পোশাক কারখানা সংস্কারে ৫০ মিলিয়ন ডলার দেবে অ্যালায়েন্স


প্রকাশিত: ১২:৪১ পিএম, ০৮ জুলাই ২০১৫

বাংলাদেশের পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ নিরাপদ করতে ও সংস্কারে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সরবরাহ করবে উত্তর আমেরিকার ক্রেতা জোট দি অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স সেফটি (অ্যালায়েন্স)। বুধবার বিজিএমইএ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এর আগে গত সপ্তাহে অ্যালায়েন্সের সঙ্গে বৈঠক করে বিজিএমইএ।

বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, সরবরাহকারী পোশাক কারখানাগুলোকে সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে অ্যালায়েন্স প্রথমবারের মতো ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি করেছে। এই উদ্যোগের আওতায় আইএফসি বাংলাদেশের ৫টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রত্যেকটিকে ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার করে সর্বমোট ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সরবরাহ করবে যাতে করে উদ্যোক্তারা কারখানার প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সংস্কার কার্যক্রমের জন্য সহজেই ঋণ পেতে পারেন। বাংলাদেশ আরএমজি সেফ সেফটি রেমিডিয়েশন ফিন্যান্সিং প্রোগ্রাম শীর্ষক এই ঋণ সুবিধা থেকে পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা সহনীয় সুদে ঋণ গ্রহণ করে ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যে তা পরিশোধ করার সুযোগ পাবেন।

উল্লেখ্য যে, এতে করে উদ্যোক্তাদের আর্থিক ব্যয় ও ঝুঁকি উভয়ই উল্লেখযোগ্য হারে কমবে। এদিকে অ্যালায়েন্স এমন এক সময়ে এ অর্থ দেয়ার জন্য চুক্তি করলো, যখন পোশাক শিল্প উদ্যোক্তাসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে সমালোচনা শুরু হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এমন কি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সম্প্রতি অ্যালায়েন্সকে ‘গলার কাঁটা’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। তবে দীর্ঘ অপেক্ষার পর অ্যালায়েন্সের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে বিজিএমইএ।

তাজরীন ফ্যাশনস ও রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর দেশের পোশাক শিল্পের কর্মপরিবেশ নিয়ে দেশে-বিদেশি ব্যপক সমালোচনা শুরু হয়। এ থেকে বাদ যায়নি ক্রেতারাও। অভিযোগ ওঠে কম দামে পোশাক কেনার জন্য ক্রেতারা কারখানা মালিকদের কর্মপরিবেশ নিরাপদ করতে চাপ দেন না।

এই প্রেক্ষাপটে উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের নিয়ে গঠিত হয় দি অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স সেফটি (অ্যালায়েন্স)। অ্যালায়েন্স মূলত দেশের পোশাক কারখানার ত্রুটি চিহ্নিত করে তা সংস্কারে কারখানা মালিকদের সহায়তা করার জন্যই গঠিত হয়। তবে পরের দিকে এই সংগঠন কারখানার ত্রুটি চিহ্নিত করলেও কোনো ধরণের আর্থিক সহায়তা করা থেকে বিরত থাকে। ফলে প্রথম দিকে অ্যালায়েন্সকে স্বাগত জানালেও তাদের কর্মকাণ্ডে পোশাক শিল্প মালিকরা সমালোচনা মুখর হয়ে ওঠেন।

তাদের অভিযোগ ছিলো, অ্যালায়েন্স প্রতিটি কারখানা পরিদর্শন করে সংস্কারের জন্য বলছে। তাদের শর্ত মেনে একটি মাঝারি মানের কারখানা সংস্কার করতে ৫ থেকে ২০ কোটি টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে। যার পুরোটাই কারখানা মালিককে বহন করতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে এই ব্যয়ভার বহন করতে না পেরে বেশ কিছু কারখানা বন্ধ হয়েছে।

শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, কারখানা সংস্কারে ব্যয় বাড়লেও ক্রেতারা পোশাকের দাম বাড়ায়নি। এমনকি পরিদর্শনের পর অ্যালায়েন্স বিদেশি ক্রেতাদের কারখানায় কার্যাদেশ দিতে বারণ করে। ফলে পোশাক শিল্প গভীর সংকটে পড়ে। যা থেকে উদ্ধারে এই শিল্প সংশ্লিষ্টরা নানাভাবে কাজ করছিলেন।

তৈরি পোশাকখাতে নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টিতে বহুল আকাঙ্ক্ষিত ও সময়োচিত অর্থায়নের এই উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বিজিএমইএ সভাপতি মো. আতিকুল ইসলাম অ্যালায়েন্স’কে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই উদ্যোগটি একদিকে যেমন পোশাক কারখানার উদ্যোক্তাদেরকে সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহায়তা করবে, অন্যদিকে এতে করে এ খাতের লাখো লাখো শ্রমিক উপকৃত হবে। অ্যালায়েন্সের প্রধান এলেন টশারের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ক্রেতা ও সরবরাহকারী কারখানাগুলো একসঙ্গে কাজ করে পোশাক শিল্পে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে পারে।

এসআই/এসএইচএস/আরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।