তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে...
‘প্রিয় আনিসুল হক, তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে...। আপনি না থাকলেও আপনার নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ আমরা ভুলবো না। যে সুন্দর নগর উপহার দিতে চেয়েছিলেন, সেই নগরের প্রতিটি প্রান্তেই আপনাকে খুঁজবো।’
এই কথাগুলো লেখা আছে সদ্য প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের বনানীর ২৩ নম্বর রোডের বাসার সামনে তার স্মরণে খোলা শোক বইয়ে। লিখেছেন ফয়সাল খান নামের এক নগরবাসী। প্রিয় মেয়রকে নিয়ে এমন আরো অনেক অনুভূতি ব্যক্ত করছেন সবাই, লিখছেন মনের কথা।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়রকে হারিয়ে তার বাসার সামনে শোকার্ত মানুষের ঢল ছিলো শনিবার। রোববারও তার বাসার সামনে মানুষ ভিড় করছেন। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকছেন, আবার কেউ কেউ জটলা হয়ে মেয়রের নানা কাজের স্মৃতিচারণ করছেন। কেউবা শোক বইয়ে লিখছেন প্রিয় মেয়রকে নিয়ে আবেক, ভালোবাসা ও স্মৃতিকথা।
আলাপকালে ওই ফয়সাল খান বলেন, একজন আনিসুল হক। স্বপ্ন, ভালোবাসা, আবেগ, বিশ্বাস আর আস্থার জোরেই ‘প্রিয় আনিসুল হক’ হয়ে উঠেছিলেন। এই মানুষটিকে হারিয়ে যেমন কাঁদছে স্বজনরা তেমনি কাঁদছে তার ঢাকাবাসীও। বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যেমে তিনি এক অন্যরকম ঢাকা গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। বিভিন্ন প্রোগ্রামে তার সঙ্গে থাকার সৌভাগ্য হয়েছে। এই প্রিয় মানুষটির চলে যাওয়া মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। তাই তার স্মৃতির টানে উনার বাসার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছি।
বাসার সামনে রাখা শোক বইয়ে রুহুল আমিন নামে একজন লিখেছেন, ভালো মানুষ চিরদিন মানুষের অন্তরে বেঁচে থাকে, আপনিও (আনিসুল হক) বেঁচে থাকবেন। আরেকজন লিখেছেন, বাংলাদেশ একজন দেশপ্রেমিক হারালো, আপনার উন্নয়নের কথা ঢাকাবাসী কোনোদিন ভুলবে না.....।
বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আনিসুল হককে নিয়ে স্মৃতিচারণ করছিলেন তাকে ভালোবাসে এমন সাধারণ মানুষরা। তাদের মধ্যে একজন হাসিবুর রহমান।
তিনি বলেন, আমি বিভিন্ন কাজে বিভিন্ন সময় নগর ভবনে যেতাম। মেয়র হওয়া সত্ত্বেও আনিসুল ভাই ছিলেন সাধারণ মানুষের মতো মিশুক, নির্লোভ, নির্মোহ। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন সমস্যায় দিনে-রাতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নাগরবাসীর আস্থাভাজন হয়েছিলেন তিনি।
এলাকাবাসীর বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ডিএনসিসি কার্যালয়ে অনেকবার মেয়রের কাছে গেছেন বনানীর বাসিন্দা জাকির হোসেন। তিনিও আজ স্মৃতির টানে মেয়রের বাসার সামনে দাঁড়ানো।
জাকির হোসেন বলেন, একজন আনিসুল হক, কিন্তু স্বপ্ন ছিল অনেক। বিভিন্ন সময় নানা পদক্ষেপে নাগরিকমহলে বারবার বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছেন তিনি।
‘আমরা ঢাকা’ শিরোনাম দিয়ে পরিচ্ছন্ন, সবুজ, আলোকিত ও মানবিক ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতি দেন মেয়র আনিসুল হক। ‘সমস্যা চিহ্নিত, এবার সমাধানযাত্রা’ স্লোগান দিয়ে নিরাপদ স্বাস্থ্যকর ঢাকা, সচল ঢাকা, মানবিক উন্নয়নের ঢাকা, স্মার্ট ও ডিজিটাল ঢাকা, অংশগগ্রহণমূলক ও সুশাসিত ঢাকা গড়ার প্রত্যয় ছিল তার। তিনি মশামুক্ত, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিকীকরণ, স্মার্টকার্ড প্রদান, ফরমালিনমুক্ত ও নিরাপদ বাজারব্যবস্থা গড়ে তোলা, ফুটপাত দখলমুক্ত করা, মাদক ও সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ, সড়কগুলোকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার পরিকল্পনায় সাধারণ নাগরিকদের ভালোবাসা ও সমর্থন পেয়েছেন সবসময়।
মেয়র হিসেবে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তার মোড় থেকে ট্রাক স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করে রাস্তা নির্মাণ, গাবতলীতে ট্রাক স্ট্যান্ড সরিয়ে রাস্তা সংস্কার, গুলশান-বনানী এলাকা থেকে পুরনো বাস সরিয়ে ‘ঢাকা চাকা’ নামের নতুন এসি বাস সার্ভিস চালু, সবুজ ঢাকা’ নামের বিশেষ সবুজায়ন কর্মসূচি গ্রহণ করে নগরবাসীর কাছে বিশেষ প্রশংসিত হন মেয়র আনিসুল হক।
উল্লেখ, গত ২৯ জুলাই ব্যক্তিগত সফরে আনিসুল হক সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ১৩ আগস্ট তাকে লন্ডনের ন্যাশনাল নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার মস্তিষ্কে প্রদাহজনিত রোগ ‘সেরিব্রাল ভাস্কুলাইটিস’ শনাক্ত করেন চিকিৎসকরা। এরপর তাকে দীর্ঘদিন আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। একপর্যায়ে তার শারীরিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় ৩১ আগস্ট আইসিইউ থেকে রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে স্থানান্তর করা হয়। পরে তাকে ওয়েলিংটন হাসপাতালে আনা হয়। গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ২৩ মিনিটে লন্ডনের দ্য ওয়েলিংটন হাসপাতালে তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।
এএস/জেডএ/আরআইপি