জুমার নামাজ আদায়ে তুরাগ তীরে লাখো মুসল্লি
ধর্মপ্রাণ লাখো মুসল্লির এবাদত বন্দেগিতে মুখর হয়ে উঠেছে টঙ্গীর তুরাগ তীর। শুক্রবার ফজর নামাজের পর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া ৫৩তম ইজতেমার প্রথম পর্বে এখন চলছে জুমার নামাজের প্রস্তুতি। লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে এখানে আদায় করা হবে পবিত্র জুমার নামাজ। আস্তে আস্তে ভীড় বাড়ছে তুরাগ তীরে।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর উত্তরা, গাজীপুর ও টঙ্গিসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মুসল্লিরা আসছেন ইজতেমা ময়দানে। সওয়াব হাসিল ও বৃহৎ জামায়াতে জুমার নামাজ আদায়ই উদ্দেশ্য মুসল্লিদের।
বাদ ফজর জর্দানের মাওলানা সৈয়দ ওমর খতিবের আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ইজতেমার প্রথম পর্বের আনুষ্ঠানিকতা।
বয়ানে তিনি বলেন, যতদিন দ্বীন থাকবে, তত দিন দুনিয়া থাকবে। আর দ্বীন টিকে থাকবে দাওয়াতের মাধ্যমে। যুগে যুগে নবী-রাসুলগণ দ্বীনের দাওয়াতের কাজ করে গেছেন। নবী-রাসুলদের আল্লাহ নিজের পরিবার ও বিভিন্ন গোত্রের মানুষের কাছে দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার জন্য পাঠিয়েছেন।
মাওলানা সৈয়দ ওমর বলেন, নবীজীকে আল্লাহ সারা দুনিয়ায় দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার জন্য পাঠিয়েছিলেন। তার অবর্তমানে দাওয়াতি কাজের দায়িত্ব উম্মতের উপর।
বয়ানে আরও বলা হয়, মহান আল্লাহ তার রসুলদের যেমন মর্যাদা দিয়েছেন তেমনই উম্মতদেরও তাদের রসুলের কথার মর্যাদা দিতে হবে। ইহকালীন জিন্দিগী আমাদেরকে যেন ধোঁকায় না ফেলে। কারণ আমরা ইচ্ছা করলেই বার্ধক্যকে ফেরাতে পারবো না। মৃত্যুর স্বাদ আমাদেরকে গ্রহণ করতেই হবে।
জুম্মা নামাজের পর বয়ান করবেন বাংলাদেশের মাওলানা মোহাম্মদ হোসেন, বাদ আছর বয়ান করবেন বাংলাদেশের মাওলানা আব্দুল বারী ও বাদ মাগরিব বয়ান করবেন বাংলাদেশের মাওলান মোহাম্মদ রবিউর হক।
৫৩তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আজ প্রথম দিন। উত্তরের হিমেল হাওয়া আর কনকনে শীত উপেক্ষা করে লাখো মুসল্লি বয়ান, তাশকিল, তাসবিহ-তাহলিলে কাটাচ্ছেন। তবে তীব্র শীতের কারণে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মুসল্লিদের প্যান্ডেলের বাইরে যেতে দেখা যায়নি।
লালবাগ এলাকা থেকে আসা মুসল্লি রজমান আলী ৭ বছরের ছেলেকে নিয়ে এসেছেন ইজতেমা ময়দানে। জুমার নামাজ আদায়ের পর ছেলেকে নিয়ে ইজতেমায় অবস্থান করবেন তিনি।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ঈমান আখলাকের শিক্ষার জন্য পরিবারের বাইরে এমন বৃহৎ পরিসরে শিক্ষা জরুরি। ইজতেমায় তিনি ছেলেকে নিয়ে ঈমান, দ্বীন, ইলম, আকীদার শিক্ষা নেবেন।
শুক্রবার দুপুরে গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ জাগো নিউজকে বলেন, বিদেশি মুসল্লিদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সিসি ক্যামেরায় বিশিদের জন্য ৪টি খিত্তা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। কোনো ধরণের টোকাই, হকারদের ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।
তিনি বলেন, আজ জুমাবার। যে কারণে তুলনামূলকভাবে ভিড় বেশি। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মুসল্লিদের অনেকে মূল প্যান্ডেলের নিচে বসেই জুমার নামাজ আদায় করার সুযোগ পাবেন। সে ধরণের যথেষ্ট ব্যবস্থা এবার রয়েছে। মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে অতিরিক্ত এসপি’র তত্ত্বাবধানে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা মনিটরিং করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, দিল্লির মারকাজের মাওলানা সাদকে কেন্দ্র করে চলমান দ্বন্দ্ব ইজতেমায় কোনো প্রভাব ফেলবে না।
প্রথম পর্বে রাজধানী ঢাকাসহ ১৪ জেলার মুসল্লি ইজেতেমায় অংশ নিচ্ছেন। সকাল থেকেই সড়ক পথ, রেলপথ ও নৌপথসহ সব পথেই টঙ্গীর তুরাগ তীরে ঢল নামে মুসুল্লিদের। যদিও বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই আসতে শুরু করে মুসল্লিরা। গাজীপুরসহ আশপাশের অঞ্চলগুলো থেকে থেকে বিপুল সংখ্যক মুসল্লি জুমার নামাজ আদায় করতে ইজতেমা ময়দানে আসছেন।
এবারে প্রথম দফায় বিভিন্ন জেলার মুসল্লিদের জন্য পুরো ময়দানকে ২৭টি খিত্তায় (ভাগে) ভাগ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট খিত্তায় নির্দিষ্ট জেলার মুসল্লির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে প্রথম ধাপে অংশগ্রহণ করেছেন ঢাকার একাংশসহ নারায়ণগঞ্জ, শেরপুর, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, গাইবান্ধা, লক্ষীপুর, সিলেট,চট্টগ্রাম, নড়াইল, মাদারীপুর, ভোলা, মাগুরা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠিী, পঞ্চগড়, নেত্রকোনা, নরসিংদী এবং বগুড়া জেলার বাসিন্দরা। প্রতিটি জেলার জন্য রয়েছে নির্ধারিত স্থান। প্রত্যেকেই স্ব-স্ব খিত্তায় অবস্থান নেবেন।
এ বছর ১৬০ একর এলাকা জুড়ে তৈরি করা হয়েছে বিশাল প্যান্ডেল। বিদেশি মেহমানদের জন্য তৈরি করা হয়েছে ৪ কামরা বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক নিবাস।
এবারের ইজতেমা ময়দানের রয়েছে ১৭টি প্রবেশ পথ। ইজতেমা ময়দানের চারদিকে ১৫টি সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়েছে। মাঠ জুড়ে রয়েছে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশের কড়া নজরদারি।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনসহ ৫৪ ফ্রি মেডিকেল বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবার জন্য ক্যাম্প খুলেছে।
জেইউ/আমিনুল/এমবিআর/এমএস