এত সাধাসাধির কিছু নেই : প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৪:২২ পিএম, ০৭ ডিসেম্বর ২০১৭

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি আসবে না, সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। সাধাসাধির কিছু নেই। তবে বিএনপি নাকে খত দিয়ে এবারের নির্বাচনে আসবে।

তিনদিনের কম্বোডিয়া সফর শেষে ঢাকায় ফিরে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে বিকেল ৪টায় এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিশ্বাস করে না, তারা নির্বাচনে আসবে না। এক্ষেত্রে কিছু করার নেই। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচনে আসা প্রত্যেক দলের কর্তব্য। জনগণ যাতে পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে পারে, সেটা নিশ্চিত করা হবে। কারণ এটা আমার নিজের স্লোগান যে ‘আমার ভোট আমি দেবো যারে খুশি তারে দেব’। যারা জনগণের কল্যাণ চায়, তারাই নির্বাচিত হয়ে সংসদে আসুক। খুনি, সন্ত্রাসী যুদ্ধাপরাধীরা যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে।

আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ ও আলোচনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত ছোটলোকিপনা যারা করে তাদের সঙ্গে কিসের আলোচনা? আলোচনা তো করতেই গিয়ে ছিলাম। কিন্তু টেলিফোন করে যে ঝাড়ি খেয়েছি তাতে তাদের সঙ্গে আলোচনা করার আর কোনো ইচ্ছে নেই। এ ছাড়া যারা পার্লামেন্টে অসভ্য আচারণ করে, অশ্লীল নোংরা কথা বলে তাদের সঙ্গে কীসের আলোচনা?

শেখ হাসিনা বলেন, আর অপমানিত হওয়ার ইচ্ছে নেই। খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে মারা গেলে তাকে সান্ত্বনা দেয়া, সহানুভূতি জানানো ও সহমর্মিতা জানানোর জন্য গিয়েছিলাম। একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও আমি যেতে পারি। কিন্তু উনি গেট বন্ধ করে দিলেন। শেখ হাসিনা পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, এভাবে অপমান করা কি আলোচনার লক্ষণ? সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে কি বরণডালা নিয়ে নিয়ে বরণ করতে হবে নাকি?

 

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে বলেছেন, তিনি আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন’ সিনিয়র সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুলের করা প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমা নাকি তিনি করে দিয়েছেন। তিনি কিসের ক্ষমা করলেন এটা আমারও প্রশ্ন। ২১ আগস্ট যে আমাকে হত্যার জন্য ষড়যন্ত্র করেছিল, গ্রেনেড মেরেছিল, আমি বেঁচে গিয়েছি। সেসবের জন্য ক্ষমার কথা বলছেন? তিনি ক্ষমা করেছেন না চাচ্ছেন তা স্পষ্ট না। কারণ তার কাছে ক্ষমাটা চাইবে কে? আমি এমন কী অপরাধ করেছি যে ক্ষমা চাইব? বরং তিনি যা করেছেন সেজন্য তার উচিত দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়া।

তিনি বলেন, ২১ আগস্ট, ১৫ আগস্ট, আহসানউল্লাহ মাস্টার এমপি, এএসএম কিবরিয়া, হত্যার পর আমাদের পার্লামেন্টে আলোচনার সুযোগ পর্যন্ত করতে দেয়া হয়নি। এটা নিশ্চয় আপনাদের ভালো মনে থাকার কথা। এসবের পর তিনি আমাকে ক্ষমা করবেন? তাদের একেকটা বক্তব্য আসে আর একেকটা ঘটনা ঘটে। কখনো বলেন, আরেকটা ১৫ আগস্ট হবে। কখনো বলে প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা জীবনেও বিরোধীদলীয় নেতাও হতে পারব না। তাদের কোটালীপাড়ায় ৭৬ কেজি বোমা পুঁতে রাখা, ঘটনাগুলো চিন্তা করেন সব ঘটনার মিল আছে।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিচারাধীন মামলা সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকার তো সেরকম মামলা দেয়নি। বরং আমার বিরুদ্ধে তার সরকারের আমলে এক ডজনের ওপর মামলা দিয়েছেল। শুধু আমি নই, আমার অনেক নেতাই তার আমলের মামলার আসামি।

তিনি ৯ জনকে ডিঙিয়ে মইনুদ্দিনকে সেনা প্রধান বানিয়েছিলেন। বিশ্বব্যাংকে চাকরি করছিল ফখরুদ্দিন। তাকে নিয়ে এসে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বানালেন। ইয়াজউদ্দিন তো ওনারই ইয়েস উদ্দিন ছিলেন। সবাই কিন্তু ওনার নিজের লোক। তারাই ছিল ক্ষমতায়। তাদের আমলেই করা মামলা। সেই মামলা থেকে পলায়ন মনোবৃত্তি। ১৫০ বার শুধু মামলা স্ট্রে করতে রিট করেছেন। তিনি কোর্টে গেলেই তাণ্ডব হচ্ছে।

কোর্টে গেলেই তারা গোলমাল করছে। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শমী বিশ্বাসের গাড়িতে আগুন দিল। সেখানে মানুষ মারলেন। পুলিশের মোটরসাইকেলে আগুন দিলেন। তিনি যেখানেই যান সেখানে অঘটন ঘটান। ২০১৪ ও ২০১৫ সালের কথা স্মরণ করে দেখেন, কীভাবে তারা পুড়িয়ে মানুষ মেরেছে। কোরআন শরিফ পোড়ানো পর্যন্ত তারা বাদ রাখেনি। ক্ষমা তো তারই জাতির কাছে চাওয়া উচিত। সেটাই হলো বড় কথা।

সংবাদ সম্মেলনে অপর প্রশ্নে মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, বিদেশি টেলিভিশনগুলোতে খবর প্রচারিত হয়েছে, সৌদি আরবে কোটি কোটি বিলিয়ন ডলারের অর্থ পাচারের ঘটনা আমাদের অঞ্চলের দুজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নাম এসেছে। পাকিস্তানের নওয়াজ শরিফ ও আমাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরির নাম এসেছে। আপনার সরকার এ ব্যাপারে তদন্ত করবে কি না ?

জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, সৌদি আরবে সম্পত্তি পাচার ও বিশাল শপিং মলের খবর বিদেশি টেলিভিশনে প্রচার হয়েছে। কিন্তু আমি তো দেশীয় কোনো টিভিতে এ ব্যাপারে কোনো সংবাদ পেলাম না। রহস্যটা কী? আপনারা কি সৌদি আরবের সেই মার্কেট শপিংমলে বিনা পয়সায় শপিং করার কার্ড পেয়েছেন যে নিউজটার দিকে কেউ গেলেন না? এসব খবর যদি আমার বা আমার পরিবারের ব্যাপারে হতো তবে তো আপনারা হুমরি খেয়ে পড়তেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অপরাধ কী? আমরা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি। আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। আর খালেদা জিয়া সব কিছুতে মাফ পায় কেন? জিয়ার রহমান ও খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধুর খুনীদের এমপি মন্ত্রী বানিয়েছেন। সেজন্য কি সাত খুন মাফ? ২টা টিভি ও ২টা পত্রিকা ছাড়া কোনো পত্রিকা টিভি উচ্চবাচ্য করলো না কেন? এতো দুর্বলতা কিসের জন্য? খালেদা জিয়ার ছেলেরা যে মানি লন্ডারিং করেছে সে খবর তো আমরা দেইনি। এসব তো বিদেশি গণমাধ্যম দিয়েছে। দেশের বেশির ভাগ পত্রিকা ও টিভি কিন্তু আমিই অনুমোদন দিয়েছি। প্রাইভেট চ্যানেল ছিল না। শুধু বিটিভি ছিল। কোনো সরকার সাহস পায়নি। আমিই ৪৪টি পত্রিকার অনুমোদন দিয়েছি। ২৩টি চ্যানেল তো চলছে। হয়তো মালিকরা জানে কীভাবে গণমাধ্যমের মুখ বন্ধ করতে হয়, সবার মুখে বোধয় সেই রকম কোনো রসগোল্লা খাইয়ে দিয়েছেন যে জন্য মুখ বন্ধ করে রেখেছেন।

এফএইচএস/এএসএস/জেইউ/জেডএ/বিএ

বিএনপি নাকে খত দিয়ে এবারের নির্বাচনে আসবে। এত ছোটলোকিপনা যারা করে তাদের সঙ্গে কিসের আলোচনা? আলোচনা তো করতেই গিয়ে ছিলাম। কিন্তু টেলিফোন করে যে ঝাড়ি খেয়েছি তাতে তাদের সঙ্গে আলোচনা করার আর কোনো ইচ্ছে নেই। আর অপমানিত হওয়ার ইচ্ছে নেই।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।