চাহিদার অধিক বিদ্যুৎ পেয়েও সংকটে রাঙ্গামাটিবাসী
রাঙ্গামাটিতে বিদ্যুৎ বিতরণ নিয়ে উপেক্ষিত হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ। ফলে চাহিদার অধিক বিদ্যুৎ পেয়েও সংকটে রাঙ্গামাটিবাসী। প্রায় সময় থাকতে হচ্ছে বিদ্যুৎবিহীন। বিভাগীয় কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নানা অনিয়ম-দুর্নীতিসহ দায়িত্বে চরম অবহেলার কারণে বিদ্যুতের এমন দুর্দশা ভোগ করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় জনগণ ও বিভিন্ন মহল।
তারা অভিযোগ করে বলেন, পবিত্র মাহে রমজান মাসেও চরম বিদ্যুৎ সংকটে নাকাল রাঙ্গামাটিবাসী। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে গেছে, যা একেবারে অসহনীয়। সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ লোডশেডিং, লো-ভোল্টেজ ও বিভ্রাটসহ নানা ত্রুটি এবং কারণে অকারণে বিদ্যুতের-মেরামত কাজ করায় ঘন ঘন বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এতে তীব্র অতিষ্ঠ শহরের লোকজন।
উল্লেখ্য, ১৯৬০ সালে কাপ্তাইয়ে বাঁধ দিয়ে নির্মিত হয় দেশের প্রধান বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। এটি নির্মাণের ফলে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার প্রায় ৫৪ হাজার একর চাষযোগ্য জমি পানিতে তলিয়ে যায়। উদ্বাস্তু হন লক্ষাধিক পরিবারের মানুষ। কিন্তু জেলাবাসীর এতটা ক্ষতিসাধিত হয়ে এ জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি নির্মিত হলেও শুরু থেকে ২৩০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কেন্দ্রের উৎপাদিত সব বিদ্যুৎ নিয়ে যাওয়া হয় জাতীয় গ্রিডে। আর রাঙ্গামাটির স্থানীয় জনগণকে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ বিতরণের শর্তে কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হলেও এর আগে রাঙ্গামাটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়া হতো সর্বোচ্চ পাঁচ মেগাওয়াট। ফলে বিদ্যুৎ সংকটে চরম ভোগান্তির শিকার হতেন রাঙ্গামাটি জেলাবাসী। এ অবস্থায় রাঙ্গামাটিবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের দিকে চাহিদা অনুযায়ী রাঙ্গামাটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রাঙ্গামাটিবাসীর বিদ্যুতের পূর্ণচাহিদা সর্বোচ্চ ৯ মেগাওয়াট। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রাঙ্গামাটিতে সরবরাহ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজনের যোগসাজশে বিদ্যুৎ চুরি যাওয়াসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও দায়িত্বে চরম অবহেলার কারণে চাহিদার অধিক বিদ্যুৎ পেয়েও অন্ধকারে থাকতে হচ্ছে রাঙ্গামাটিবাসীকে। এছাড়া কারণে অকারণে সংযোগ লাইনের মেরামত ও সংস্কার কাজসহ ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে প্রায় সময় অন্ধকারে ডুবে থাকছে রাঙ্গামাটি শহর এলাকা। পবিত্র রমজান মাসসহ ঈদুল ফিতর উৎসবের আগে এবং পরে শহরে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নির্দেশ দিলেও বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বই দিচ্ছে না বিদ্যুৎ বিভাগ। সার্বক্ষণিক লেগেই রয়েছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট।
এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রতন কুমার পাল জাগো নিউজকে জানান, যান্ত্রিক ত্রুটিসহ হাটহাজারী সংযোগ লাইনের ট্রান্সফরমারে ত্রুটি দেখা দেয়ায় লোড নিতে সমস্যা হচ্ছে। তাই বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যহত হচ্ছে। ফলে চাহিদা অনুসারে রাঙ্গামাটি শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে হঠাৎ ফল্ট দেখা দেয়। পাশাপাশি কোথাও সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে সেগুলোর সংস্কার তো রয়েছেই। যান্ত্রিক ত্রুটি দূর করা না গেলে নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে পরিস্থিতির উত্তরণ সম্ভব হবে না।
এদিকে রাঙ্গামাটি শহরে অসহনীয় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে প্রায় সময় অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকছে শহর এলাকা। এতে অতিষ্ঠ শহরবাসী। সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্য মতে, একদিকে যেমন কাপ্তাই হ্রদের পানি কমায় বিদ্যুৎ উৎপাদন সংকট চরমে পাশাপাশি ঘন ঘন লোডশেডিং ও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে শহরে বিরামহীন বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার মধ্যেই লেগে থাকে। এছাড়া রয়েছে অসহনীয় লো-ভল্টেজ। রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ বিতরণ নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। এমন পরিস্থিতিতে শহরবাসীর নাভিশ্বাস উঠেছে। শহরে সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত স্বাভাবিক জনজীবন।
অন্যদিকে, চলতি বর্ষা মৌসুমে টানা বৃষ্টিতে কাপ্তাই হ্রদের পানি বাড়ায় কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন বেড়েছে বলে জানিয়েছে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষ জানায়, এর আগে হ্রদে পানির অভাবে কেন্দ্রের ২৩০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ৫ ইউনিটের মধ্যে দুইটি চালু করে পিক-আওয়ারে ৬৬ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হয়েছিল। বর্তমানে আরও দুটি ইউনিট চালু করে উৎপাদন স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে এসেছে।
কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, লেকে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনও বেড়েছে। কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি শতভাগ নির্ভরশীল পানির উপর। লেকে প্রয়োজন মতো পানি থাকলে কেন্দ্রে স্বাভাবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হয়। অব্যাহত বৃষ্টিপাতে লেকের পানির স্তর প্রায় ৫ ফুট উচ্চতা বেড়েছে। এ অবস্থা বজায় থাকলে অচিরেই কেন্দ্রের সবগুলো ইউনিট চালু করে পূর্ণমাত্রায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে।
সুশীল প্রসাদ চাকমা/এমজেড/আরআই