পদ্মায় আরও এক পিলার দৃশ্যমান

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:৩৪ পিএম, ২৭ নভেম্বর ২০১৭

৪২টি পিলারের ওপর দাঁড়াবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। গত সেপ্টেম্বরে দুটি পিলারের (৩৭ ও ৩৮ নম্বর) কার্যক্রম শেষ হয়। এরপর সেই দুই পিলারের ওপর বসানো হয় পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান। এর মাধ্যমে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু।

সম্প্রতি এ স্বপ্নের সেতুর আরও একটি পিলারের কাজ শেষ হয়েছে। জাজিরা প্রান্তের নাওডোবায় এ পিলারটির কাজ শেষ হয় গত সপ্তাহে। পিলারটির পাশে আরও চারটি পিলারের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।

সোমবার (২৭ নভেম্বর) পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে গিয়ে দেখা যায়, পুরোদমে চলছে স্বপ্নের সেতু নির্মাণের কাজ। কাজে নিয়োজিত কর্মীরা জানান, রাত-দিন ২৪ ঘণ্টায় কাজ চলে।

সেপ্টেম্বরে সেতুর প্রথম স্প্যান বসানোর পর গত সপ্তাহে নতুন আরও একটি পিলারের কাজ শেষ হয়েছে। রড বাঁধা, পাইলিংসহ একটি পিলারের যাবতীয় কাজ শেষ করতে প্রায় এক মাস সময় লাগে বলে জানান কাজে নিয়োজিত কর্মীরা।

তারা জানান, একটি পিলার থেকে আর একটি পিলারের দূরত্ব প্রায় ১৫০ মিটার। এভাবে দুটি পিলালের নির্মাণ কাজ শেষ করে তার ওপর বসানো হবে স্প্যান। সম্পূর্ণ সেতুতে মোট ৪১টি স্প্যান বসানো হবে।

jagonews24

সদ্য কাজ শেষ হওয়া পিলারটির পাশে আরেকটি পিলারের কাজ করছিলেন কয়েজন কর্মী। এদের একজন নাওডোবার বাসিন্দা মো. ইসহাক বলেন, এখানে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টায় কাজ চলছে। কবে কাজ শেষ হবে আমরা বলতে পারি না। আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান বসানোর পর ওই পিলারটির (কাজ শেষ হওয়া পিলারটির দিকে হাত দিয়ে) কাজ চার-পাঁচদিন আগে শেষ হয়েছে। তাকিয়ে দেখেন পিলারের দুই পাশেই আরও পিলারের কাজ চলছে।

ইসহাকরা যে পিলারটির কাজ করছিলেন সেই পিলারটির বিষয়ে বলেন, এ পিলারের কাজ আগেই শেষ হয়ে যেত। কিন্তু একটু ভুল হওয়ায় পিলারটি বসিয়ে আবার কেটে ফেলা হয়েছে। এখন পিলারটি আরও বড় করে তৈরি করা হচ্ছে।

পদ্মা সেতুর যে পিলারটি সদ্য দৃশ্যমান হয়েছে তার পাশ দিয়েই রয়েছে বেশকিছু ঘরবাড়ি। এখানকার বাসিন্দারা জানান, এলাকাটির নাম নাওডোবা। পদ্মা সেতুর জন্য এ গ্রামের অনেকেই জমি দিয়েছেন।

এদেরই একজন সখিনা বেগম। তিনি বলেন, এ যে পিলার দেখছেন এর পাশেই আমার বাড়ি ছিল। সেতুর কারণে জমি দিয়ে দিতে হয়েছে। ক্ষতিপূরণের কিছু টাকা পেয়েছি। কিন্তু জমি যে পরিমাণ ছিল ক্ষতিপূরণ সে পরিমাণ পায়নি। এখন আমি পাশেই নতুন বাড়ি তুলেছি। সেখানেই থাকি।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতু হবে, দেশের উন্নতি হবে। আমার পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ে। সবাইকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। আশা করি আমার ছেলে-মেয়েরাও সেতুর সুফল পাবে।

তিনি আরও বলেন, আমার বাড়ি একটু ভেতরে। কিন্তু প্রায় প্রতিদিন আমি এখানে আসি। সেতুর কাজ দেখি। নিজের জমির প্রতি মায়া হয়। তারপরও দেশের ভালো হবে এ চিন্তা করে মনে মনে ভাবি আমিও এ সেতুর জন্য অবদান রেখেছি।

গত সেপ্টেম্বরে পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান বসানোর সময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, প্রথম স্প্যান বাসানোর মধ্য দিয়ে আকাশে কালো মেঘ কেটে দৃশমান হয়েছে পদ্মা সেতু। সব বাধা উপেক্ষা করে সেতুর কাজ এগিয়ে চলেছে। যথাসময়েই সেতুর কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে। এ পর্যন্ত পুরো সেতুর কাজ সাড়ে ৪৭ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। এখন পর্যায়ক্রমে অন্যান্য স্প্যানগুলোও উঠবে।

২০১৫ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এ পর্যন্ত প্রকল্পের প্রায় ৫০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। সেতুতে যে ৪২টি পিলার থাকবে, তার মধ্যে ৪০টি পিলার নির্মাণ করা হবে নদীতে। দুটি নদীর তীরে। নতুন দৃশ্যমান হওয়া পিলারটি নদীর তীরে অবস্থিত।

jagonews24

নতুন দৃশ্যমান হওয়া পিলারটি থেকে অল্পকিছু দূরে গিয়েই রাস্তার সঙ্গে মিলিত হবে পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতু যেখানে মিলিত হবে সেখান থেকে ইতোমধ্যে পাঁচচর গ্রাম পর্যন্ত চার লেনের কাজ শেষ হয়েছে। নাওডোবা থেকে পাঁচচরের দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটারের মতো।

চার লেনের রাস্তাটি দিয়ে বর্তমানে গণপরিবহন চলাচল না করলেও স্থানীয় মটরচালিত ভ্যান গাড়ি, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল চলাচল করে।

রাস্তাটির ওপরেই কথা হয় একটি মাইক্রোর চালক ইব্রাহিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, এ যে চার লেন রাস্তা দেখছেন, আগে এখানে ছিল শুধু ক্ষেত আর ক্ষেত। আগে এখানে আসার রাস্তা ছিল না। তবে ক্ষেতের পাশ দিয়ে বেশকিছু বাড়িঘর ছিল। আগে যারা এ গ্রাম দেখেছেন, তারা এখন দেখলে অবাক হবেন। কী গ্রাম কী হয়ে গেছে। আমরা আশা করছি পদ্মা সেতু হয়ে গেলে এখানকার চিত্র আরও পরিবর্তন হয়ে যাবে।

এমএএস/জেডএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।