বাতিলের তালিকায় আরও কোচিং সেন্টার

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:৩৩ পিএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭

অবৈধ ও অননুমোদিত বিলবোর্ড, পোস্টার, ফেস্টুন ও ওভারহেড সাইনবোর্ড অপসারণ না করায় এ পর্যন্ত ১৪টি কোচিং সেন্টারের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করেছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। এখনও যেসব কোচিং সেন্টার বিলবোর্ড, পোস্টার, ফেস্টুন অপসারণ করেনি তাদেরও তালিকা হচ্ছে। নগরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে তাদেরও ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করা হবে- জানিয়েছে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ।

গত ২৬ ডিসেম্বর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ৬টি কোচিং সেন্টারের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করে, তার পর পরই ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন বাতিল করে আরও ৮টির। ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করা হলেও অনেকেই কার্যক্রম চালিয়েই যাচ্ছে। আবার অনেকে নামে মাত্র বন্ধ রেখেছে। তবে তাদের অভিযোগ, ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করে তাদের সঙ্গে অবিচার করা হয়েছে। যে অভিযোগের ভিত্তিতে লাইসেন্স বাতিল করার আদেশ দেয়া হয়েছে তার প্রমাণগুলো অনেক আগের।

লাইসেন্স বাতিল হওয়া বিষয়ে ইউনিএইড কোচিং সেন্টারের মালিকদের একজন গোলাম মোস্তফা কিরণ। বলেন, সিটি কর্পোরেশন এসব ব্যানার, ফেস্টুন, বিল বোর্ডের ছবি অনেক আগে তুলে নিয়ে গেছে। গত মার্চে আমাদের চিঠি দিলে আমার তা সরিয়ে নেই কিন্তু হঠাৎ করেই গত ২৬ ডিসেম্বর ট্রেড লাইসেন্স বাতিলের ঘোষণা দেয়।

অভিযোগ করে তিনি বলেন, শুধু ফার্মগেইটিই আরও অনেক কোচিং সেন্টার আছে যাদের অনেক ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড আছে কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। তাদের ট্রেড লাইসেন্স ঠিকই আছে কিন্তু আমাদেরটা বাতিল করল।

ওমেগা কোচিং সেন্টারের শাখা ব্যবস্থাপক পাপিয়া আক্তার বলেন, সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে গত সেপ্টেম্বরের দিকে আমাদের চিঠি দেয়। সেই চিঠির প্রেক্ষিতে আমরা ব্যানার,ফেস্টুন, বিলবোর্ড সব সরিয়ে নিয়েছিলাম কিন্তু হঠাৎ করে ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করে দেয়। আমাদের চেয়ে অন্যদের আরও বেশি ব্যানার ফেস্টুন আছে কিন্তু তাদের কিছু হলো না।

একই ধরনের অভিযোগ জানিয়ে প্যারাগন কোচিং সেন্টারের ম্যানেজার নাজমুল ইসলাম বলেন, আমরা নির্দেশ পাওয়া মাত্রই ব্যানার ফেস্টুন সরিয়ে ফেলেছিলাম। তাদের যেমন শর্ত ছিল তাও পালন করেছি কিন্তু হঠাৎ ট্রেড লাইসেন্স কেন বাতিল করল তা বুঝতে পারলাম না।

এমন অভিযোগের ভিত্তিতে নাম প্রকাশ না শর্তে কোচিং সেন্টার সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, একই এলাকায় অনেক কোচিং সেন্টারের অতিরিক্ত ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড থাকা সত্ত্বেও তাদেরটা বাতিল না হয়ে এই নির্দিষ্ট কিছু কোচিং সেন্টারের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল হলো কেন? তাদের ধারণা, এই কোচিং সেন্টারগুলোর মালিকরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণ হিসেবে তাদের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল হয়েছে। অনেক মালিক বিএনপি বা জামায়াতকে সমর্থন করে বলেই হয়তোবা তাদের কোচিং সেন্টারের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ট্রেড লাইসেন্স বাতিল হওয়া একটি কোচিং সেন্টারের পদস্থ এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের মালিকরা যে কোন দলকেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সমর্থন করতে পারে। ট্রেড লাইসেন্স বাতিল হওয়া কোচিং সেন্টারের একটি মালিক সরাসরি ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল, তার কোচিং সেন্টারেরও লাইসেন্স বাতিল হয়েছে।

গত ২৬ ডিসেম্বর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ৬টি কোচিং সেন্টারের লাইসেন্স বাতিল করে। কোচিং সেন্টারগুলো মধ্যে রয়েছে : ইউসিসি কোচিং সেন্টার (ফার্মগেট) ইউনিএইড কোচিং সেন্টার (ফার্মগেট), আইকন কোচিং সেন্টার (ফার্মগেট), আইকন প্লাস কোচিং সেন্টার (ফার্মগেট), ওমেগা কোচিং সেন্টার ( ফার্মগেট) এবং প্যারাগন কোচিং সেন্টার (ফার্মগেট) শাখা।

এছাড়া গত ২৮ ডিসেম্বর ৮টি কোচিং সেন্টারের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। লাইসেন্স বাতিল হওয়া কোচিং সেন্টারগুলো হলো- এক্সপার্ট একাডেমি কোচিং, গেটওয়ে ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, গ্রিনহিল টিউটরিয়াল, কম্বাইন টিউটরিয়াল, উদ্ভাস কোচিং সেন্টার, সানি হিলস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, গ্লোরিয়াস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ক্যাডেট একাডেমি ও রকিবুল ইসলাম অনার্স কোচিং। এদের মধ্যে গেটওয়ে ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, সানি হিলস স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও গ্লোরিয়াস স্কুল অ্যান্ড কলেজ স্কুলের নামে কোচিং চালিয়ে আসছিল।

অনেক কোচিং সেন্টারের ব্যানার ফেস্টুন বিল থাকা সত্ত্বেও তাদের ট্রেড লাইসেন্স কেন এখনও বাতিল করা হচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা রবীন্দ্র শ্রী বড়ুয়া জাগো নিউজকে বলেন, চিঠি দেয়ার পরও যারা ব্যানার ফেস্টুন, বিলবোর্ড সরিয়ে নেয়নি তাদের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করেছি। এছাড়া আমার আরও তালিকা তৈরির কাজ করছি যারা এখন সরিয়ে নেয়নি বা নিচ্ছে না। আগামীতে তাদেরও ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করবো, এমন একটি তালিকাও ইতোমধ্যে তৈরি করা হয়েছে।

যাদের লাইসেন্স বাতিল হয়েছে তার এখনও অনেকে তাদের প্রতিষ্ঠান খোলা রেখে কার্যক্রম চালাচ্ছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে তাদের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করছি এ বিষয়ে মনিটরিং করে যদি দেখা যায় কার্যক্রম চলছে তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে নতুন করে কাউকে লাইসেন্স দেয়া হবে না।

এএস/জেএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।