নিরাপত্তাহীনতায় বিকাশ এজেন্টরা


প্রকাশিত: ০১:৫১ পিএম, ১০ জুলাই ২০১৫

সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারীদের বিশেষ টার্গেটে বিকাশ এজেন্টরা। রাজধানীর অলিগলিতে বিকাশ এজেন্ট বেড়ে যাওয়ায় ছিনতাইও অনেকটা সহজ হয়ে গেছে। কখন কোন এজেন্ট কোন এলাকা থেকে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন করছেন তা পর্যবেক্ষণ করে সুযোগ বুঝে ছিনতাই করছে সন্ত্রাসীরা। এবারের ঈদে এ আশংকা আরো বেশি বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে।
 
সম্প্রতি রাজধানীতে সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের ভয়ের মুখে, কখনো গুলি চালিয়ে ও চোরাগোপ্তা হামলার মধ্য দিয়ে বিকাশ এজেন্টদের কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটছে।
 
মামলার পর তদন্তে ছিনতাইকারীদের অনেকে ধরা পড়লেও অধিকাংশ ঘটনায় খোয়া যাওয়া টাকা উদ্ধার করতে পারে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসব কারণে বিকাশকর্মী বা এজেন্টরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
 
বিকাশ এজেন্টদের অভিযোগ, বিপদের সময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা খুব সহজে মেলে না। তাদের কাছে অভিযোগের প্রথম ২ থেকে ৪দিন তৎপরতা দেখালেও পরে এসব ঘটনার তদন্ত গতি হারায়। এ কারণে সমাধান পান না ভুক্তভোগীরা।
 
তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র বলছে, আগে ব্যাংক ডাকাতি ও ব্যাংকে ফিল্মি স্টাইলে ছিনতাই কিংবা ডাকাতির ঘটনা ঘটতো। অনেকে লেনদেনের সময় ছিনতাইকারী ও সন্ত্রাসীদের কবলে পড়ে মোটা অঙ্কের টাকা খোয়াতেন।
 
কিন্তু এখন ব্যাংকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার হওয়ায় এবং ব্যাংকের ভোক্তারা সচেতন হওয়ায় ব্যাংক ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা কমেছে। এর প্রভাব গিয়ে পড়েছে বিকাশ এজেন্টদের উপর।
 
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের দাবি, বিকাশকর্মীদের টাকা ছিনতাইয়ের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ছিনতাই প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানে পুলিশ। পোশাকের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দারও নজরদারি রয়েছে।
 
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৩ মার্চ ঢাকার অদূরে সাভারের গেণ্ডায় বিকাশকর্মী রাজিবের চোখে-মুখে মরিচের গুড়া ছুড়ে ব্যাগভর্তি ৫ লাখ ৩৬ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৪ জনকে গ্রেফতার করলেও পুলিশ টাকা উদ্ধার করতে পারেনি।
 
২৩ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার নেতার মাজারের সামনে দুই বিকাশ কর্মীকে গুলি করে সাড়ে ছয় লাখ টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।
 
৪ এপ্রিল রাজধানীর কদমতলী ও নিউমার্কেটে গুলি করে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ফালান মিয়া ও সানু নামে দুই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় সন্ত্রাসীরা।
 
১৩ এপ্রিল সবুজবাগ ও তুরাগে দুটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় দুই বিকাশকর্মীর কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।
 
পুরান ঢাকার নবাববাড়ি পুকুরপাড়ে গত ১৬ এপ্রিল বাদল মুন্সি নামে এক ফল ব্যবসায়ীকে গুলি করে ১৬ লাখ টাকা টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।
 
গত ৭ মে মোহাম্মদপুরে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের পশ্চিম পাশে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পরিমল কান্তি বিশ্বাসের পায়ে গুলি করে ৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।
 
২৫ মে মগবাজার বিশাল সেন্টারের পাশে অ্যাকুয়া ডিস্ট্রিবিউশন নামে বিদেশি মাল্টি লেবেল কোম্পানির হিসাবরক্ষক সেলিম আক্তারের পাঁজরে গুলি করে ৩৩ লাখ টাকা টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।
 
২২ জুন উত্তরায় বিকাশের দুইজনের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা ও ২৩ জুন তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ীতে বিকাশ ব্যবসায়ী কাজলকে গুলি করে ছয় লাখ টাকা ছিনতাই করে সন্ত্রাসীরা।
 
সর্বশেষ গত ৫ জুলাই বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উত্তরার ১১ নাম্বার সেক্টরে শাহীন (৩২) নামে এক বিকাশকর্মীকে গুলি করে ১১ লাখ টাকা ছিনতাই করে দুর্বৃত্তরা।
 
গত বছরেও পৃথকদিনে কমপক্ষে ২০টির বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনায় বিকাশ কর্মীদের টাকা খোয়া যায়। যা পরবর্তীতে মামলা ও তদন্তের পরও সব টাকা বুঝে যাননি বিকাশ এজেন্টরা।
 
এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ বিভাগের যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, ডিএমপি’র পক্ষ থেকে একাধিকবার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে কেউ মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন করতে গেলে যেন পুলিশের সহযোগিতা নেয়া হয়। কিন্তু অনেকেই তা কেয়ার করেন না।
 
তিনি বলেন, ছিনতাইকারীরা টাকা তিন দিনের বেশি নিজেদের কাছে রাখেন না। নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেওয়ার পর যে যার মতো খরচ করেন।
 
তদন্তে ছিনতাইকারীদের সনাক্ত ও গ্রেফতার করতেও সময় লাগে। এ কারণে মূলত ছিনতাই হওয়া টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয় না।
 
জেইউ/এসএইচএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।