ফোরকান মল্লিকের ফাঁসির আদেশ


প্রকাশিত: ০৪:৫৭ এএম, ১৬ জুলাই ২০১৫

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক পটুয়াখালীর ফোরকান মল্লিককে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল-২। বৃহস্পতিবার সকালে বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ রায় ঘোষণা করেন। অপর সদস্যরা হলেন- বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, ফোরকান মল্লিক বড় মাপের রাজাকার না হলেও তিনি যে ধরণের অপরাধ সংগঠন করেছেন তার নৃশংসতা অনেক। তাই তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলো।

ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে আনীত ৫টি অভিযোগের মধ্যে ৩ ও ৫ নম্বর অভিযোগে ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং ৪ নম্বর অভিযোগে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। অপরদিকে ১ ও ২ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।

মোট ৯৯ পৃষ্টা রায়ের মূল অংশ পাঠ করেন- চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহিন। সকাল ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে রায় পাঠ শুরু করেন এবং ১০টা ৫৫ মিনিটের দিকে রায় পাঠ শেষ করেন তিনি।

রায় পড়ার সময় আদালতে প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোখলেসুর রহমান বাদল, সুলতান মাহমুদ সীমন, সাবিনা ইয়ামিন খান মুন্নী। অপরদিকে ফোরকান মল্লিকের পক্ষে অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম খান উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া ফোরকান মল্লিকের স্ত্রী জোবেদা বেগম ও তার বড় ছেলে জহির মল্লিক ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সকাল ৯টার দিকে ফোরকান মল্লিককে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। গত ১৪ জুন ফোরকান মল্লিকের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যুক্তিতর্ক শেষে যেকোন দিন রায় (সিএভি) ঘোষণার জন্য রাখা হয়।

মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত ২১ আসামির বিরুদ্ধে রায় হয়েছে। ফোরকান মল্লিকের রায় নিয়ে ট্রাইব্যুনালের ২০ তম ও ট্রাইব্যুনাল-২ এর ১১ তম রায় ঘোষণা করা হলো।

প্রসিকিউটর মোখলেছুর রহমান বাদল জাগো নিউজকে বলেন, আসামি ফোরকানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ৫টি অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল। তার বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ প্রমাণ পেয়েছেন, তাই এর মধ্যে ৩ এবং ৫ নম্বর অভিযোগ দুটিতে মৃত্যুদণ্ড এবং ৪ নম্বর অভিযোগে আমৃত্যু করাদণ্ড দিয়েছেন।

সাক্ষ্য ও তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া সন্তুষ্ট প্রকাশ করেন প্রসিকিউটর মোখলেছুর রহমান বাদল।
 
ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে গত বছর ১৮ ডিসেম্বর এ অভিযোগ গঠন করা হয়। ফোরকান মল্লিক হত্যা-গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্মান্তরকরণ ও দেশান্তরকরণের মত ৫টি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ৫টি অভিযোগের মধ্যে রয়েছে ৮ জনকে হত্যা ও গণহত্যা, ৪ জনকে ধর্ষণ, ৩ জনকে ধর্মান্তরকরণ, ১৩টি পরিবারকে দেশান্তরকরণ, ৬৪টি বসতঘর ও দোকানপাটে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়।

ফোরকানের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের পক্ষে ১৪ জন সাক্ষ্য দেন। অন্যদিকে গত ২৬ এপ্রিল থেকে ১৭ মে পর্যন্ত ফোরকান মল্লিকের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন চারজন সাফাই সাক্ষী। তারা হলেন- ইসহাক আলী খান, মৃদুল চন্দ্র সেন মধু, গোবিন্দ কুন্ডু।
 
মামলায় ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে গতবছর ২ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল এবং আসামির বিরুদ্ধে গত ১৭ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করে প্রসিকিউশন।

গত ৩ জুলাই মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার ফোরকান মল্লিককে আটক রাখার আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। গত ২৫ জুন ফোরকান মল্লিককে বরিশাল বাসস্ট্যান্ড থেকে আটক করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা।

আপিল করার সামর্থ্য নেই ফোরকান মল্লিকের
 
এফএইচ/আরএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।