নড়াইলে ডাকাত আতঙ্কে এলাকাবাসী
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় গ্রামে গ্রামে ডাকাত আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে গ্রাম পাহারা দিচ্ছেন অাতঙ্কিত মানুষ। অচেনা কাউকে দেখলেই চলছে জেরা ও তল্লাশি। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশও তৎপর হয়ে উঠেছে। বেড়েছে টহল ও নজরদারি।
জানা গেছে, প্রায় ১৫ দিন আগ থেকে উপজেলার উত্তর এলাকার মানুষের মাঝে ডাকাত আতঙ্ক শুরু হয়। লোকমুখে গ্রামে গ্রামে খবর রটে বিভিন্ন গ্রামে ডাকাতি শুরু হয়েছে। ডাকাতরা গ্রামের নারীদেরও ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এ গ্রামে যে কোনো সময় ডাকাতরা হানা দিবে এ ধরনের খবরের ভিত্তিতে এসব গ্রামের লোকজন পাহারা শুরু করে।
উপজেলায় সব চেয়ে উত্তেজনা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর। এ দিন রাত ৮টার দিকে লোহাগড়া ইউনিয়নের কালনা গ্রামে ইলিয়াছ খানের মা নেহারুন্নেছা বসেছিলেন জানালার পাশে। হঠাৎ ঘরের বাইরে থেকে হাত বাড়িয়ে তার চুলের মুঠি ও হাত ধরে এক যুবক টান দেয়। চিৎকার দিলে তিন যুবককে পালিয়ে যেতে দেখেছেন বাড়ির অন্যরা। তার মেয়ে লাভলী জাগো নিউজকে বলেন, অল্প বয়সী মেয়ে মনে করে বখাটেরা হয়তো এ কাজ করেছে।
কালনার এ ঘটনায় উপজেলা সদরসহ উপজেলায় গুজব রটে কালনায় ডাকাতি হয়েছে এবং এক নরীকে ধরে নিয়ে গেছে। এর পর পরই খবর হয় পাশের গ্রাম চরকরফাতে ডাকাতরা হানা দিয়েছে। এরপর পুরো লোহাগড়া ইউনিয়নের সব গ্রামের মানুষ লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে।
রাত ১২টায় খবর রটে উপজেলা সদরের দক্ষিণের মঙ্গলহাটা গ্রামে ডাকাতরা হানা দিয়ে পিছু হটেছে। পরে উপজেলা সদরের লক্ষ্মীপাশার দিকে গেছে। এরপর খবর রটে উপজেলার ১০ কিলোমিটার উত্তরে রামকান্তপুর গ্রামে দুই বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। এভাবে একে একে পুরো উপজেলায় গ্রামে গ্রামে ডাকাত ঢোকার খবর রটে। সব গ্রামে শুরু হয় সশন্ত্র পাহারা।
তবে সরেজমিনে উপজেলার কোনো বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে এমন তথ্য কেউ দিতে পারেনি। রামকান্তপুর গ্রামের রহমান শিকদার জাগো নিউজকে জানান, ডাকাতি হয়নি। কালো মাইক্রোবাস নিয়ে ডাকাতরা এসে চলে গেছে। গাড়িটি কে দেখেছে, সে তথ্যও কেউ দিতে পারেনি।
বিভিন্ন গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রত্যেকে আশপাশের গ্রামে ডাকাতির কথা শুনেছেন। তবে ডাকাতি হয়েছে এমন কোনো বাড়ির ঠিকানা দিতে পারেনি কেউ।
লোহাগড়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আছাদুজ্জামান কদর জাগো নিউজকে বলেন, ডাকাত আতঙ্কে বাজারে পাহারা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশও তৎপর হয়ে উঠেছে।
লোহাগড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ লুৎফর রহমান জাগো নিউজকে জানান, কার বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে এমন সুনির্দিষ্ট তথ্য মেলেনি। গুজব রটে জনমনে ডাকাত আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে ভালো হয়েছে যে গ্রামের লোকজন রাতে পাহারা দিচ্ছেন।
পুলিশ সুপার সরদার রকিবুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, গুজব হোক আর সত্যি হোক আমরা অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করে অতিরিক্ত পাহারার ব্যবস্থা করেছি। তাছাড়া সামনে পবিত্র ঈদ-উল- ফিতর, যে কোনো সময় যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, সেক্ষেত্রে গ্রামবাসীর পাশাপাশি পুলিশ সতর্ক থাকলে ডাকাতি বা অন্য কোন দুর্ঘটনা ঘটবে না।
হাফিজুল নিলু/এসএস/এমএস