প্রতিবন্ধীদের জীবন কাহিনী গণমাধ্যমে তুলে ধরুন
নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা বা করুনার পাত্র নয়; তাদের প্রতি সমাজের দায়বদ্ধতা রয়েছে। তাদেরকে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠা করতে সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব রয়েছে। প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থানসহ সমাজে প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে মিডিয়ার ভূমিকা অপরিসীম।
তিনি বলেন, প্রতিবন্ধীদের জীবন কাহিনী গণমাধ্যমে তুলে ধরতে এবং তাদের জন্য কি করা যায় সে বিষয়ে সুপারিশ করতে সংবাদকর্মীরা বলিষ্ঠভাবে কাজ করতে পারেন। প্রতিবন্ধীরা যে সমাজের অভিশাপ নয়, তারা যে পরিবার ও সমাজের আশীর্বাদ হতে পারে সে বিষয়গুলো সাংবাদিকরা লেখা ও প্রচারের মাধ্যমে জনগণকে জানাতে পারেন।
রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থান : গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ‘এক্সসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’ ও ‘ডিসএবিলিটি রাইটস ফান্ড’ এর সহযোগিতায় ‘জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরাম’ এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মো. মোশাররফ হোসেন।
বুদ্ধি প্রতিবন্ধী সংগঠন ‘সুইড’ বাংলাদেশ-এর ক্রীড়া সম্পাদক মেজর (অব.) ইয়াদ আলী ফকিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সুশান্ত কুমার প্রামাণিক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শাবান মহামুদ, জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামের মহাসচিব ড. সেলিনা আক্তার, এটিএন বাংলার উপদেষ্টা কর্নেল (অব.) মোতাহার হোসেন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সাইটসেভার্স’ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর খন্দকার আরিফুল ইসলাম।
শাজাহান খান বলেন, প্রতিবন্ধীদের বিষয়ে সরকার খুবই আন্তরিক। এ লক্ষ্যে সরকার প্রতি মাসে ৭০০ টাকা করে ৮ লাখ ২৫ হাজার প্রতিবন্ধীকে ভাতা দিচ্ছে। ৮০ হাজার প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ৫০০-১২০০ টাকা করে উপবৃত্তি দিচ্ছে। ১৩০টি সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র প্রতিবন্ধীদের থেরাপি ও অন্যান্য সেবা দেয়া হচ্ছে। আরও ৪০টি সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। ৩২টি মোবাইল থেরাপি ভ্যানের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, ৩য় এবং ৪র্থ শ্রেণির চাকরির ক্ষেত্রে এতিম ও প্রতিবন্ধী কোটায় ৫-১০% ও অন্যান্য শ্রেণিতে ১% কোটা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সরকার প্রতিবন্ধীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ‘প্রতিবন্ধী কল্যাণ ও সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন’ এবং ‘নিউরো ডেভেলপমেন্ট সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন’ দু’টি আইন করেছে। এ আইন দু’টির বিধিমালাও প্রণীত হয়েছে। ৬৪টি জেলায় ও সব উপজেলায় কমিটি গঠন করা হয়েছে যাতে করে আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন করা যায়।
শাজাহান খান বলেন, নৌ মন্ত্রণালয়ের অধীন বিআইডব্লিউটিসি’র ঢাকা-বরিশাল রুটে স্টিমারে প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি কেবিন রিজার্ভ থাকে। ব্যক্তি মালিকানাধীন লঞ্চে যাতে দক্ষিণ অঞ্চলে যাত্রীবাহী প্রতিটি লঞ্চে প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি কেবিন রিজার্ভ থাকে সেজন্য আমার মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেয়া হবে।
তিনি বলেন, চাকরি ক্ষেত্রে সর্বত্র প্রতিবন্ধী কোটায় যাতে চাকরি নিশ্চিত হয় সেজন্য সর্বত্র সুপারিশ করব।
প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়িয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা, ধনাঢ্য ব্যক্তি, শিল্প ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠনগুলোর প্রতি মন্ত্রী আহ্বান জানান। তিনি অসহায় প্রতিবন্ধীদের জন্য সরকারি, সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত উদ্যোগের মাধ্যমে ‘প্রতিবন্ধী আশ্রম’ প্রতিষ্ঠা করার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করতে সাংবাদিকদের প্রতিও আহ্বান জানান।
এমএ/জেএইচ/জেআইএম