দাপুটে জয়ে টানা চতুর্থ সিরিজ বাংলাদেশের
দাপুটে জয় দিয়ে টানা চতুর্থ সিরিজ জিতে নিল বাংলাদেশের সোনার ছেলেরা। সিরিজের শেষ ম্যাচে প্রোটিয়াদের ৯ উইকেটে হারিয়েছে টাইগাররা। শুরুতে বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং, এরপর সৌম্যর ঝড়ো ব্যাটিংয়ের সাথে তামিমের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে সহজ জয় পায় বাংলাদেশ।
বুধবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ডার্ক ওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে ১৭০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান আস্থার সাথে খেলে পুরো ম্যাচে প্রোটিয়াদের কোন সুযোগ দেননি। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলতে থাকেন এই দুই ব্যাটসম্যান। প্রোটিয়ারা একমাত্র সফলতা পায় সৌম্যকে আউট করে। কিন্তু ততক্ষণে মঞ্চের শেষ দৃশ্য লেখা হয়ে যায়।
ইনিংসের মাঝামাঝি সময়ে তামিম ধিরস্থির ভাবে খেললেও অপর প্রান্তে সৌম্য স্বভাবসুলভ আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে যান। এই দুই ব্যাটসম্যান উদ্বোধনী জুটিতে করেন ১৫৪ রান। ইমরান তাহিরের বলে শর্ট কাভারে প্রোটিয়া অধিনায়ক হাশিম আমলার হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন সৌম্য। তবে আউট হওয়ার আগে মাত্র ৭৫ বলে ৯০ রানের দানবীয় ইনিংস খেলেন তরুণ তুর্কি সৌম্য সরকার। ১৩টি চার এবং একটি ছক্কার সাহায্যে সাজান তিনি তার ইনিংস। তবে অপর প্রান্তে শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করে বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়ে মাঠ ছাড়েন তামিম ইকবাল। সৌম্যর বিদায়ের পর লিটনকে সাথে নিয়ে বাকি কাজটুকু সারেন তিনি। ৭৭ বলে ৭টি চারে অপরাজিত ৬১ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেলেন এই ওপেনার।
এর আগে নিয়ন্ত্রিত বোলিং এবং দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১৬৮ রানে আটকে রাখতে সমর্থ হয়েছে বাংলাদেশ দল। আর ডার্ক ওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে বাংলাদেশের টার্গেট হয় ১৭০ রান।
শেষ ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা দলের অধিনায়ক হাশিম আমলা। খেলার শুরু থেকেই বাংলাদেশ বোলারদের তোপে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশেষ করে স্পিনাররা দুর্দান্ত বল করেন।
তবে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম আঘাত হানেন পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। কুইন্টন ডি কককে সরাসরি বোল্ড করে সাজঘরে ফেরান টাইগার এই বোলার। একই ওভারের শেষ বলে আমলাকেও পরাস্ত করে জোরালো আবেদন করেন। টিভি রিপ্লেতে দেখা গেছে বল উইকেটরক্ষক মুশফিকের হাতে যাবার আগে ব্যাটের কানা ছুঁয়ে যায়। তবে আম্পায়ার মাইকেল গফ নিশ্চুপ থাকেন।
এরপর দৃশ্যে আসেন টাইগার স্পিনাররা। সাকিবের দুর্দান্ত বোলিংয়ে চাপে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। ফর্মে থাকা ডু প্লেসি এবং অধিনায়ক হাশিম আমলাকে ফেরান তিনি। সপ্তম ওভারের প্রথম বলে ডু প্লেসিকেও মুশফিকের ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে ফেরান সাকিব। সুইপ করতে গেলে টাইমিং মিস করেন ডু প্লেসি। উইকেটের পাশেই বল সোজা উপরে উঠে যায়। সেই বল গ্লাভস বন্দী করতে ভুল করেননি উইকেট রক্ষক মুশফিকুর রহিম। সাকিবের করা ১৪তম ওভারের তৃতীয় বলে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন প্রোটিয়া অধিনায়ক হাশিম আমলা। ১৬তম ওভারে এবং মাহমুদউল্লাহর করা প্রথম ওভারের প্রথম বলেই মুশফিকুর রহিমের টানা তৃতীয় ক্যাচে পরিণত হয়ে সাজঘরে ফেরেন রিইলে রুশো।
২৩ ওভার খেলা শেষে বৃষ্টি নামে। বৃষ্টির কারণে ডার্ক ওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে খেলা কমিয়ে ৪০ ওভারে কমিয়ে আনা হয়। বৃষ্টির পর বাংলাদেশকে উল্লাসে ভাসান অধিনায়ক মাশরাফি। গালিতে সাব্বির রহমান দুর্দান্ত ক্যাচ তালুবন্দি করে ফেরান ডেভিড মিলারকে। ৫১ বলে ৫টি চারে ৪৪ রান করেন মিলার। হাশিম আমলার অপেক্ষাকৃত সহজ ক্যাচ ছাড়লেও পর পর দুটি দুর্দান্ত ক্যাচ নেন দেশসেরা ফিল্ডার সাব্বির রহমান। সাকিবের করা ৩৬তম ওভারের প্রথম বলে বেহারদেইনের ক্যাচ বাউন্ডারি লাইন থেকে শূন্যে ভেসে দুর্দান্ত ক্যাচ ধরেন সাব্বির।
৩৭তম ওভারে মুস্তাফিজুরের অফকাটারে কাটা যান কাগিসো রাবাদা। বোল্ড হয়ে ফিরে যান অভিষেকে বিশ্বরেকর্ড করা বোলার রাবাদা। এরপর ৪০ তম ওভারে কাইল অ্যাবটকে বোল্ড করেন রুবেল হোসেন। একই ওভারে ইনিংসের শেষ বলে জেপি ডুমিনিকে লিটন দাসের ক্যাচে পরিণত করেন রুবেল। তবে আউট হওয়ার আগে দায়িত্বশীল ব্যাট করে ক্যারিয়ারের ২১তম অর্ধশত তুলে নেন জেপি ডুমিনি। ৭০ বলে ৩টি চারে ৫১ রান করেন এই প্রোটিয়া অলরাউন্ডার।
বাংলাদেশের পক্ষে সাকিব আল হাসান ৩৩ রানে তিনটি উইকেট পান। এছাড়া মুস্তাফিজুর রহমান এবং রুবেল হোসেন দুটি উইকেট নেন।
আরটি/আরআই/এসএইচএস