ভারতে পাচার হওয়া ৭৪ বাংলাদেশি নারীকে হস্তান্তর


প্রকাশিত: ০১:৫২ পিএম, ০২ জুলাই ২০১৫

ভালো কাজের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন সময়ে ভারতে পাচার হওয়া বাংলাদেশি ৭৪ নারী-শিশুকে ভারত সরকারের দেওয়া বিশেষ `ট্রাভেল পারমিটের` মাধ্যমে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে হস্তান্তর করা হয়েছে।  এদের মধ্যে দুই শিশু ও ৭২ জন নারী রয়েছে।
 
দুই থেকে পাঁচ বছর সাজা ভোগের পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদের বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।  বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদের গ্রহণ করে পোর্ট থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে।  ফেরত আসা নারীদের বাড়ি যশোর, নড়াইল, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরিশাল, ঢাকা, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে।

ফেরত আসা খুলনার মৌসুমী, রিনা বেগম (ছদ্দনাম) বলেন, আমাদের বিউটি পার্লারের নাম করে বোম্বে নিয়ে খারাপ কাজ করিয়েছে।  সে দিনের স্মৃতি ভীষণ বেদনাদায়ক বলতেই চোখের পানি ঝরে পড়ে রিনার।

সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া স্মৃতি আক্তার বলেন একই কথা।  নরক যন্ত্রণায় কুরে কুরে খেয়েছে তাদের দেহ।  কোন বাধা অনুরোধ মানেনি কেউ। সবাই চাই দেহ।  তাই আর যেতে চাইনা ভারতের বোম্বে।  দেশেই থাকতে চাই ওরা বলতেই কেঁদে ফেলে সে।

বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম খান জানান, সাংসারিক অস্বচ্ছলতাসহ বিভিন্ন কারণে দুই থেকে পাঁচ বছর আগে দালালের খপ্পরে পড়ে মিথ্যা আশ্বাসে ভালো কাজের প্রলোভনে প্রতারিত হয়ে সীমান্ত পথে ভারতে যায় এসব নারীরা।  বিউটি পার্লার, স্কুল, বাসাবাড়ি, নার্সারীসহ বিভিন্ন নাম করে পরে দালালচক্র তাদের নিয়ে বোম্বের নিষিদ্ধ পল্লীতে অসামাজিক কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করে।  এছাড়া কয়েকজনকে বাসা বাড়ি, হোটেল রেস্তোরাসহ অন্ধ জগতে ঠেলে দেওয়া হয়।

তিনি আরো জানান, পরে ভারতীয় পুলিশের অভিযানে তারা আটক হয়।  এরপর তাদের পাঠানো হয় জেল হাজতে।  `রেসকিউ ফাউন্ডেশন` নামে ভারতের একটি এনজিও সংস্থা তাদের জেল থেকে ছাড়িয়ে নিজেদের আশ্রয় হোমে রাখে।  পরবর্তীতে দু`দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে `ট্রাভেল পারমিটের` মাধ্যমে তাদের দেশে ফেরত পাঠায় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।

বৃহস্পতিবার বিকেলে সাড়ে ৫টার দিকে ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদের বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে হস্তান্তর করে। ইমিগ্রেশন পুলিশ ও পোর্ট থানার মাধ্যমে তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেন বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি ও রাইটস যশোর নামে দুটি এনজিও সংস্থা।  পরে তাদের অভিভাবকের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি যশোর শাখার সমন্বয়কারী কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট সালমা খাতুন ও রাইটস যশোরের তথ্য ও অনুসন্ধান কর্মকর্তা তৌফিকুজ্জামান জানান, পাচারের শিকার নারীরা যদি পাচারকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে চায় তাহলে তাদের আইনি সহায়তা করবেন বলে জানান তারা।

জামাল হোসেন/এআরএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।