আইসিডিডিআরবি’র চলমান আন্দোলনের নেপথ্যের কারণ


প্রকাশিত: ০২:০১ পিএম, ০৪ জুলাই ২০১৫

আইসিডিডিআরবি’র চলমান আন্দোলনের নেপথ্যের কারণ কি? -এ নিয়ে মানুষের কৌতুহলের শেষ নেই। আন্তজার্তিক মানের গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি হিসেবে সুপরিচিত এ প্রতিষ্ঠানটির বৈজ্ঞানিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কেন কঠোর আন্দোলন কর্মসূচিতে নেমেছেন -এর নেপথ্যের কারণ জানতে জাতীয় ও আন্তজার্তিক পর্যায়ের হাজার হাজার মানুষ উদগ্রীব হয়ে আছেন।

জাগো নিউজের অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ আন্দোলন হঠাৎ করে শুরু হয়নি। গত ৫৪ বছর যাবত পুঞ্জিভূত রাগ, ক্ষোভ ও হতাশার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর্মী মঙ্গল সংঘের একাধিক নেতাকর্মীরা এ প্রতিবেদককে জানান, আইসিডিডিআরবি মূলত গবেষণা প্রতিষ্ঠান হলেও বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে শতকরা ৫০ শতাংশের বেশি অবৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ করছে। অর্ডিন্যান্সকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের খেয়াল-খুশী মতো বাই লজ তৈরি করে বিপুল অংকের বেতন-ভাতা নিচ্ছেন বিদেশি কর্মকর্তারা। অথচ সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে দিনের পর দিন বঞ্চিত করা হয়েছে।

তারা আরো জানান, প্রয়োজনীয় ফান্ডের দোহাই দিয়ে কয়েক মাস আগে কর্তৃপক্ষ সাবসিডি মূল্যে ক্যান্টিনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের খাবার ও যাতায়াতের সুযোগ বন্ধ করে দেন। তখন থেকেই সাড়ে চার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী রাগে-ক্ষোভে-দুঃখে ফুঁসতে থাকেন।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, আগে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতিদিন তিনবেলা মাত্র ৮৫ টাকায় খেতে পারতেন। এই টাকার মধ্যে সকালের স্ন্যাকস ও চা বাবদ ১০ টাকা, দুপুরের লাঞ্চ ৬৫ টাকা ও বিকেলের স্ন্যাকস ও চা বাবদ ১০ টাকা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে জনপ্রতি ৯০ টাকা দাম বাড়িয়ে ১৭৫ টাকা করা হয়। সকাল ও বিকেলের চা ও স্ন্যাকসের জন্য ৪০ টাকা ও দুপুরের লাঞ্চের জন্য ১৩৫ টাকা বিল নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতি মাসে ২৭৮ টাকায় রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতের সুবিধা পেতেন। পরবর্তীতে সাবসিডি বন্ধ করে যাতায়াত বিল ১ হাজার ৮শ’ টাকা করা হয়।



ঢাকার আইসিডিডিআরবি’র কেন্দ্রীয় অফিসে প্রতিদিন ২ হাজার ৭শ’ কর্মকর্তা-কর্মচারী সাবসিডি মূল্যে খাবার ও যাতায়াতের সুবিধা পেতেন। ওই হিসেবে খাবার বাবদ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত ১ কোটি ৭৮ লাখ ২০ হাজার টাকা সুযোগ বঞ্চিত হয়। একইভাবে প্রতিদিন ১ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী যানবাহনে যাতায়াত করতো। প্রতিমাসে বাড়তি ১ হাজার ৫২৫ টাকা হিসেবে ১ হাজার কর্মচারী গত ছয় মাসে ৯১ লাখ ৫০ হাজার টাকার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।

জানা গেছে, বছর খানেক আগে মার্কিন নাগরিক ইনগ্রিড রিনাউড মুখ্য পরিচালক কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি এসে ফান্ড সংকটের দোহাই দিয়ে খাবার ও যাতায়াতের সাবসিডি সুবিধা বন্ধ করে দেন। এ দুটি সাবসিডি সুবিধা বন্ধ করে দেয়ায় শত শত কর্মকর্তা-কর্মচারী ভিতরে ভিতরে ফুঁসতে থাকেন। এরই চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটে জুন মাসের শেষ সপ্তাহে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী আইসিডিডিআরবিতে কর্মরত বাংলাদেশি নাগরিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জাতিসংঘ নির্ধারিত বেতন কাঠামোর শতকরা ৭৫ ভাগ পাওয়ার কথা কিন্তু বর্তমানে তারা মাত্র শতকরা ৩৮ থেকে ৪০ ভাগ পাচ্ছেন। অথচ বিদেশি নাগরিক কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠান থেকে জাতিসংঘ বেতন স্কেল অনুসারে শতভাগ বেতনভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন।

কর্মী মঙ্গল সংঘের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, সিওও এসে তাদের উৎসব ভাতাও বন্ধ করে দেন। তাদের ১২ মাসের বেতনকে ১৩ মাসে ভাগ করে কেটে নিয়ে ঈদ পূজার সময় সেগুলো উৎসব ভাতা হিসেবে দেয়া হয়। আন্তজার্তিক কোন প্রতিষ্ঠানে এ রকম নজীর নেই বলে তারা জানান।

তারা আরো জানান, তাদের সুবিধা বন্ধ করলেও আইসিডিআরবি’র ম্যানেজমেন্ট বোর্ড অবৈধভাবে ৪০ হাজার ৫শ’ স্কোয়ার ফিটের একটি ভবন ব্র্যাককে বছরে এক টাকা ভাড়ায় ৪৯ বছরের জন্য লিজ দিয়েছে। যা সম্পুর্ণভাবে অনৈতিক।

## বিক্ষোভে উত্তাল আইসিডিডিআরবি
## আইসিডিডিআরবি’র আন্দোলন নিয়ে বিপাকে সরকার
## বেতন বাড়ছে আইসিডিডিআরবি`র কর্মকর্তা-কর্মচারীদের!


এমইউ/আরএস/আরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।