২১ কোটি টাকার অনিয়ম : সোহরাওয়ার্দী`র পরিচালক সাময়িক বরখাস্ত
দামি এমআরআই (ম্যাগনেটিক রিজোনেন্স ইমেজ) মেশিন ক্রয়ে অনিয়মের অভিযোগে রাজধানীর সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. এ কে এম মুজিবুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। বুধবার স্বাস্থ্য সচিব সৈয়দ মনজুুরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ আদেশ জারি হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মেশিন ক্রয়ের ক্ষেত্রে পিপিআর-এর সংশ্লিষ্ট বিধিবিধানসমূহ প্রতিপালনে ত্রুটি-বিচ্যুতি ও অনিয়মের বিষয় প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ১ জুলাই থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, গত (২০১৪-২০১৫) অর্থবছরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক আদেশে তৎকালীন পরিচালক ডা.মুজিবুর রহমান একটি এমআরআই-১.৫ টেলসা এমআরআই মেশিন- ব্র্যান্ড: হিটাচি মডেল: একহিলন, অরিজিন: জাপান ফর ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড ইউকে/ইউএসএ ফর ম্যাগনেট:ম্যাগটে সিস্টেম (1.5 Telsa MRI Machine Brand: Hitachi Model :Echelon Origin: Japan for Electronics & UK/USA for Magnet: Magent System) কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেন।
মন্ত্রণালয় থেকে থোক বরাদ্দ বাবদ অর্থ প্রাপ্তি সাপেক্ষে মূল্য পরিশোধ করা হবে- এ চুক্তিতে হিটাচি কোম্পানির লোকাল এজেন্টরা তড়িঘড়ি করে হাসপাতালে এমআরআই মেশিন সরবরাহ করে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একাধিক সূত্র জানায়, এমআরআই মেশিন ক্রয়ের সাথে শর্ত হিসেবে একটি বড় জেনারেটর ,দুটি অ্যানালগ মেশিনের জায়গায় ডিজিটাল এক্সরে মেশিন সরবরাহ ,এমআরআই মেশিন পরিচালনার জন্য হাসপাতালের ১১জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক যন্ত্রপাতি সরবরাহের কথা ছিল।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, তারা গোপন সূত্রে জানতে পারেন হাসপাতাল পরিচালক মেশিন ক্রয়ে পিপিআর অনুসরণ না করেই মেশিনটি কেনার প্রক্রিয়া শেষ করে তড়িঘড়ি করে মন্ত্রণালয়ে বিল উপস্থাপন করেছেন। এ কারণে তারা বিলটি আটকে দেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, মোট ২১ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ক্রয়ে পিপিআর সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়েছে কিনা তা দেখার জন্য একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তদন্ত কমিটি মেশিন ক্রয়ে পিপিআর অনুসরণ করা হয়নি বলে প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে অনিয়মের প্রাথমিক অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ডা. মুজিবুর রহমানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।
এ ব্যাপারে জানতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক ও বর্তমান পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল হান্নান ও অধ্যাপক ডা. সামিউল ইসলাম সাদি বলেন, মেশিনটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অর্থে কেনার প্রক্রিয়া চলছিল। তাই এ ব্যাপারে তিনি বিস্তারিত কিছুই জানেন না।
অনিয়মের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্তকৃত পরিচালক ডা. এ কে এম মুজিবুর রহমানের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। প্রতিবারই মোবাইলে রিং টোন বাজলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
জানা গেছে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ও বিএমএ নেতা ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়াকে নতুন পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এমআরআই মেশিন ক্রয়ে অনিয়ম প্রসঙ্গে বুধবার রাতে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
এমইউ/এসআরজে