মন্ত্রিত্ব পাচ্ছেন আরও চারজন

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:১৪ পিএম, ০১ জানুয়ারি ২০১৮

সরকারের শেষ বছরে মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন আসছে। বাড়ছে আকার। হচ্ছে রদবদলও। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ মন্ত্রী হচ্ছেন। রাজবাড়ী-১ আসনের কাজী কেরামত আলী ও লক্ষীপুর- ৩ আসনের সংসদ সদস্য বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা শাহাজাহান কামালও মন্ত্রিত্ব পাচ্ছেন বলে মন্ত্রিপরিষদ সূত্র জানিয়েছে। এছাড়া টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী হিসেবে মোস্তাফা জব্বারও বঙ্গভবনে ডাক পেয়েছেন বলে জানা গেছে।

কে কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাচ্ছেন তা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন এসব ব্যক্তিরা। সরকারের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। তবে আগামীকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় তাদের শপথ নেয়ার জন্য বঙ্গভবনে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এছাড়া আরও দু’একটি মন্ত্রণালয়ে রদবদল হতে পারে বলে জানা গেছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ সোমবার জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাকে দুপুর দুইটা/আড়াইটার দিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ফোন করে আগামীকাল সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।’ জানতে চাইলে লক্ষীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য শাহাজাহান কামাল জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের ডাকা হয়েছে। আগামীকাল সাড়ে ছয়টায় বঙ্গভবনে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। শাহাজাহান কামাল দ্বিতীয়বারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। 

৭২ বছর বয়সী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ খুলনা-৫  আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিন বার। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় দফায় সরকার গঠন করলে নারায়ণ চন্দ্রকে দেয়া হয় প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। গত ১৬ ডিসেম্বর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হক মারা যান। প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এখন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বরত।

কাজী কেরামত আলী ১৯৫৪ সালের ২২ এপ্রিল রাজবাড়ী জেলার সজ্জনকান্দায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চারবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ১৯৯০ সাল থেকে অদ্যাবধি রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ১৯৯২ সালে ৫ম জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে উপ-নির্বাচনে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি  ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এ, কে, এম, শাহজাহান কামাল ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭৩ সালে ১ম সংসদে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

বাংলাদেশের বিখ্যাত তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার ১৯৪৯ সালের ১২ই আগষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ থানার চর চারতলা গ্রামে নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি। তিনি বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সাবেক সভাপতি। তার প্রতিষ্ঠানের বিজয় বাংলা কিবোর্ড ১৯৮৮ সালে প্রকশিত হয় যা প্রথম বাংলা কিবোর্ড এবং ইউনিকোড আসার পূর্বপর্যন্ত বহুল ব্যবহৃত হয়েছে। তাকে কম্পিউটারে বাংলা ভাষা যুক্ত করার পথপ্রদর্শক মনে করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে মোস্তাফা জব্বার একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি মুজিব বাহিনীর খালিয়াজুরি থানার সহ অধিনায়ক ছিলেন। তিনি ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন। কয়েকজনের শপথ ছাড়াও মন্ত্রিসভায় আরও কিছু রদবদল আসতে পারে বলে বিভিন্ন সূত্র জাগো নিউজকে জানিয়েছে। তবে এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম কোনো কিছু জানাতে চাননি। 

প্রসঙ্গত, বর্তমানে মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ৩০ জন মন্ত্রী, ১৭ জন প্রতিমন্ত্রী ও ২ জন উপমন্ত্রী রয়েছেন। মন্ত্রী পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা রয়েছেন ৫ জন, মন্ত্রীর পদমর্যাদাসম্পন্ন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত রয়েছেন একজন। বিএনপির অংশগ্রহণবিহীন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর ১২ জানুয়ারি শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। তখন প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ২৯ জন মন্ত্রী, ১৭ প্রতিমন্ত্রী ও দুজন উপমন্ত্রী নিয়োগ দেয়া হয়। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই নুরুল ইসলাম বিএসসিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, আসাদুজ্জামান খান কামালকে স্বরাষ্ট্র ও ইয়াফেস ওসমানকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। এরমধ্যে আসাদুজ্জামান খান স্বরাষ্ট্র ও স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছিলেন। একই দিন তারানা হালিমকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী এবং নূরুজ্জামান আহমেদকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ করা হয়।

এর আগে ২০১৫ সালের ৯ জুলাই স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দফতরবিহীন মন্ত্রী করা হয়। অপরদিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। একই সঙ্গে খন্দকার মোশাররফ হোসেন অতিরিক্ত হিসেবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করছিলেন। পরে ওই বছরের ১৬ জুলাই দফতরবিহীন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়।

২০১৪ সালে নতুন সরকার গঠনের পর ২৬ ফেব্রুয়ারি খালি থাকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পান এ এইচ মাহমুদ আলী ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান মো. নজরুল ইসলাম হিরু। অপরদিকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবকে সরিয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। হজ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করা হয়। 

২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী ইন্তেকাল করেন। এরপর থেকে প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনই সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এরপর ২০১৬ সালের ১১ মে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনও ভারতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পরে ওই বছরের ১৯ জুন খাদ্য প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয়।

এইচএস/এইইউএ/আরএমএম/ওআর/আরআইপি/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।