্যাপারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

খুলনা-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী দুই নেতার কেউই ঈদে এলাকায় আসেননি। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শরীফ শাহ কামাল তাজ ও ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি আজিজুর বারী হেলালের অনুসারীরা। এই আসনের সাংসদ বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছেন।

খুলনা-৫ ও ৬ আসনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় দুই সাংসদ এলাকায় আছেন। এর মধ্যে খুলনা-৫ আসনের সাংসদ ও মৎস্য প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ছুটি পেলেই খুলনায় ছুটে আসছেন। নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। বিগত নির্বাচনে আসন দুটি জামায়াতকে ছেড়ে দেয়ায় এখানে অন্য প্রার্থীদের তৎপরতা কম। জামায়াতের পক্ষ থেকে এলাকায় ঈদ বস্ত্র বিতরণ, দুঃস্থদের মাঝে খাবার সামগ্রী বিতরণ করছেন বলে জানা গেছে।

এমজেড/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।