স্কুলছাত্রী ধর্ষণ ও হত্যার বিচার চেয়ে নিরাপত্তাহীনতায় মা


প্রকাশিত: ১১:১০ এএম, ১২ জুলাই ২০১৫

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে চাঞ্চল্যকর দশম শ্রেণির ছাত্রী পারভীন আক্তারকে (১৪) ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় বিচার চেয়ে প্রাণনাশের হুমকিতে পড়েছেন মা রমিছা খাতুন। নিরাপত্তাহীনতায় তিনি বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আসামি পক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।

পুলিশ মামলা না নেয়ায় আদালতে মামলা করেন রমিছা খাতুন। বিজ্ঞ বিচারক বাদীর জবানবন্দী গ্রহণ শেষে ফুলবাড়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এরপর থেকে আসামিরা মামলা তুলে নিতে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছেন।

অভিযোগে জানা যায়, ফুলবাড়ী উপজেলার ঘোগার কুটি গ্রামের দিনমজুর রফিকুল ইসলামের মেয়ে ও বড়ভিটা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী পারভীন আক্তারের সঙ্গে একই গ্রামের আমির হোসেনর ছেলে রবিউল ইসলাম (২০) প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। প্রেম ভালবাসার এক পর্যায়ে গত ১৯ মে সকালে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে রবিউল পারভীনকে তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে যান। বাড়িতে লোকজন না থাকার সুবাদে রবিউল পারভীনকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। এ ঘটনায় উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে প্রতিবেশিরা টের পেলে পালিয়ে যান রবিউল। তখন রবিউলের স্বজনরা পারভীনকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার জন্য টানা-হেচড়া ও মারপিট শুরু করেন। মারপিটে পারভীন জ্ঞান হারিয়ে ফেললে মুখে কীটনাশক ঢেলে দিয়ে আত্মহত্যার অপপ্রচার চালান তারা।

খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন গিয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ফুলবাড়ী হাসপাতালে ভর্তি করালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পারভীনের মৃত্যু হয়। পুলিশ মরদেহের ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করলেও মামলা নেয়নি। ঘটনা মীমাংসার নামে স্থানীয় মেম্বর মজিবর রহমান সাদা কাগজে টিপসই নেন রমিছা খাতুনের। এ কাগজে লেখা হয় ‘আমার মেয়ে আমার সাথে অভিমান করে বিষপান করে আত্মহত্যা করে। আমার কোনো অভিযোগ নেই। আমি কোনো মামলা করবো না।’

এটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসামি পক্ষ সালিশ বৈঠকের নামে টালবাহানা শুরু করে। এ ঘটনায় পারভীনের মা রমিছা খাতুন বাদী হয়ে কুড়িগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে ধর্ষকসহ ৬ জনকে আসামি করে অভিযোগ দায়ের করেন। মামলার  পিটিশন নং-২৭/১৫ তারিখ-১৭/০৬/১৫। আদালত ফুলবাড়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

নিহতের মা রমিছা খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে আমি দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। কেউ বিচার করেনি। ন্যায় বিচার পাবার আশায় আদালতে মামলা করি। কিন্তু মামলা করায় আসামিরা আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। ভয়ে বাড়িতেও থাকতে পারছি না।

ফুলবাড়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নজির হোসেন আদালতের তদন্তের নির্দেশ পাবার কথা স্বীকার করে জাগো নিউজকে বলেন, অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন আদালত নির্দেশিত ১২ আগস্টের মধ্যে দাখিল করা হবে।

ফুলবাড়ী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বজলুর রশিদ জাগো নিউজকে জানান, এ ঘটনায় নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ না করায় থানায় মামলা করা সম্ভব হয়নি।

নাজমুল হোসেন/এমজেড/আরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।