যে কারণে মন্ত্রীসভায় ঠাঁই পেলেন নুরুজ্জামান
উত্তরের জেলা লালমনিরহাটের কালিগঞ্জ ও আদিতমারী উপজেলা নিয়ে অবহেলিত সংসদীয় আসন লালমরিহাট-২। ক্ষমতার পালাবদলে সরকার পরিবর্তন হলেও এই আসনের মানুষের ভাগ্যে যেনো কোনো পরিবর্তন নেই। জাতীয় পার্টির দূর্গ বলে পরিচিত এই অঞ্চলের মানুষ সুবিধা বঞ্চিত থেকেছেন খোদ এরশাদ সরকারের আমলেও।
এরশাদ সরকারের আমল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত আসনটি জাতীয় পার্টির প্রবীণ সাংসদ মজিবুর রহমানের দখলে ছিল। এরশাদের পতনের পর আওয়ামী লীগ-বিএনপি ক্ষমতায় এলেও এরশাদ প্রীতির কারণে এই আসনটির মানুষের সঙ্গে এক প্রকার বৈরী আসচরণ-ই করা হয়। উন্নয়ন প্রশ্নে আসনটি লালমনিরহাট সদর এবং লালমনিরহাট-১ আসন থেকে অনেক পিছিয়েও বটে।
তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনে ভোটারদের ভাগ্যের রশিতে টান পড়ে। ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সাংসদ মজিবুর রহমান এরশাদের পক্ষ ছেড়ে কাজী জাফর আহমেদের তীরে নৌকা ভিড়ায়। আর এতেই ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায় আওয়ামী লীগ নেতা নুরুজ্জামান আহমেদের। ওই নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী হয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন নুরুজ্জামান আহমেদ।
সাংসদ নুরুজ্জামানের বাবা করিম উদ্দিন ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে করিম উদ্দিন আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হয়ে বঙ্গবন্ধুর বিশেষ সহচার্য লাভ করেন। ১৯৯১ সালে করিম উদ্দিনের মৃত্যুর পর নুরুজ্জামান আহমেদ রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেন। ওই সময় তিনি আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালের উপজেলা নির্বাচনেও তিনি বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হন।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগে পরিচিত নাম না হলেও কালিগঞ্জ উপজেলার সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন দীর্ঘদিন ধরে। জেলার রাজনীতিতে কোণঠাসা থাকলেও তার নির্বাচনী এলাকায় অপ্রতিদ্বন্দ্বি তিনি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ মানেই নুরুজ্জামান আহমেদ, নৌকা প্রতীক মানেই নুরুজ্জামান আহমেদ।
তবে শেখ হাসিনার মন্ত্রীসভায় জায়গা পেয়ে এভাবে চমক দেখাবেন, এমন ধারণা ছিল না স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাঝেও।
পুরনো রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হলেও সহজ-সরল জীবনযাপনের কারণে নেতাকর্মীদের মাঝে রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। জেলার অন্যান্য সাংসদ এবং নেতাদের সঙ্গে তুলনা করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর বিশেষ নজরে আনেন নুরুজ্জামান আহমেদকে। বিশেষ করে ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার মন্ত্রীসভা থেকে লালমনিরহাট-১ আসনের সাংসদ মোতহার হোসেন ছিটকে পড়ার পরেই নুরুজ্জামানের গুরুত্ব বেড়ে যায়।
২০০৯ সালের নির্বাচনের পর মোতাহার হোসেনকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে মোতাহার হোসেন এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ উঠে। অপরদিকে সাংগঠনিক অদক্ষতা আর নিষ্ক্রিয়তার কারণে লালমনিরহাট সদর আসনের সাংসদ আবু সাঈদ দুলালও কেন্দ্রের নজর কাড়তে ব্যর্থ হন। সাংসদ মোতাহারের দুর্নীতি এবং আবু সাঈদ দুলালের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই নুরুজ্জামানের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকে বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে।
অপরদিকে জাতীয় পার্টির দূর্গ বলে পরিচিত কালিগঞ্জ-আদিতমারীতে নৌকার পাল উড়িয়ে নুরুজ্জামান আহমেদ গত নির্বাচনের পরপরই আলোচনায় ওঠে আসেন। আর এসব কারণেই নুরুজ্জামান আহমেদের ঠাঁই মিলল শেখ হাসিনার মন্ত্রীসভায় -এমনটাই ধারণা সর্বমহলে।
এএসএস/আরএস/আরআইপি