আশরাফের অব্যাহতিতে আওয়ামী লীগে ক্ষোভ
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনায় সংগঠনের অনেকেই ক্ষুব্ধ। মন্ত্রীসভায় পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির এই সদস্যের অব্যাহতিতে অনেকে হতাশাও প্রকাশ করছেন।
আওয়ামী লীগের সভপাতিমণ্ডলীর এক সদস্য জাগোনিউজকে বলেন, বিষয়টি আমার মতো হাজার হাজার নেতাকর্মীকে অবাক করেছে। মন্ত্রীসভার কারও কারও বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। তাদের স্বপদে বহাল রেখে একজন নির্লোভ, নির্মোহ ব্যক্তিকে এভাবে সরিয়ে দেওয়া অনেকেই মানতে পারছে না। তবে প্রধানমন্ত্রী বিচক্ষণতার মধ্য দিয়েই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, যা দল এবং সংগঠনের জন্য মঙ্গলজনক।’
বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপনে সৈয়দ আশরাফকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তবে তিনি দফতরবিহীন মন্ত্রী থাকবেন বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
এর আগে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুপস্থিত থাকায় সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার গুঞ্জন ওঠে। প্রথমে গুঞ্জনকে উড়িয়ে দিয়ে সৈয়দ আশরাফ বলছিলেন,‘ গুঞ্জনে কান দেবেন না।’
মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন তিনি। এরপরেই তার অব্যহতির বিষয়টি নিশ্চত হয়। তবে পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও সৈয়দ আশরাফ তার অব্যহতির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
এদিকে শনিবার ঢাকায় এক ইফতার পার্টিতে যোগ দিয়ে আশরাফ বলেন, ‘আমি লাভের জন্য রাজনীতি করি না। আমার বাবা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বেইমানি করেননি। তিনি আওয়ামী লীগকে ধারণ করেই মৃত্যু বরণ করেন। আমার শরীরেও সেই রক্ত প্রবাহমান।’ এ সময় আবেগতাড়িত হলেও অব্যহতির বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য না করে কৌশলে এড়িয়ে যান।
মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের জ্যেষ্ঠ সন্তান সৈয়দ আশরাফ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একজন রাজনীতিকই শুধু নন, দলের জন্য নিবেদিতও বটে। সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে (আওয়ামী লীগের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি)প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন তিনি। এছাড়া শেখ হাসিনার মুক্তির জন্য সক্রিয় আন্দোলন গড়ে তুলতে বড় ভূমিকা রাখেন সৈয়দ আশরাফ।
ওই সময় আওয়ামী লীগের অনেক জ্যেষ্ঠ নেতার বিতর্কিত ভূমিকা থাকলেও সৈয়দ আশরাফ দলের প্রতি অবিচল আস্থা প্রদর্শন করেন। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে সৈয়দ আশরাফ নজরকাড়া ভূমিকা পালন করেছেন বলেই আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করেছে এমন প্রচার রয়েছে দলের মধ্যে। পরে স্থানীয় সরকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান তিনি।
আওয়ামী লীগের ২০০৯ সালের ২৪ জুলাইয়ের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এরপর ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর দলের সর্বশেষ সম্মেলনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি।
শেখ হাসিনার মন্ত্রীসভার অনেক সদস্যের বিরুদ্ধের দুর্নীতি, অনিয়ম, প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে ওঠে। ইতোপূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে মন্ত্রী সভার দুই সদস্যকে অব্যাহতিও দেয়া হয়। এমনকি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে মন্ত্রীদের ব্যাপক অনিয়মের কথা গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়।
তবে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব ধরে পালন করে এলেও সৈয়দ আশরাফের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির কোনো অভিযোগ ওঠেনি। দলের মধ্যে তিনি একজন সাদামাটা জীবনযাপনকারী, সৎ, আদর্শবান মানুষ হিসেবে পরিচিত।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মধ্যম সারির এক নারী নেত্রী সৈয়দ আশরাফের অব্যহতির ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘ প্রথম দিন যখন এ বিষয়ে গুঞ্জন ওঠে, আমরা হতবাক হয়ে যাই। আশরাফ ভাইকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, কথাটি কোনোভাবেই মানতে পারছিলাম না। অবশেষে সত্য হলো। এই সিদ্ধান্ত দলের জন্য কতটকু স্বস্তিদায়ক হবে, তা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু এমন সময়ে তার অব্যাহতি কেন যেন মানতেই পারছি না। কারণ, স্বচ্ছতার প্রশ্নে আমাদের কাউকে না কাউকে অনুসরণ করতেই হয়।’
তবে নাম প্রকাশ না করে দলের সভপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য বলেন,‘দলকে নির্বাচনমুখী করা সময়ের দাবি। নানা কারণেই দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ঝিমিয়ে পড়েছে। আর বসে থাকার সময় নেই। আর পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফই এ কাজে নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা রাখেন।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আশরাফ ভাই জাতীয় নেতা। দলের ক্রান্তিলগ্নে আমরা তার কাছেই ভরসা পাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা আশরাফ ভাইয়ের সঙ্গে পরামর্শ করেই নিয়েছেন। সরকার এবং সংগঠনের জন্য যা কল্যাণকর, তা দু’জনের বিশেষ সিদ্ধান্তেই হচ্ছে। আমরা বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখতে চাই।
এএসএস/ এসআরজে