প্রয়াত আনিসুল হকের স্মরণে যা বললেন ব্যবসায়ীরা
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক ছিলেন সাহসী ও দৃঢ়চেতা কর্মময় মানুষ। ব্যবসা, রাজনীতি ও সামাজিক সব ক্ষেত্রেই সফল। শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া দুজনেরই প্রিয় ব্যক্তি ছিলেন তিনি। তার ভালো গুণগুলো ধারণ করেই তাকে স্মরণ করব আমরা।
মঙ্গলবার আনিসুল হকের কর্মময় জীবনের ওপর স্মরণ সভার আয়োজন করে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। এতে ব্যবসায়ীরা এসব কথা বলেন। সভায় প্রয়াত মেয়রের সহধর্মিণী রুবানা হক, বিজিএমইএর বতর্মান ও সাবেক সভাপতিসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক নেতারা বক্তব্য দেন।
বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত উন্নয়নবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, কীভাবে উন্নয়নযাত্রা অব্যাত রাখতে হয় তা বুঝিয়ে গেছেন আনিসুল হক। তিনি দেখিয়েছেন, কীভাবে ব্যবসয়ীরা ভালো রাজনীতিবিদ হতে পারে। তাই দেশের উন্নয়নে আনিসুল হকের আদর্শ ধারণ করে আরো অনেক আনিসুল হক তৈর করতে হবে।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, মানুষ মরে গেলে তার জন্য পাঠানো হয় দোয়া ও সদকায়ে জারিয়া। আমরা সবাই তার জন্য দোয়া করব।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, তার মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানের ব্যস্ততায়ও যখন একটা সমস্যা নিয়ে গেলাম, তিনি তার সমাধান দিয়েছিলেন। একটা লোকের বাসায় গেলে তিনি কীভাবে গ্রহণ করেন তা দিয়ে মানুষকে বিচার করা যায়। আমরা সবাই চেষ্টা করব আনিস ভাইয়ের ভালো গুণগুলো ধারণ করতে।
বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, তার হাসি এখনো আমাদের মনে পড়ে। এটা কখনো ভুলার নয়। তার বাসায় গেলে তিনি জড়িয়ে ধরে সম্ভাষণ জানাতেন।
সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ঢাকার উত্তরা এলাকার রাস্তা ও পরিবেশের এত উন্নয়ন হয়েছে যে সেখানে গেলে টের পাওয়া যায় উন্নয়নে কতটা ভূমিকা রেখেছিলেন আনিসুল।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান সিনহা বলেন, শুধু ব্যবসা নয়, সবক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন সফল। সে হিসেবে আমরা একজন শ্রেষ্ট সন্তানকে হারালাম। তার মুখে কখনও শুনি নাই কোনো কাজ অসম্ভব। সাহসী ও দৃঢ় লোক ছিলেন তিনি। ছিলেন কর্মময়।
আনিসুল হক রাজনৈতিক বিভাজনে বিশ্বাসী ছিলেন না, সব দলের লোকের সঙ্গে তার সখ্যতা ছিল উল্লেখ করেন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও এনভয় গ্রুপের চেয়ারম্যান কুতুব উদ্দিন আহমেদ।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনায়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, উনি যে কাজটা ধরতেন সেটা শেষ করতেন। এমন মানুষ জীবনে দেখিনি। ২০০৫ সালে যখন কোটা চলে গেল তখন বুঝতে পারিনি কীভাবে ব্যবসা হবে। কিন্তু আনিসুল সবাইকে বুঝিয়ে ছেড়েছেন যে ব্যবসা এখনো টিকে থাকবে। মাত্র ১৮ মাসের সময় তিনি মানুষের মন জয় করেছেন নিজের কাজ দিয়ে।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সালাম মুর্শিদী বলেন, আনিসুল হক ছিলেন একটা ইনস্টিটিউশন। কিন্তু তিনি যে এত অল্প সময়ের জন্য আসবেন বুঝতে পারিনি। তার কাজের কারণে মানুষ তাকে মনে রাখবে। নির্বাচনের সময় তিনি অনেক কথা বলেছেন। কিন্তু এসব কীভাবে বাস্তবায়ন হবে আমরা বুঝতে পারিনি। আনিস আজকে নেই। কিন্তু তার প্রতিশ্রুতিগুলো দৃশ্যমান।
স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক তপন চৌধুরী বলেন, আশির দশকের শেষ দিয়ে পরিচয় টিভিতে। একজন মানুষ কীভাবে এতো সুন্দর গুছিয়ে কথা বলতে পারে, অল্প সময়ের জীবনে অনেক কিছু করে গেছেন।
সহজেই মানুষকে আপন করে নিতেন আনিসুল মন্তব্য করে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, আমি আর আনিসুল হক নির্বাচনে দুই দল করি। একবার পোস্টারে ছেয়ে গেছে। তিনি বললেন- সব পোস্টার তো আপনাদের আমার পোস্টার কোথায় লাগাবো। আমি তখন তাকে বললাম আমার পোস্টারের ওপর লাগান।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এসএম ফজলুল হক বলেন, তার কর্মের মাধ্যমে তিনি আমাদের মাধ্যমে বেঁচে থাকবেন। তিনি এমনই একজন মানুষ যাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে পছন্দ করতেন খালেদা জিয়াও তাকে সেইভাবে পছন্দ করতেন। একজন মানুষকে দুইজন এভাবে পছন্দের নজির কম।
সভা শেষে মরহুম মেয়রের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল করা হয়।
এসআই/জেডএ/পিআর