‘ক্ষুধার জ্বালা আর সইতে পারছি না’
‘দীর্ঘ ৩৫ বছর থেকে বিনা বেতনে শিক্ষাকতা করছি। এ পেশায় অর্থহারে-অনাহারে বেঁচে আছি। ক্ষুধার জ্বালা আর সইতে পারছি না। গত আটদিন ধরে না খেয়ে খোলা আকাশের নিচে অনশন করছি।’ গত আটদিন ধরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আমরণ অনশনে থাকা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকরা এভাবেই বলছিলেন।
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শিক্ষকরা এ আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। শীতের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে কাগজ দিয়ে বিছানা বানিয়ে দিন-রাত কাটাচ্ছেন তারা। দাবি একটাই, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসাকে জাতীয়করণ করতে হবে। শিক্ষকদের প্রতি মাসের বেতন নিশ্চিত করতে হবে।
দাবি আদায়ের এ আন্দোলনে এখন পর্যন্ত ১৮৬ জন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তার মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। ১৮ জনের শরীরে স্যালাইন দেয়া হচ্ছে। তবে তারা বলছেন, দাবি আদায় না হলে আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়াবেন না।
অন্দোলনে অংশ নিয়েছেন ভোলার পশ্চিম বড় টেংরা স্বতন্ত্র ইবতোদায়ি মাদরাসার শিক্ষক মো. খলিলুর রহমান। জানান, তিনি ৩৫ বছর ধরে বিনা বেতনে শিক্ষাকতা করে আসছেন। তার প্রতিষ্ঠানে প্রথম পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। খেয়ে না খেয়ে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষিত করার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
জাগো নিউজকে খলিলুর রহমান বলেন, বর্তমানে আমার বয়স ৬৫ চলছে। পরিবারে আমার দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। স্বামী-স্ত্রী মিলে আমরা পাঁচ সদস্য। ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার খরচ দিতে পারি না। অনেক কষ্টে চলে তাদের পড়ালেখা। বউ (স্ত্রী) অনেকদিন ধরে অসুস্থ। তার চিকিৎসা করতে পারছি না। প্রতিবেশী আর আত্মীয়দের কাছে হাত পেতে সংসার চালাতে হয়।
কান্না জড়িত কণ্ঠে এ শিক্ষক বলেন, মাদরাসার জমিটা আমার মৃত বাবার দান করা, তাই সেটি ছেড়ে আসতে পারি নাই। খেয়ে না খেয়েই সেটিকে চালিয়ে যাচ্ছি। এভাবে আর বাঁচতে চাই না। এমনিতেই তো অর্ধমৃত হয়ে আছি। তাই বাঁচার মতো বাঁচার আশায় শীতের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে অনশন করছি।
দাবি আদায়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, মা জননী (শেখ হাসিনা) ক্ষুধার জ্বালা আর সইতে পারছি না। মাদরাসা শিক্ষকদের দিকে একটু মুখ তুলে তাকান।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতি দিনের মতো আজও (মঙ্গলবার) সকাল থেকেই মাদুর-কাগজ বিছিয়ে শিক্ষকরা আমরণ অনশন পালন করছেন। ‘বেতন দেন নাইলে বিষ দেন’, ‘মা জননী শেখ হাসিনা ক্ষুধার জালায় বাঁচি না’, ‘আর কতদিন কাঁদবো বেতনের জন্য’, ‘প্রাইমারি জাতীয়করণ আমরা কেন হব না’, ‘মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী আর কতদিন’, ‘একদফা একদাবি জাতীয়করণ চাই’ -এমন নানা স্লোগানে তৈরি ফেস্টুন, মাথায় ব্যাচ পরে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত প্রায় সহাস্রাধিক স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকরা এ আন্দোলন যোগ দিয়েছেন।
বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি আলহাজ ক্বারী রুহুল আমিন চৌধুরী বলেন, মাদরাসা শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। বাধ্য হয়ে ঘর-সংসার ছেড়ে টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বাড়ালেও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকদের বেতন-ভাতাদি না বাড়িয়ে বঞ্চিত করছে। অথচ আমরা প্রাথমিকের মতোই বিশাল জনগোষ্ঠির সন্তানদের পাঠদান দিয়ে আসছি। আটদিন ধরে আমাদের অবস্থান ধর্মঘট চলার পরও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া না পাওয়ায় অনির্দিষ্টকালের অমরণ অনশনমত কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছি। আশা করি সরকার আমাদের বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন।
এমএইচএম/আরএস/পিআর