শিশু সন্তানকে নিয়েই আন্দোলনে শিক্ষিকারা

মুরাদ হুসাইন
মুরাদ হুসাইন মুরাদ হুসাইন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৩৭ এএম, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭

অধিকার আদায়ে ছোট সন্তানকে নিয়ে তিন দিন ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছেন একাধিক শিক্ষিকা। দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পেয়ে ঘর-সংসার ফেলে বাধ্য হয়ে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ তাদের। শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির দাবিতে মঙ্গলবার থেকে চলছে টানা অবস্থান কর্মসূচি।

বৃহস্পতিবার অবস্থান কর্মসূচীতে দেখা যায়, ঝিনাইদহের আয়শা খাতুন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষিকা পাপিয়া সুলতানার কোলে চার বছরের সন্তান। চার বছরের ছোট্ট শিশু কোলে নিয়েই আন্দোলেনে নেমেছেন তিনি।

শিক্ষকদের বিক্ষোভ আর রাস্তায় পরিবহনের শব্দে ছোট শিশুটি কান্না থামছিল না। মা একদিকে শিশুটির কান্না থামানোর চেষ্টা করছিলেন আরেকদিকে দাবি আদায়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন।

পাপিয়া সুলতানার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ঢাকার লালমাটিয়া মহিলা কলেজ থেকে মার্স্টাস ও শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে গত ছয় বছর ধরে তিনি শিক্ষকতা করছেন। পাঁচ বছর আগে স্বামী মারা গেছেন। তার দুই সন্তান। ছেলে বড়। নাম অভিত। নবম শ্রেণিতে পড়ে। মেয়ে অবনি চার বছর বয়স। দুই সন্তান রেখে তাদের বাবা না ফেরার দেশে চলে গেছেন। তাই পুরো পরিবারটি মাকেই পরিচালনা করতে হচ্ছে।

কিভাবে পরিবার ও সন্তানের পড়ালেখার চলে কিভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছয় বছর ধরে স্কুলের শিক্ষাকতার পাশাপাশি টিউশনির টাকা দিয়ে কোনমতে পরিবার চালাতে হচ্ছে। ছেলেটা সমাপনী ও জেএসসিতে মেধা বৃত্তি পেয়েছে। সেখান থেকে যে বৃত্তিবাবদ অর্থ পায় তা দিয়ে পড়ালেখা চলে। নিজের কষ্টের কথা বলতে বলতে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

তিনি বলেন, শিক্ষক হওয়ার সকল যোগ্যতা থাকার পরও আমি গত ছয় বছর থেকে বিনা বেতনে শিক্ষকতা করছি। স্বামী নেই। পুরো পরিবারটিকে আমার উপর নির্ভর করে। অর্ধাহারে-অনাহারে দিন পারতে করতে হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়েই ছোট শিশুকে নিয়ে তিনদিন ধরে রাস্তায় বসে আন্দোলন করে যাচ্ছি।

এই শিক্ষকের অভিযোগ- সন্তানের খাদ্য যোগাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই মানবেতন জীবন যাপন করতে হচ্ছে।

শিক্ষাকতা পেশায় এসে অন্যায় করেছেন কি না- এমন প্রশ্নও রাখেন তিনি।

পটুয়াখালী বাউফল উপজেলার বগা ইউনিয়ন বালিকা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মাসুমা আক্তার। তার দুই মেয়ে-এক ছেলে। ছেলের বয়স পাঁচ বছর। অসুস্থ ছেলেকে রেখেই তিনি আন্দোলন যোগ দিতে ঢাকায় এসেছেন। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন দশ বছরের মেয়ে সাফাকে। মায়ের কোলে বসে সাফা এ আন্দোলনে শরিক হয়েছেন।

jagonews24

মাসুমা আক্তার জানান, ২০০১ সাল থেকে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষকতা করছেন তিনি। ১৬ বছর তিনি বিনা বেতনে কাজ করে যাচ্ছেন। অনেক দিন ধরে ছোট ছেলেটা অসুস্থ। তাকে রেখেই ঢাকায় এসে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, এভাবে আর কতো দিন চলতে পারে। কাজ করে আমাদের পারিশ্রমিক দেয়া হয় না। শিক্ষাকতা পেশায় এসে কি তবে অন্যায় করেছি প্রশ্ন তুলে তিনি সরকারের উদ্যোশে বলেন, হয় আমাদের মেরে ফেলুন নতুবা আমাদের এমপিওভুক্ত করে মহান এ পেশায় থাকার সুযোগ দিন। তার মতো এমন অনেক নারী-পুরুষ সব ছেড়ে রাস্তায় নেমে এ আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন।

উল্লেখ্য, এমপিওভুক্তির দাবিতে গত তিনদিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশন। আজ তৃতীয় দিনেরমত তাদের আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ অবস্থান কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। দাবি আদায়ে আরও কঠোর আন্দোলনের দিকে যাবেন বলেও জানিয়েছেন আন্দোলকারীরা।

এমএইচএম/এনএফ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।