যে কারণে পুঁজিবাজারে নিরুৎসাহিত বিদেশি কোম্পানি
বিদেশি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করছে খোদ প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা তুলে নেয়ায় এমনটি হবে। সূত্র বলছে, বাধ্যবাধকতা সত্ত্বেও পুঁজিবাজারে আসতে চায়নি বিদেশি কোম্পানিগুলো। সেখানে আইনি মুক্তির বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে। শতভাগ বিদেশি ও দেশি-বিদেশি যৌথ মালিকানার কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দিয়ে এক নির্দেশনা দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
এর আগে ২০১০ সালে বিএসইসি পুঁজিবাজারে বিদেশি কোম্পানির তালিকাভুক্তির বাধ্যবাধকতা সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করেছিল। এতে বলা হয়, কোনো কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৪০ কোটি টাকা বা তার বেশি হলে ওই কোম্পানিকে অবশ্যই পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত হতে হবে। আর কোনো কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা বা তার বেশি হলে এবং ওই কোম্পানি তিন বছর বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করলে সেই কোম্পানিকে অবশ্যই শেয়ারবাজারে আসতে হবে।
কিন্তু সম্প্রতি বিএসইসি ওই নির্দেশনা প্রত্যাহার করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। ফলে এখন বিদেশি কোম্পানির তালিকাভুক্তির কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। সংশ্লিষ্টদের মতে তালিকাভুক্তির বিষয়টি শিথিল করায় সহজে বাজারে আসবেনা বিদেশি কোম্পানিগুলো। ফলে উচ্চ মুনাফা করা বিদেশি কোম্পানিগুলো বাজারে না এসে মুষ্টিমেয় গোষ্ঠীর কাছে সম্পদ পুঞ্জীভূত হবে। তবে দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশি কোম্পানির চাহিদা রয়েছে। তাই কঠিন নিয়মে না বেধে সমঝোতার মাধ্যমে বাজারে আনা প্রয়োজন বলেও মনে করছেন তারা।
এ বিষয়ে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জাগোনিউজকে বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করার জন্য এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের উচিত কোনো ধরনের আইনি বাধ্যবাধকতা না দিয়ে বিদেশিদের বিনিয়োগে আগ্রহী করে তোলা।
আজিজুল ইসলাম বলেন, দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশি কোম্পানির চাহিদা রয়েছে। তাই সমঝোতার মাধ্যমে আমরা তাদের বাজারে নিয়ে এসেছি। তবে দেশের বর্তমানে যেসব বিদেশি কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা বা তার বেশি রয়েছে কিন্তু শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয় তাদের ক্ষেত্রে কমিশন কি সিন্ধান্ত নিবে সেটা আমি পরিস্কার না। তবে দেশি-বিদেশি কোম্পানিভেদে আইনের ভিন্নতা হওয়া উচিত নয়।
বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, আইনি বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দেয়ায় এ দেশে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনাকারী বিদেশি বহুজাতিক ও যৌথ মালিকানার ভালো কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে আনার পথটি সংকুচিত হয়ে গেল। শেয়ারবাজারের জন্য এটি মোটেই ভালো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কারণ শেয়ারবাজারে যত বেশি ভালো কোম্পানি আসবে, বাজারের জন্য ততই ভালো। দেশি ও বিদেশি কোম্পানির ক্ষেত্রে ভিন্ন সুযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, আইন সবার জন্য সমান হওয়া উচিত। তবে বিদেশি কোম্পানির জন্য ছাড় দেয়া যেতেই পারে।
এসকেডি/এমএস