নায়িকা নয়, অভিনেত্রী হতে এসেছি
চলচ্চিত্রাভিনেত্রী তমা মির্জা শাকিব খানের বিপরীতে এম বি মানিকের ‘বলো না তুমি আমার’ ছবি দিয়ে চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকশ করেন। তারপরে একাধিক ছবিতে ভালো অভিনয় করে পেয়েছেন প্রশংসা। সেই প্রশংসা যোগ্যতা হলো অনন্ত হীরা পরিচালিত ‘ও আমার দেশের মাটি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে। সবাই তখন বাণিজ্যিক ও বিকল্প ধারার দুই মাধ্যমেই সফল তমা মির্জার মাঝে দর্শকনন্দিত শাবনূরের ছায়া খুঁজে পেয়েছিলেন। শাবনূর তিনি হতে পারবেন কি না সেটা সময়ই বলে দিবে। এই তরুণীর নতুন খবর হলো ঈদে স্টার সিনেপ্লেক্সসহ বেশ কিছু হলে মুক্তি পাচ্ছে তার নতুন ছবি নদীজন। ছবিটি সম্পর্কে জানতে জাগো নিউজ মুখোমুখি হয়েছিলো তমার। আলাপের ছলে তিনি জানালেন তার সাম্প্রতিক ভাবনা-ব্যস্ততা ও নদীজনের গল্প। সঙ্গে ছিলেন লিমন আহমেদ
জাগো নিউজ : কেমন আছেন?
তমা মির্জা : এই আছি ভালো। ১১ তারিখ থেকে শুটিং শুরু, এই ফাঁকে বিশ্রাম নিয়ে নিচ্ছি।
জাগো নিউজ : কিসের শুটিং?
তমা মির্জা : ‘গ্রাস’ নামের একটি টেলিছবির। মারিয়া তুষারের রচনা ও পরিচালনায় এটির শুটিং হবে রাজধানীর উত্তরাসহ ঢাকার অন্যান্য লোকেশনে। টেলিছবিটি চ্যানেল আইতে প্রচার হবে।
জাগো নিউজ : তবে কী বড় পর্দা ছেড়ে ছোট পর্দাতেই থিতু হচ্ছেন?
তমা মির্জা : ব্যাপারটা সেরকম নয়। আমি অভিনয় করতেই মিডিয়ায় নাম লিখিয়েছি। তা সে যেখানেই হোক। আমার কাছে পর্দার কোনো বড়-ছোট নেই। এ মুহূর্তে হাতে তেমন কোনো ছবির ব্যস্ততা নেই, তাই টিভির জন্য সময় দিচ্ছি। আবার যখন চলচ্চিত্রে ব্যস্ত হবো তখন টিভির অভিনয় মিস করবো।
জাগো নিউজ : তার মানে বুঝাই যাচ্ছে এবারের ঈদে টিভিতে আপনার দেখা ভালোই মিলবে?
তমা মির্জা : হুম, সেটা বলাই যেতে পারে। বিশেষ করে সম্প্রতি মমতাজ মেহেদির বিজ্ঞাপন করলাম। এটি ঈদের আগে থেকেই টিভিতে নিয়মিত প্রচার হবে। এছাড়াও চার-পাঁচটি চ্যানেলে নাচের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি। পাশাপাশি বিভন্ন ধরনের ম্যাগাজিন, টক শোতেও উপাস্থিত থাকবো। আর চ্যানেল আইয়ের টেলিছবি ‘গ্রাস’ তো থাকছেই।
জাগো নিউজ : আপনার কী মনে হয় না চলচ্চিত্রে আপনার ক্যারিয়ারটা আরো ভালো হতে পারতো?
তমা মির্জা : আমার ক্যারিয়ার তো খারাপ নেই! আমি আমার ক্যারিয়ার নিয়ে সন্তুষ্ঠ। ‘বলো না তুমি আমার’ ছবি দিয়ে শুরু করার পর এ পর্যন্ত প্রায় ১৩টি ছবিতে কাজ করেছি। সবগুলোতেই প্রশংসা পেয়েছি। সামনে আরো ভালো কিছু ছবির প্রস্তাব আছে। দুই একদিনের মধ্যেই সেগুলো কনফার্ম হলে জানাবো আমি।
জাগো নিউজ : কিন্ত সবাই তো বলাবলি করছে বিকল্পধারার ছবি করতে গিয়ে হারিয়ে যাচ্ছেন তমা মির্জা। এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?
তমা মির্জা : কে কী বললো তাতে আমার কী যায় আসে! একটা ইন্ড্রাষ্ট্রিতে মেয়েদের নিয়ে অনেক কথাই চাউর হয়। এর জন্য কারো মুখে ধরে রাখা সম্ভব না। আর আমি সেটা চাইও না। আমি নিজে জানি আমি কোথায় যেতে চাই, কীভাবে যেতে চাই। প্রধানত, নায়িকা হতে আমি আসিনি। আমার মূল লক্ষ্য একজন অভিনেত্রী হওয়া। তাই আমি একটু ভিন্ন ধরণের কাজ করতে পছন্দ করি। বাণিজ্যিক ছবির নামে ধুম ধাড়াক্কা নাচা-গানা, নায়ক-নায়িকার সেই সুপ্রাচীন প্রেম-বিরহ, গল্পের জগাখিচুরি-সবাই দেখতে চান না। এই ছবিগুলো আমি করি সময়ের তাগিদে।
কিন্তু একজন অভিনেত্রী হিসেবে ভিন্নধর্মী চরিত্রই আমাকে বেশি টানে। বিশেষ করে গল্প প্রধান ছবি, যেখানে অভিনয়ের সুযোগ আছে, মানুষের জীবনের বাস্তবতা আছে-সেইসব ছবিগুলোতে কাজ করতে আমার পছন্দ। এই কাজগুলো ব্যক্তিগতভাবে আমাকে সন্তুষ্ঠ করে, চলচ্চিত্রবোদ্ধাদের মুগ্ধ করে। পাশাপাশি রুচিশীল দর্শকদেরও হলে টানে। আমার বিশ্বাস, নাচ-গানের গল্পহীন ছবিগুলোতে অভিনয়ে কিছু নেই। ওখানে অভিনয় ভালো জানলেও পার পাওয়া যায়। কিন্তু আগুনের পরশমনি, দুই দুয়ারী, দেবদাস, হাজার বছর ধরে, পদ্মা নদীর মাঝি কিংবা ও আমার দেশের মাটি ছবিগুলোতে অভিনয় করতে গেলে অভিনয়টাই মূল পুঁজি। এখানে নিজেকে প্রমাণ করতে হয়।
জাগো নিউজ : তবুও একজন আলোচিত শিল্পী হিসেবে আপনি তো অনিয়মিত হয়ে গেছেন। এটা তো নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে?
তমা মির্জা : হ্যাঁ, এটা ঠিক আমি গেল বছরে খুব বেশি কাজ করিনি। এর মূল কারণ আমার পড়াশোনা। আমি মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে এলএলবিতে পড়ছি। এবারেই শেষ হবে। আশা করছি চলতি বছরের শেষদিকেই আমি আবার অভিনয়ে নিয়মিত হতে পারবো। এটা খুব বেশি নেতিবাচক হবে বলে মনে হয় না। কারণ প্রতিনিয়ত ছবির প্রস্তাব পাচ্ছি। কিছুদিনের মধ্যেই নতুন ছবি হাতে নিব। আবারো সেই ব্যস্ততার দিন ফিরে আসবে।
জাগো নিউজ : আসছে ঈদে আপনার একটি নতুন ছবি মুক্তি পাচ্ছে। সে বিষয়ে কিছু বলুন?
তমা মির্জা : হ্যাঁ, প্রথমে শুনেছিলাম ইমপ্রেস প্রযোজিত ‘নদীজন’ নামের ছবিটি চ্যানেল আইতে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হবে। পরে জেনেছি স্টার সিনেপ্লেক্সসহ বেশ কিছু প্রেক্ষাগৃহেও মুক্তি পাবে ছবিটি। শুনে ভালো লেগেছে। শাহনেওয়াজ কাকলী পরিচালিত ‘নদীজন’ ছবিটির গল্প খুব চমৎকার। এ ছবিতে কাজ করে আমি আনন্দিত। একদম ব্যতিক্রমী চরিত্রে কাজ করেছি এখানে। ছবিতে নদীর পাড়ের নানা পেশাজীবীদের জীবন যাপনের বাস্তবচিত্র নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এতে আমার চরিত্রের নাম ছায়া। আমার স্বামী চরিত্রে কাজ করেছে জনপ্রিয় চিত্রনায়ক নীরব। এছাড়াও দারুণ অভিনয় করেছেন প্রাণ রায় ও শর্মীমালা। আশা করছি ছবিটি বেশ উপভোগ করবেন।
জাগো নিউজ : ঈদ কোথায় করবেন?
তমা মির্জা : ঢাকাতেই। এখানে পরিবারের সবাই থাকবে। তাদের সাথে হৈ চৈ করে কাটিয়ে দিব ঈদের আনন্দে ভরপুর দিনগুলো।
জাগো নিউজ : আপনাকে ধন্যবাদ। সেইসাথে আপনার নতুন ছবির জন্য শুভকামনা রইল
তমা মির্জা : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। জাগো নিউজের পাঠকদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি নদীজন ছবিটি দেখার জন্য। সবার দিনগুলো ভালো কাটুক ঈদের খুশিতে। ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছা।
এলএ