চ্যালেঞ্জের মুখে সিএনজি অটোরিকশা চালক-মালিকরা

আবু সালেহ সায়াদাত
আবু সালেহ সায়াদাত আবু সালেহ সায়াদাত , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:২০ এএম, ০১ জানুয়ারি ২০১৮

তখন সকাল পৌনে ৮টা। মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্ত্বরে অফিসগামী মানুষের প্রচণ্ড ভিড়। হুড়োহুড়ি করে বাসে উঠছেন সবাই। অথচ রাস্তার পাশেই দাঁড়ানো বেশ কয়টি সিএনজি অটোরিকশা। সেদিকে যাত্রীদের আগ্রহ না থাকায় চালকরাও নেমে একপাশে দাঁড়িয়ে আছেন। তারা একে অপরকে বলছেন 'এত্ত মানুষ, তাও সিএনজিতে কেউ যাইতাছে না, সকাল থেকে একটা ট্রিপও পাইলাম না'।

মিটারে না যাওয়া, কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যস্থলে যেতে অনিচ্ছা, চুক্তিতে ছাড়া যাবেন না- যাত্রীদের কাছে এমন নানা অন্যায্য দাবি ছিল অটোরিকশা চালকদের। সে সময় তাদের কাছে অনেকটাই জিম্মি ছিলেন যাত্রীরা। এমনই প্রেক্ষাপটে আসে অ্যাপনির্ভর রাইড শেয়ারিং সেবা। এতে সুবিধা বেশি পাওয়ায় যাত্রীরা অটোরিকশা বিমুখ হতে শুরু করেছেন। ফলে অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন অটোরিকশার চালক-মালিকরা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির এক জরিপ প্রতিবেদন তুলে ধরে সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক জাগো নিউজকে বলেন, এখনও ৮৭ ভাগ অটোরিকশা মিটারে চলে না। ৯২ ভাগ চালক মিটারের অতিরিক্ত ২০ থেকে ৫০ টাকা ভাড়া বা বকশিশ দাবি করেন। আর যাত্রীর পছন্দের গন্তব্যে যেতে রাজি হয় না ৭৮ শতাংশ চালক। যে কারণে সিএনজি অটোরিকশার প্রতি মানুষের অনাস্থা-অনিহা ছিল আগে থেকেই। এ অবস্থায় অ্যাপনির্ভর সহজ রাইড শেয়ারিং সেবা চালু হওয়ায় মানুষ সিএনজি অটোরিকশা থেকে অনেকটাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্ত্বরে যাত্রীর অপেক্ষায় রাস্তায় দাঁড়ানো সিএনজি অটোরিকশা চালক নূরুল আমিন বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে আমরা আর আগের মত যাত্রী পাইতাছি না। আগের চেয়ে আয় কমে গেছে। আগে সারাদিনে ৭/৮টা ট্রিপ মারতাম এখন সেই জায়গায় ৪/৫টা ট্রিপ মারতে পারি’।

CNG-1

কেন ট্রিপ কমে গেল? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উবার-পাঠাও এমন অনেক কিছু আসায় এখন বেশিরভাগ যাত্রী ওসবে চলাফেরা করে। কোনো যাত্রীর কাছে গন্তব্য অনুযায়ী ভাড়া চাওয়ার পর তার কাছে বেশি মনে হলে সেই যাত্রী কয় ভাড়া এত বেশি ক্যান? তাহলে আমার উবারে যাওয়াই ভালো’।

আরেক চালক হায়দার হোসেনও একই রকম অভিমত জানান।

তাহলে আপনারাও কম ভাড়ায় বা মিটারে গেলে আবার যাত্রী পাবেন- এ প্রতিবেদকের এমন কথার উত্তরে চালক হায়দার হোসেন বলেন, ‘আমাদের সারা দিনের জন্য প্রায় ১ হাজার টাকা মালিককে জমা দিতে হয়। সে কারণে আমরা মিটারে বা নির্দিষ্ট ভাড়ায় চলাচল করতে পারি না। আগে যা যাত্রী পেতাম এখন তার অর্ধেকও পাই না। আজ এখন পর্যন্ত একটা ট্রিপও পাইনি। এভাবে চলতে থাকলে সিএনজি চালানো বাদ দিয়ে অন্য কিছু করে চলতে হবে’।

চালকদের এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে কথা হয় শহিদুল ইসলাম নামে এক যাত্রীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি নিজেই সিএনজি অটোরিকশায় চলাচল কমিয়ে দিয়েছি। তবে অনেক সময় বাধ্য হয়ে চড়তে হয়। বেশির ভাগ সময় উবার-পাঠাওয়ে চলাচল করি। কারণ কোনো সিএনজি অটোরিকশা চালক মিটারে চলাচল করেন না। তারা কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে যেতে রাজি হয় না, ভাড়াও আদায় করে অনেক বেশি, এ ছাড়া কখনই তারা মেইন রোড ছেড়ে কাঙ্ক্ষিত গলির মধ্যে যেতে চায় না।

তিনি আরও বলেন, পক্ষান্তরে অ্যাপনির্ভর রাইড শেয়ারিং সেবা যারা দেয় তারা নির্ধারিত ভাড়ায় কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছে দেয়, সেবার মানও ভালো। যে কারণে সাধারণ যাত্রীরা সিএনজি অটোরিকশা থেকে অনেকটাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

রাস্তায় বিভিন্ন রাইড শেয়ারিং চালু হওয়ায় সিএনজি অটোরিকশা পড়ছে চ্যালেঞ্জের মুখে। রাইড শেয়ারিংয়ে সুবিধা বেশি পাওয়ায় যাত্রীরা সিএনজি অটোরিকশা বিমুখ হতে শুরু করেছেন।

এদিকে লোকসানের মুখে পড়ে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিকদের সংগঠন। চাপ ও সমালোচনার মুখে তারাও এখন ধর্মঘট প্রত্যাহার করে ইউটার্ন নিয়েছে। বলছে অটোরিকশাও অ্যাপসের মাধ্যমে চলবে।

এ বিষয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগর সিএনজি অটোরিকশা মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক বরকত উল্লাহ ভুলু জাগো নিউজকে বলেন, চালকরা যে আগের মত যাত্রী পাচ্ছেন না একথা ঠিক, ফলে তারা বারবার মালিকদের কাছে নিজেদের সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। সব দিক বিবেচনা করে আমরাও সিএনজি অটোরিকশা অ্যাপনির্ভর করার কাজ হাতে নিয়েছি। আগামীতে সিএনজি অটোরিকশাও অ্যাপসে চলবে। আশা করা যায় তখন চালকরা আগের মত আবার যাত্রী পেতে শুরু করবেন।

এএস/এমএমজেড/এমবিআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।