শপথ নিলেন তিন মন্ত্রী, এক প্রতিমন্ত্রী
বছরের শুরুতে বর্তমান মন্ত্রিসভায় নতুন করে যুক্ত হলেন তিনজন মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রী। এর মধ্যে একজন প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী হলেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তাদের শপথ বাক্য পাঠ করান।
পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মোস্তাফা জব্বার, লক্ষীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শাহজাহান কামাল ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী।
শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রিপরিষদের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
শপথের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে তিনজনকে মন্ত্রী ও একজনকে প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দিয়ে আদেশ জারি করা হয়। রাতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জাগো নিউজকে জানান, ‘আজ (মঙ্গলবার) দফতর বণ্টন হবে না, আগামীকাল (বুধবার) হবে।’
বর্তমান সরকারের আরও এক বছর বাকি থাকতে মন্ত্রিসভায় আকার বাড়ানো হলো। এখন মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ৩৩ জন মন্ত্রী, ১৭ জন প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর সংখ্যা হলো ২ জন।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, মোস্তাফা জব্বারকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং শাহজাহান কামালকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে।
এছাড়া মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দকে একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হবে। কাজী কেরামত আলী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ পাচ্ছেন।
৭২ বছর বয়সী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ খুলনা-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিন বার। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় দফায় সরকার গঠন করলে নারায়ণ চন্দ্রকে দেয়া হয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব।
কাজী কেরামত আলী ১৯৫৪ সালের ২২ এপ্রিল রাজবাড়ী জেলার সজ্জনকান্দায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ১৯৯০ সাল থেকে রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ১৯৯২ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে উপ-নির্বাচনে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
শাহজাহান কামাল ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার ১৯৪৯ সালের ১২ আগস্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ থানার চর চারতলা গ্রামে নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সাবেক সভাপতি। তার প্রতিষ্ঠানের বিজয় বাংলা কি-বোর্ড ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হয় যা প্রথম বাংলা কি-বোর্ড। তাকে কম্পিউটারে বাংলা ভাষা যুক্ত করার পথপ্রদর্শক মনে করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে মোস্তাফা জব্বার একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি মুজিব বাহিনীর খালিয়াজুরি থানার সহ-অধিনায়ক ছিলেন। ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা।
দিনভর প্রস্তুতি
সোমবারই চাউর হয়ে যায় মঙ্গলবার মন্ত্রিসভায় রদবদল হচ্ছে। এজন্য মঙ্গলবার সকালেই সাংবাদিকরা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সামনে জড়ো হতে থাকেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব সকাল সাড়ে আটটায় অফিসে এসে হাজির হন।
মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়োগ, দফতর বণ্টন ও অপসারণের আদেশ জারি হয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে। বঙ্গভবনে শপথ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি, গাড়ির ব্যবস্থাসহ আনুষঙ্গিক কাজ নিয়ে সকাল থেকেই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কয়েকটি শাখার কর্মকর্তারা ব্যস্ত ছিলেন।
দুপুরের মধ্যেই নতুন সদস্যদের ব্যবহারের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সামনে প্রস্তুত রাখা হয় করোলা জিএলআই সিরিজের তিনটি গাড়ি। পরে দুপুর আড়াইটার মধ্যে গাড়িগুলো মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যদের বঙ্গভবনে নিয়ে শপথ পড়ানোর জন্য তাদের বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়। প্রতিটি গাড়িতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা ছিলেন।
বিকেলের দিকে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের তিনজন মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রীর শপথ নেয়ার কথা জানান।
বিএনপির অংশগ্রহণবিহীন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর ১২ জানুয়ারি শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। তখন প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ২৯ জন মন্ত্রী, ১৭ প্রতিমন্ত্রী ও দুজন উপমন্ত্রী নিয়োগ দেয়া হয়।
সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই নুরুল ইসলাম বিএসসিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, আসাদুজ্জামান খান কামালকে স্বরাষ্ট্র ও ইয়াফেস ওসমানকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়।
এরমধ্যে আসাদুজ্জামান খান স্বরাষ্ট্র ও স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছিলেন।
একই দিন তারানা হালিমকে ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী এবং নূরুজ্জামান আহমেদকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ করা হয়।
এর আগে ২০১৫ সালের ৯ জুলাই স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দফতরবিহীন মন্ত্রী করা হয়। অপরদিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। একই সঙ্গে খন্দকার মোশাররফ হোসেন অতিরিক্ত হিসেবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করছিলেন।
পরে ওই বছরের ১৬ জুলাই দফতরবিহীন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়।
নতুন সরকার গঠনের পর ২০১৪ সালেরর ২৬ ফেব্রুয়ারি খালি থাকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পান এ এইচ মাহমুদ আলী ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান মো. নজরুল ইসলাম হিরু। অপরদিকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবকে সরিয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়।
হজ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করা হয়।
২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরের চিকিৎসাধীন অবস্থায় সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী ইন্তেকাল করেন। এরপর থেকে প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনই সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
এরপর ২০১৬ সালের ১১ মে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনও ভারতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পরে ওই বছরের ১৯ জুন খাদ্য প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয়।
সর্বশেষ গত ১৬ ডিসেম্বর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হক মারা যান।
এফএইচএস/এইউএ/আরআইপি