নড়াইলে গ্রেফতার আতঙ্কে ৩ গ্রাম পুরুষ শূন্য


প্রকাশিত: ০৫:২০ এএম, ০৪ জুলাই ২০১৫

নড়াইল সদর উপজেলার ভদ্রবিলা, বাসগ্রাম এবং কালিয়া উপজেলার চাচুড়ি ইউনিয়নের তিনটি গ্রাম পুরুষ শূন্য হয়েছে। পুলিশের ভয়ে বাড়িঘরে যেতে পারছেন না তারা। একটি হত্যা মামলায় ওই ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করায় গ্রেফতার আতঙ্কে তারা গ্রাম ছেড়েছেন। গ্রামগুলো হলো বাশগ্রাম ইউনিয়নের বাশগ্রাম, ভদ্রবিলা ইউনিয়নের ডহর রামসিধি এবং চাচুড়ি ইউনিয়নের বিঞ্চুপুর।

এলাকায় উত্তেজনা থাকার কারণে বাসগ্রাম বাজারে পুলিশ মোতায়েন থাকলেও পরিবারগুলোর নারী সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তারা ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। এই সুযোগে সন্ত্রাসীরা বাড়িঘরে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চালাচ্ছেন।
 
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রাম্য দলাদলি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ভদ্রবিলা ইউপি চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন, বাসগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম এবং চাচুড়ি ইউপি চেয়ারম্যান লুৎফর রহমানের সঙ্গে নাজমুল মোল্যা, হীরক মোল্যা ও নান্না মোল্যার দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এর জের ধরে গত বছরের ৩০ নভেম্বর চাচুড়ি ইউনিয়নের কলিমন বাসগ্রামে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে ক্যাইজায় ভদ্রবিলা ইউপি চেয়ারম্যানের ভাই মহসিন সিকদার নিহত হন।
 
এ ঘটনায় নাজমুল মোল্যা, হীরক মোল্যা, নান্না মোল্যাসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে কালিয়া থানায় মামলা করা হয়। জানা গেছে, বাজারে পুলিশ থাকা সত্ত্বেও উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে চারবার সংঘর্ষ হয়েছে।

সর্বশেষ শবেবরাতের দিন বিকেলে রামসিধি মোড়ে উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এতে প্রায় ২০ জন আহত হন।
রামসিধি গ্রামের মতিয়ার শেখের স্ত্রী রোকেয়া বেগম জাগো নিউজকে জানান, কলিমন গ্রামে দুই পক্ষে ক্যাইজা হলে চেয়ারম্যানের ভাই মহসিন কোপ খেয়ে মরে যায়। এজন্যে মেলা মানুষের নামে মামলা হয়েছে।
 
তিনি আরো বলেন, আমার ছেলের বাবারেও আসামি দিছে। পুলিশির ভয়ে ছেলের বাবা বাড়ি থাকতে পারে না। হাট-বাজার করতে পারছিনা। খেত চাষ হচ্ছে না। এবার কী করে ঈদ করব জানি না।  

মান্নান শেখের স্ত্রী গোঞ্জেরা বেগম জাগো নিউজকে জানান, পুলিশ যারে পাচ্ছে তাকে আটক করছে। এই ভয়ে আমাদের বাড়ির পুরুষরা বাড়ি ঘরে থাকতে পারছে না।

তিনি আরো বলেন, কিছু দিন আগে কারা যেন মন্নু বেগের বাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। তাদের দুটো ঘরই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

স্থানীয় মসজিদের ইমাম ও মুসল্লিরা জাগো নিউজকে বলেন, পবিত্র মাহে রমজান মাস সংযমের মাস। এ মাসে মারামারি-কাটাকাটি, হানাহানি এমনকি কাউকে কটু বাক্য বলাও ঠিক নয়। কতিপয় লোকের কারণে এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে।

কালিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মতিয়ার রহমান জাগো নিউজকে বলেন, কালিয়া উপজেলার কলিমন বাসগ্রামে সংঘর্ষে নিহত মহসিন সিকদার হত্যা মামলায় ৩৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।

সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মতিয়ার রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে বাসগ্রাম বাজারে রিজার্ভ পুলিশের একজন সুবেদারের নেতৃত্বে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে।

তিনি দাবি করেন, বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত। যারা বাড়িঘরে ফিরতে ভয় পাচ্ছেন, নির্ভয়ে তারা বাড়ি-ঘরে ফিরতে পারেন। তবে আবার যদি তারা কোনোরকম শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট করার কাজে নিয়োজিত হয় তাহলে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।

পুলিশ সুপার সরদার রকিবুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, পুরুষ শূন্য এটা ঠিক না। তবে ওই এলাকার মানুষরা গ্রাম্য দলাদলি, কাইজা ডাঙ্গা মারামারিতে পটু। তাই এলাকার শান্তি শৃংখলা রক্ষাতে স্থায়ীভাবে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এজন্য যারা মামলার আসামি তারা এলাকায় আটকের ভয়ে হয়তো আসতে পারছেন না। তবে যারা কোনো অন্যায় কাজের সঙ্গে জড়িত না তারা এলাকায় থাকতে পারছেন।

হাফিজুল নিলু/এমজেড/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।