বিজিবিকে যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলছে সরকার
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন-২০১০ পাসের মধ্য দিয়ে সরকার এ বাহিনীকে যুগোপযোগী সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এ বাহিনীকে বিশ্বমানের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে তার সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
২০ ডিসেম্বর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দিবস উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে তিনি এসব কথা বলেন। দিবসটি উপলক্ষে তিনি এ বাহিনীর সব সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজিবি পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় ৫টি রিজিয়ন স্থাপন করে কমান্ড স্তর বিকেন্দ্রীকরণ, সীমান্তে বিজিবির কার্যকর নজরদারির লক্ষ্যে নতুন ৪টি সেক্টর ও ১৫টি ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়েছে। আগামীতে বিজিবিকে একটি ত্রিমাত্রিক আধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে ‘ভিশন-২০৪১’ প্রণয়ন করা হয়েছে। বিজিবির জনবল আর ১৫ হাজার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অনুমোদন হয়েছে। অন্যান্য বাহিনীর ন্যায় বিজিবিতে নারী সৈনিক নিয়োগ করা হচ্ছে। বিজিবির নিজস্ব এয়ার উইং সৃজন করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ২২২ বছরের একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে এ বাহিনীর ভূমিকা অবিস্মরণীয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণের ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’-ঐতিহাসিক দিক নির্দেশনায় এ বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধের সর্বাত্মক প্রস্তুতি শুরু করেন।
২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ইপিআর ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে যায় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে আপামর জনসাধারণের সঙ্গে এ বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ বীরত্বের জন্য এ বাহিনীর দু’জন বীরশ্রেষ্ঠসহ ১১৯ মুক্তিযোদ্ধা সদস্য খেতাবপ্রাপ্ত হয়েছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে এ বাহিনীর ৮১৭ জন অকুতোভয় সদস্য তাদের জীবন উৎসর্গ করে বিজিবির ইতিহাসকে মহিমান্বিত করেছেন।
তিনি তাদের এ আত্মত্যাগ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বলেন, এ বাহিনীর ‘স্বাধীনতা পদক’ অর্জন মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানেরই অনন্য স্বীকৃতি।
প্রধানমন্ত্রী ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানার অতিশয় ঘৃণ্য ও নিন্দনীয় ঘটনায় শহিদদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে বলেন, এ ঘটনায় দোষীদের যথাযথভাবে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। সম্প্রতি হাইকোর্ট ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন ও ১৯৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড দিয়েছেন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার এ অনন্য দৃষ্টান্ত সব ধরনের পেশি শক্তির প্রয়োগ ও অপরাধ সংঘটনকে কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ বিজিবি সদস্যরা দেশের সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষা, চোরাচালান, নারী ও শিশু এবং মাদকদ্রব্য পাচার প্রতিরোধসহ দেশের অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসনকে সহায়তা করে। এর মাধ্যমে তারা জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে অত্যন্ত প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে চলেছে।
তিনি আরও বলেস, সম্প্রতি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকালে বিজিবি সদস্যরা প্রাথমিক বন্দোবস্ত, আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ, ত্রাণবিতরণ, চিকিৎসা ও মানবিক সহায়তা প্রদানে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে পেশাদারিত্বের নিদর্শন রেখেছে, যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এ বাহিনী তথা দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে।
আরএস/আইআই