প্রমাণ মিলল তেলের ড্রামে কোকেনই ছিল


প্রকাশিত: ১২:০৫ পিএম, ১৪ জুলাই ২০১৫
ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম বন্দরে সূর্যমুখী তেলের ড্রামে তরল আকারের কোকেনই আমদানি করা হয়েছিল এমনই প্রমাণ পাওয়া গেছে।  চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে সিআইডি পুলিশের কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগারে তেলের নমুনা পরীক্ষায় কোকেনের উপস্থিতি পায় তারা।  এদিকে চার সদস্যের বোর্ড গঠন করে রাসায়নিক পরীক্ষার চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুুত করা হয়।

কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগারের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক ও বোর্ডের প্রধান দিলীপ কুমার সাহা মঙ্গলবার দুপুরে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে জাগো নিউজকে বলেন, তাদের কাছে মোট ১০৭টি ড্রামের তেলের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল।  তাদের ল্যাবের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে সবগুলো নমুনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে রাসায়নিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে একটি ড্রামের তেলে লিকুইড আকারে কোকেনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।

তিনি বলেন, ইতোপূর্বে পাউডার আকারে কোকেন পরীক্ষার জন্য এ ল্যাবরেটরিতে নমুনা পাঠানো হলেও এই প্রথম তেলে মেশানো লিকুইড আকারের কোকেন পরীক্ষার মাধ্যমে সনাক্ত করতে নমুনা পাঠানো হয়।  এ সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনটি বিজ্ঞ আদালতের কাছে উপস্থাপনের জন্য আজই (মঙ্গলবার) চট্টগ্রামে পাঠানো হচ্ছে বলে তিনি জানান।

জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম গোয়েন্দা পুলিশ গত ৬ মে চট্টগ্রাম বন্দরে বলিভিয়া থেকে আমদানিকৃত সূর্যমুখী তেলের কন্টেইনারের ড্রামে কোকেন সন্দেহে মোট ১০৭টি ড্রাম তেল জব্দ করে।

সিআইডির কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগার সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনের বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট ফরিদ আলম গত ৮ জুলাই (স্মারক নং ৬৬৯৩ তারিখ ৮ জুলাই ২০১৫) পুলিশ পরিদর্শক আবুল মনসুরের মাধ্যমে জব্দকৃত তেলের নমুনা চট্টগ্রাম রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠান। বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট বোর্ড গঠন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেন।

সেদিনই ২০০ মিলিলিটার করে মোট ১০৭টি ড্রামের তেলের নমুনা ঢাকায় কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়।

কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগারের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক ডা. দিলীপ কুমার সাহাকে প্রধান করে চার সদস্যের বিশেষজ্ঞ বোর্ড গঠন করা হয়।  অন্য তিন বোর্ড সদস্য হলেন, উপ-প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক মো. কায়ছার রহমান, সহকারী রাসায়নিক পরীক্ষক নজরুল ইসলাম ও পিংকু পোদ্দার।

এদিকে সিআইডির পরীক্ষাগার থেকে প্রতিবেদনটি পাঠানো হলেও বিজ্ঞ আদালতে সেটি দাখিল রোববার নাগাদ হতে পারে।

তরল কোকেন আমদানির ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে তিনজনকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ।  জিজ্ঞাসাবাদে বকুল ও রাজু নামে দুই ব্যক্তির কথা জানায় তারা।  বকুল মিয়া লন্ডন থেকে কোকেন চট্টগ্রামে পাঠিয়েছিল।  এ চোরাচালানের অর্থায়ন করেছিল তার ব্যবসায়িক অংশীদার রাজু।  তিনি বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন বলে আসামিরা জানায়।

জানা গেছে, দু’জনের সম্পৃক্ততার বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বকুল মিয়া ও রাজুর পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা খুঁজে বের করতে মাঠে নেমেছে। তাদের ধরতে ইন্টারপোল এবং স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সহায়তা চাওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ।

নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিবি) কুসুম দেওয়ান সম্প্রতি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আমরা লন্ডন ও ভারতে অবস্থানরত দু’জনের সম্পৃক্ততার তথ্য পেয়েছি।  দেশে অবস্থানরত কয়েকজনের বিষয়েও কিছু তথ্য এসেছে।  দেশের বাইরে যারা আছেন তাদের ধরতে বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা যেমন ইন্টারপোল ও স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সহায়তা নেওয়া হবে।

হেফাজতে নেয়া তিনজনকে নগর গোয়েন্দা পুলিশের চার সদস্যের একটি টিম জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে সূত্র জানায়।

সূত্র মতে, জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি তথ্য পেয়েছে, বকুল মিয়া লন্ডন থেকে তার নিকটাত্মীয় গোলাম মোস্তফা সোহেল এবং আতিকুর রহমানের মাধ্যমে তা খালাসের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছিল। পরবর্তীতে এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হন আজাদ এবং মোস্তফা কামাল।

তরল কোকেন আমদানির ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (উত্তর) মো. কামরুজ্জামান জানান, চলতি সপ্তাহের মধ্যেই ইন্টারপোল এবং স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের কাছে সহায়তা চাওয়ার প্রাথমিক প্রক্রিয়া শেষ করতে চান তারা।

এজন্য পুলিশ সদর দফতরে ইন্টারপোল ডেস্কের সঙ্গে যোগাযোগের প্রক্রিয়া চলছে।  আর স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের কাছে সহায়তা চাওয়া হবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। তবে এর আগে পুরো বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ সদর দফতরকে অবহিত করা হবে।

এমএএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।