চেতনাদীপ্ত ভালোবাসায় সিক্ত স্মৃতিসৌধ
হেমন্তের মিষ্টি রোদ তখন সবার ললাটে ললাটে। বেলা পশ্চিমে ঢলে পড়েছে প্রায়। উজান বেলায় যে ঢল নেমেছে, ভাটি বেলাতে যেন আরও তীব্র। গোটা স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ মহাসমাবেশে রূপ নিয়েছে মানুষে মানুষে মিলে। তিল ধরার ঠাঁই নেই এর আনাচে-কানাচেও। হৃদয়ের নিংড়ানো ভালোবাসার সবটুকু ঢেলে দিয়ে শহীদ স্মরণে সামিল হয়েছে।
বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের সূচনা করেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রদ্ধা জানান। এ সময় মন্ত্রী ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপুর্ণ ব্যক্তিরাও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী নিবেদন করার পর স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
সকাল থেকেই শুরু হয় সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের পালা। রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠনের পাশাপাশি ব্যক্তি বিশেষও শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসেনে এখানে। রাজধানী এবং ঢাকার আশপাশের জেলার মানুষজনও ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শহীদদের স্মরণে।
এদিন মানুষের সমস্ত স্রোত যেন মিলেছিল সাভারের জাতীয় সৌধে। এতে করে সাভার-গাবতলী মহাসড়কে তীব্র যানজটও দেখা যায়। বিভিন্ন দলের শীর্ষ ব্যক্তিদের স্বাগত জানাতেও নেতাকর্মীরা এ সড়কের দু’ধারে অবস্থান নেন। লাল-সবুজের পতাকা হাতে নিয়ে বিজয়ের বার্তাও বহন করেন অনেকে। লাল-সবুজের শাড়ি আর পাঞ্জাবিতেও চেতনা প্রকাশ করছিল কেউ কেউ। শিশুরাও আসে বিজয়ের স্লোগানে সামিল হতে।
রাজধানীর উত্তরা থেকে পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসেছে সুতপা রায়। বলেন, বহু বছর থেকেই পরিবারের সবাইকে নিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসি। এটি এখন আমাদের কাছে রুটিন।
তিনি বলেন, বিজয় দিবস শুধু উৎসবের বার্তাই বহন করে না, দেশের প্রতি দায়বদ্ধ হতেও শেখায়। সন্তানদের মধ্যেও যেন চেতনাবোধ সৃষ্টি হয়, তার জন্য ওদেরকেও সঙ্গে নিয়ে আসি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিন হল থেকে এসেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র রুবেল খান। বলেন, কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের ব্যানারে প্রভাবিত হয়ে এখানে আসিনি। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি, চেতনাবোধের জায়গা থেকে। আগের বছরেও এসেছি। সামনেও আসব।
এএসএস/বিএ/আরআইপি