হাইব্রিড গাড়ি বিশ্বে জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশে অপরিচিত


প্রকাশিত: ১০:৫৫ এএম, ০৫ জুলাই ২০১৫

অটোমোবাইল বাজারে এখন নতুন আকর্ষণ পরিবেশবান্ধব হাইব্রিড গাড়ি। এটি জ্বালানি সাশ্রয়ী অত্যাধুনিক যান। দাম একটু বেশি হলেও হাইব্রিড গাড়ি অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয়ী। এ কারণে বিশ্বে এ গাড়িটির ব্যবহার দিনদিন বাড়ছে। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। সরকার এ গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ শুল্ক ছাড় দিলেও ব্যবহারকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণে অনেক গাড়ি ব্যবহারকারীদের কাছে এখনো অপরিচিত হাইব্রিড গাড়ি।

জানা গেছে, একটি ১৩০০ সিসির হাইব্রিড টয়োটা পিরুজ গাড়ির দাম ২৫ হাজার ডলার। শুল্ক ও অন্যান্য খরচসহ দাম পড়ে প্রায় ৩২ লাখ টাকা। একটি ১৩০০ সিসির গাড়ির জন্য দামটা একটু বেশিই বলে মনে করেন ক্রেতারা। কিন্তু ১৩০০ সিসির একটি জার্মান গাড়ি দ্বিগুণ দামেও তারা কিনতে আগ্রহী।

সারা দুনিয়ায় এ গাড়িটির প্রতি মানুষের আগ্রহ থাকলেও বাংলাদেশে তা নেই। অটোমোবাইল বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ব্যাপারে পরিবেশ সচেতনতার অভাবই প্রধান কারণ। সরকারকে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। প্রতিবেশি দেশ ভারতে গত বাজেটে হাইব্রিড গাড়ির ব্যাটারিসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি আমদানির ওপর বিশেষ শুল্ক ছাড় দিয়েছে। বাংলাদেশেও এ রকম উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ বিশ্বে এ প্রযুক্তি যেভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, অদুর ভবিষ্যতে প্রচলিত গাড়ি বাজার থেকে হারিয়ে যাবে। তাই হাইব্রিড প্রযুক্তিতে দখল আনতে এখন থেকে এ গাড়িটির ব্যবহার বাড়ানো জরুরি।

পরিবেশবান্ধব সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি হয় হাইব্রিড গাড়ি। এ গাড়িটি দ্বৈত জ্বালানিতে চলে। গতি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে জ্বালানির ব্যবহার স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিবর্তন হয়। বিশেষ প্রযুক্তিতে নির্মিত এ গাড়িটি বেশিরভাগ সময় লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির ইলেকট্রিক পাওয়ারে চলে। এ কারণেই হাইব্রিড গাড়ি প্রচলিত গাড়ির চেয়ে জ্বালানি সাশ্রয়ী। ১৫০০ সিসির সাধারণ একটি গাড়ি যদি এক লিটার জ্বালানিতে ২০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে, সেক্ষেত্রে হাইব্রিড গাড়ি একই জ্বালানিতে ৪০ কিমি যেতে সক্ষম।

জানা গেছে, হাইব্রিড কারের সবচেয়ে বড় বাজার আমেরিকায়। তারপরেই ইউরোপ। প্রতিবেশি ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ডেও দ্রুত বাড়ছে এ গাড়ির ব্যবহার। কিন্তু বাংলাদেশের ১৫ বছরেও প্রযুক্তিটি তেমন  পরিচিত লাভ করেনি। সবমিলে সারাদেশে এক থেকে দেড়শ হাইব্রিড গাড়ি রয়েছে।

এ ব্যাপারে র্যাংগস লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান ভূইয়া জাগো নিউজকে বলেন, হাইব্রিড গাড়ি পরিবেশবান্ধব যান। কিন্তু বাংলাদেশে এ গাড়ির ব্যবহার তেমন একটা নেই। এর প্রধান কারণ দাম তুলনামূলক অনেক বেশি।

মোস্তাফিজুর রহমান আরো বলেন, হাইব্রিড গাড়ি সর্বাধুনিক প্রযুক্তির গাড়ি। এটির লাইফ টাইমও অনেক বেশি। দাম একটু বেশি হলেও বাস্তবিক এটি সাধারণ গাড়ির চেয়ে সাশ্রয়ী। তাই এটি ব্যবহারে সকলকে উৎসাহী করা জরুরি। সরকার বর্তমানে এ গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে ৫৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এটি আরো কমানো উচিৎ বলে মনে করেন তিনি।
 
হাইব্রিড অ্যান্ড ইলেকট্রিক ভেইক্যাল রিসার্স সেন্টারের সর্বশেষ তথ্যে জানা যায়, বর্তমানে ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের ৭০টি দেশে ৪৫ লাখ হাইব্রিড গাড়ি চলছে। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশ গাড়িই টয়োটা পিরুজ। গত ফেবুয়ারি মাসে এ মডেলের গাড়ি বিক্রি ২৫ লাখ ছাড়িয়ে যায়। প্রতিবছর পাঁচ লাখেরও বেশি  টয়োটা পিরুজ গাড়ি বিক্রি হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।

এপ্রিল মাসে কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান কেনেটিকের এক জরিপে দেখা যায়, টয়োটা পিরুজ সবচেয়ে জনপ্রিয় হাইব্রিড গাড়ি। এরপরে রয়েছে টয়োটা কারমি হাইব্রিড, হোনডা সিভিক হাইব্রিড, ফোর্ড এসক্যাপ হাইব্রিড, টয়োটা হাইল্যান্ডার হাইব্রিড, লেক্সাস সিটি ২০০এইচ, হোনডা ইনসাইট, ফোর্ড ফিউশন হাইব্রিড, লেক্সাস আরএক্স ৪০০এইচ ও হোন্ডা সিআর-জেড হাইব্রিড গাড়ি।

গাড়ি ব্যবসায়ী ও ব্যবহারকারীরা মনে করেন, দামটা সহনীয় হলে অনেকেই গাড়ি কিনতে আগ্রহী হতেন। কারণ গাড়ি ব্যবহারকারীদের একটি শ্রেণি এখন আর গ্যাসের জন্য লাইনে অপেক্ষা করতে চান না। তাদের  কাছে সময় অনেক মূল্যবান। বিশেষ এ শ্রেণির কাছে অবশ্যই হাইব্রিড গাড়ি আকর্ষণীয় হবে।
   
এ ব্যাপারে ডিএইচএস মোটরস লিমিটেডের হেড অব অপারেশন শিহাব আহমেদ বলেন, হোনডা সিভিক হাইব্রিড গাড়িটি তারা বাজারজাত করছেন। কয়েক বছরে তারা শতাধিক গাড়ি বিক্রি করেছেন। গাড়িটির ব্যাপারে ব্যবহারকারীরা বেশ আশাবাদী। জ্বালানি সাশ্রয়ী বলে গাড়িটির চাহিদা রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়েছে। দামটা একটু বেশি। তাছাড়া গাড়ি আমদানির পর বন্দরে কিছু সমস্যায় পড়তে হয়। গাড়িটি আদৌ হাইব্রিড কি-না তা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সনদ নিতে হয়। এ কারণেই অনেকে হাইব্রিড গাড়ি আমদানি করতে চান না।

গাড়ি ব্যবহারকারী ও বিক্রেতাদের মতে, হাইব্রিড গাড়ি সিএনজিতে রূপান্তর করা যায় না বলেই এটির চাহিদা কম। মূলত এ কারণেই এটির বাজার প্রসার হচ্ছে না। তবে বাজারে রিকন্ডিশনড হাইব্রিড গাড়ি থাকলে এটি অবশ্যই জনপ্রিয় হতো।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ রিকন্ডিশনড গাড়ি আমদানি, বিক্রেতা ও ডিলারদের সংগঠন বারভিডার প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ শরীফ জাগো নিউজকে বলেন, সরকার এ ক্ষেত্রে শুল্ক সুবিধা দিলে তারা কয়েক মাসের মধ্যে টয়োটা মডেলের হাইব্রিড কার বাজারজাত করতে সক্ষম।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ হাইব্রিড গাড়ির সব ধরনের প্রযুক্তিতে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। জাপানে টয়োটা পিরুজ মডেলের অনেক পুরাতন গাড়ি আছে। সরকার চাইলে বারভিডা এ গাড়িটি সহজে বাজারজাত করতে পারবে। রিকন্ডিশনড হাইব্রিড কারে বিশেষ শুল্ক ছাড়ের জন্য এবারের বাজেটে প্রস্তাব দেয়া হলেও কোনো কাজে আসেনি।

ফার্ডিন্যান্ড পোরসে ১৯৯১ সালে প্রথম হাইব্রিড প্রযুক্তি আবিষ্কার করেন। ১৯৯৭ সালের আগে জাপানিজ, আমেরিকান ও জার্মান কোম্পানিগুলো এ প্রযুক্তির অল্পকিছু গাড়ি বাজারজাত করে। কিন্তু এটি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যর্থ হয়। টয়োটা পিরুজ হাইব্রিড গাড়িটি ১৯৯৭ সালে বাজারে আসলে সারা বিশ্বে হৈচৈ পড়ে যায়। এ মডেলটি এ যাবতকালের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত হাইব্রিড গাড়ি।  

বিএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।