বিচার বিভাগেরও ন্যায্য সমালোচনা হতে পারে : প্রধান বিচারপতি


প্রকাশিত: ১০:৩৫ এএম, ০৪ জুলাই ২০১৫

অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতোই প্রয়োজনবোধে বিচার বিভাগেরও ন্যায্য সমালোচনা হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। শনিবার বিচার প্রক্রিয়ার ডিজিটালাইজেশন নিয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতোই প্রয়োজনবোধে বিচার বিভাগেরও ন্যায্য সমালোচনা হতে পারে। তবে দায়িত্বহীন সমালোচনা বিচার বিভাগের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বয়ে আনবে।

সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে ডিজিটাল জুডিশিয়ারির মাধ্যমে বিচারের ক্ষেত্রে দ্রুততা এবং মানুষের জন্য সহায়ক বিচারিক পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করা হবে। বিচার বিভাগে মামলায় দীর্ঘসূত্রতা, সীমিত প্রবেশাধিকার, আদালতের রায়ের বিষয়ে স্বচ্ছতা ও ভবিষ্যদ্বাণীর অভাব এবং আর্থিক, বাস্তবিক ও অন্যান্য উপায়ের কমতি রয়েছে।

তিনি বলেন, এখন সময় এসেছে স্বল্প খরচে বিচার বিভাগের জন্য উপযোগী আইসিটি অবকাঠামো তৈরি, যা দ্রুত মামলা নিষ্পত্তিতে ভূমিকা রাখতে পারে। আদালত বান্ধব আইসিটি সফটওয়্যার তৈরির মাধ্যমে দেশের সকল আদালতে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করে বিচার ব্যবস্থাপনাকে যুগোপোযোগী করতে হবে।

প্রধান বিচারপতি বলেন, দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আইনের শাসন। এটি মাথায় রেখেই সকল সিদ্ধান্ত নেয়া উচিৎ। দ্রুত মামলা নিষ্পত্তিতে বিচার বিভাগের জন্য উপযোগী আইসিটি অবকাঠামো তৈরি এখন সময়ের দাবি বিচার বিভাগকে আধুনিকায়নের জন্য ৬৪টি জেলাকেই ই-জুডিশিয়ারির অধীনে আনতে হবে। এজন্য ই-জুডিশিয়ারির জন্য বহু কার্যক্রম গ্রহণ ও কার্যকর করা প্রয়োজন।

এর মধ্যে রয়েছে- আদালত কক্ষ বান্ধব নির্দেশনামুলক বাংলা লেখার যন্ত্র, সকল আদালতের জন্য ওয়াইফাই সুবিধা, বিচারপ্রার্থীদের জন্য অনলাইনে মামলার তথ্য প্রাপ্তির সুবিধা, ওয়েব সাইট-এসএমএস ভিত্তিক কার্যতালিকা, সুপ্রিমকোর্ট এবং জেলা আদালতের মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সের সুবিধা, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাক্ষ্য গ্রহণ, ইলেক্ট্রনিক মামলা রুজু পদ্ধতি চালু।

তিনি বলেন, জেলা আদালতের জন্য মামলা ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি, প্রত্যেক আদালতের জন্য ডিজিটাল ডিসপ্লে স্থাপন, রায় সংরক্ষণের জন্য আর্কাইভ, স্বয়ংক্রিয় সেকশন, রেকর্ড ডিজিটালাইজেশন, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার, ই-লাইব্রেরি, ইনভেনটরি সিস্টেম, জেলা আদালতের জন্য ডাটা সেন্টার, বায়ো-মেট্রিক অ্যাটেনডেন্স সিস্টেম, বিচারক ও বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ এবং কর্মশালা প্রয়োজন।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত তার বক্তৃতায় মার্কিন বিচার বিভাগের ইতিহাস তুলে ধরে সেখানকার সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে সরকারের ক্ষমতার ভারসাম্যের নানা দিক উল্লেখ করেন। বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ সংক্রান্ত মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পুনর্বিবেচনা দরকার বলে মত দেন অর্থমন্ত্রী। এছাড়া বিচার বিভাগকে ডিজিটাল করে মানুষের কাছে সঠিক বিচার পৌঁছানোর বিষয়ে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক তার বক্তৃতায় বিচার বিভাগের উন্নয়নে প্রধান বিচারপতির নেয়া সব উদ্যোগের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, মামলার দীর্ঘসূত্রতা ও মামলাজট কমাতে ডিজিটালাইজেশন পদ্ধতি কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।

জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপি ও বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় এ সেমিনারের আয়োজন করে সুপ্রিমকোর্ট। ‘ডিজিটালাইজেশন অব বাংলাদেশ জুডিশিয়ারি’ শীর্ষক এ সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। সন্মানিত অতিথি ছিলেন- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক রবার্ট ওয়াটকিনস।

এছাড়া দিনব্যাপী এ কর্মশালায় সুপিম্রকোর্টের হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের বিচারপতি, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং ইউএনডিপির কর্মকর্তারাসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

আরএস/আরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।