আইসিডিডিআরবির সিওও’র দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ: আন্দোলন স্থগিত


প্রকাশিত: ০৬:১৮ পিএম, ০৭ জুলাই ২০১৫

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) এর কর্মী মঙ্গল সংঘ প্রতিষ্ঠানটির মুখ্য পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) ইনগ্রিড রিনাউডের অনিয়ম ও দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে।

মঙ্গলবার সাসাকাওয়া অডিটরিয়ামে কর্মী মঙ্গল সংঘের শত শত সদস্যের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হয়।

এ সময় সদস্যরা সমস্বরে চিৎকার করে দুয়ো ধ্বনি তুলে দুর্নীতিবাজ সিওও’র বিদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পুনঃসংকল্প ব্যক্ত করেন। পরে সভায় সর্বসম্মতিক্রমে ঈদের পর পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করা হয়।

কর্মী মঙ্গল সংঘের সাধারণ সম্পাদক ড. ফিরোজ আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, কৌশলগত কারণে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। সিওও-কে অপসারণ, ব্র্যাকের সাথে চুক্তি বাতিল ও জার্নাল বিক্রির বিষয়ে সংঘের দাবি পূরণে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে আইসিডিডিআরবির ব্যবস্থাপনা বোর্ড সদস্যদের কিছুদিন সময় দেয়া হয়েছে।

এ সময়ের মধ্যে সিওও-কে অপসারণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত না নেয়া হলে ঈদের পর বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে তিনি জানান।

তিনি অভিযোগ করেন, বর্তমান সিওও-কে অসাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দিয়েছে ট্রাস্টি বোর্ড। অর্ডিন্যান্সকে পাশ কাটিয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত এই সিওও অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের বিপুল আর্থিক ক্ষতি করেছেন। তার মদদে দুর্নীতিবাজরা আইসিডিডিআরবির সুনামকে কাজে লাগিয়ে বিপুল অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করেছে।

সোমবার শ্বেতপত্র ঘোষণার কথা থাকলেও ব্যবস্থাপনা বোর্ডের সাথে রোববারের বৈঠকের মিটিং মাইনিউটসের কাগজপত্র হাতে না পাওয়ায় শ্বেতপত্র প্রকাশে একদিন দেরি হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

শ্বেতপত্রে যা বলা হয়েছে.
আইসিডিডিআরবিতে অবৈজ্ঞানিক চারটি - (ডিরেক্টর হিউম্যান রিসোর্স, ডিরেক্টর ফিন্যান্স, কমিউনিকেশন লিড ও ডিরেক্টর ট্রান্সফরমেশন) পদে জনবল নিয়োগ দিতে এই সিওও আয়ারল্যান্ডের এসআরআই এক্সিকিউটিভ নামে একটি কোম্পানিকে নিযুক্তি দেয়। প্রতিটি পদের যোগ্য লোক খুঁজে দেওয়ার নামে আইসিডিডিআর,বি’র ফান্ড থেকে ২২হাজার ডলার জনপ্রতি হিসেবে ৮৮ হাজার ডলার পরিশোধ করা হয়। বিপুল অঙ্কের অর্থ খরচ করে যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে তাদের চেয়ে উপযুক্ত কর্মকর্তা মাত্র ২/১ হাজার ডলার খরচ করে নিয়োগ করা সম্ভব হতো বলে দাবি কর্মী মঙ্গল সংঘের।

হাজার হাজার ডলার খরচ করে দু’জন ডিরেক্টর ফিন্যান্স ড. সিমবা ও ড. ডাউবে এবং ট্রান্সফরমেশন লিড পদে গেভিন নামে একজনসহ মোট তিন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হলেও সিওও’র সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় তাদেরকে কয়েকমাসের ব্যবধানে চাকরিচ্যুত করা হয়। তাদের বেতনভাতা ও অন্যান্য সুযোগসুবিধার পেছনে বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ হয়। যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সিওও প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে আইটির সিনিয়র ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হককে চাকরিচ্যুত করে। চাকরিচ্যুতির আগে তাকে স্টেপ ইনক্রিজ (পারফরমেন্সে সন্তুষ্ট হয়ে শতকরা ২ দশমিক ৯ ভাগ বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ) করা হলেও পরবর্তীতে ফ্লুইড দিয়ে মুছে স্টেপ ইনক্রিজ বাতিল করে চাকরিচ্যুতি করা হয়।

ফ্যাসিলিটিজ ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টে মিজানুর রহমান নামের একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। সরকারি তদন্তে ১৫ কোটি টাকার দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ থাকা সত্বেও যার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে সাজানো পুনঃতদন্তের নামে তাকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলেও সিওও নিয়মনীতি ভঙ্গ করে ১২লাখ টাকা পরিশোধ করেন।

হারুন ইঞ্জিনিয়ারিং নামে একটি কোম্পানিকে আইসিডিডিআরবি-কে কেন্দ্রীয়ভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই কোম্পানি ৫ হাজার ডলারের এয়ারকন্ডিশন ও অন্যান্য খুচরা যন্ত্রপাতি আনার নামে ১ লাখ ডলারের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নিয়ে আসে। আইসিডিডিআরবির সব মালামাল ভ্যাট ও ট্যাক্সের আওতামুক্ত থাকার সুবিধা নিয়ে কোম্পানিটি এ কুকর্ম করে। চট্টগ্রাম কাস্টমস্ বিষয়টি জেনে মালামাল আটকে দেয়।

এছাড়াও সিওও কর্মী মঙ্গল সংঘের সভাপতি ড. আজহারুল ইসলামের সাথে অশোভন আচরণ করেন। সিওও নিজেও বেতনভাতা ছাড়াও অনিয়ম করে বাড়িভাড়া ও গাড়ির খরচ বাবদ প্রতিমাসে প্রায় তিন লাখ টাকা নিচ্ছেন।

ম্যানেজমেন্ট বোর্ড যা মেনে নিয়েছে.
কর্মী মঙ্গল সংঘের সাথে ম্যানেজমেন্ট বোর্ডের কর্মকর্তাদের বৈঠকে শতকরা ৬দশমিক ২ ভাগ বেতন বৃদ্ধি, ঈদ-উল আজহা থেকে বোনাস প্রদান, ক্যান্টিনে ভাত, ডাল ও সব্জিতে শতকরা ২৫ ভাগ সাবসিডি, ডিমের দাম ১০ টাকা করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। গরু, খাসি, মুরগি ও মাছের দাম নেতাদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নির্ধারণ করা হবে। যানবাহনের ভাড়া ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে কমিয়ে ৬৫০ টাকা করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। ব্র্যাককে বছরে এক টাকা ভাড়ায় ৪০ হাজার বর্গফুটের ফ্লোর ছেড়ে দেওয়া ও জার্নাল বিক্রির বিষয়ে আরও আলোচনার সিদ্ধান্তও হয়।

এমইউ/এসআরজে

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।