বেওয়ারিশ লাশনির্ভর মরণোত্তর চক্ষুদান কার্যক্রম


প্রকাশিত: ০৫:৫৫ এএম, ০১ জুলাই ২০১৫

দেশে মরণোত্তর চক্ষুদান কার্যক্রম এখনও বেওয়ারিশ লাশনির্ভর রয়ে গেছে। বর্তমানে সংগ্রহিত কর্ণিয়ার শতকরা ৯৯ ভাগই বেওয়ারিশ লাশ থেকেই পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের সন্ধানী চক্ষুদান কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, গত এক বছরে মৃত রোগীদের কাছে থেকে মোট ১২০টি কর্ণিয়া সংগ্রহিত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে শতকরা ৯৯ ভাগ কর্ণিয়াই বেওয়ারিশ লাশ থেকে সংগ্রহিত।  

জানা গেছে, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সন্ধানী প্রায় তিন দশক ধরে জাতীয় চক্ষুদান কার্যক্রম পরিচালনা করলেও প্রচার প্রচারণার অভাবে তাদের কর্মসূচির সাফল্য এখনো শূন্যের কোটায় রয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, শুধুমাত্র ঢাকা মেডিকেলের সন্ধানীতে চার সহস্রাধিক মানুষ কর্ণিয়ার জন্য আবেদন জমা দিয়ে রেখেছেন। সেই তুলনায় সংগ্রহিত কর্ণিয়ার সংখ্যা খুবই অপ্রতুল।

সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে কর্ণিয়াজনিত অন্ধ রোগীর সংখ্যা পাঁচ লাখ ২৬ হাজার। তাদের মধ্যে এক লাখ ৬০ হাজার জন দুই চোখের ও তিন লাখ ৬৬ হাজার জন একচোখের কর্ণিয়াজনিত অন্ধত্বে ভুগছেন।

২০০২ সালের মে মাসে আর্ন্তজাতিক সংস্থা অরবিসের অর্থায়নে সন্ধানীর উদ্যোগে আয়োজিত কর্ণিয়াজনিত অন্ধত্ব নিবারনে প্রয়োজনীয় কৌশল নির্ধারণী কর্মশালায় জানানো হয়, টাইফয়েড জ্বরে ভোগে ও ধানের চালের চিটার আঘাতসহ নানা কারনে কর্ণিয়া নষ্ট হয়।

সন্ধানীর একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে বছরে যত সংখ্যক কর্ণিয়া সংগ্রহ হচ্ছে সে হিসেবে কর্ণিয়াজনিত অন্ধত্ব দূর করতে সাড়ে ৩ হাজার বছর লেগে যাবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজে সন্ধানীর দুইজন কাউন্সিলর কাজ করছেন। তারা হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের কাছ থেকে নিয়মিত মুমূর্ষু রোগীদের তালিকা সংগ্রহ করেন।

জাহাঙ্গীর আলম নামের একজন কাউন্সিলর জাগো নিউজকে জানান, চিকিৎসকরা যে সব রোগীর বেঁচে উঠার আশা ছেড়ে দেন সে সকল রোগীর স্বজনদের সঙ্গে তারা বিভিন্ন কৌশলে যোগাযোগ করেন। কাউকে স্বজন সেজে ভরসা দিয়ে কাউকে ওষুধসহ চিকিৎসা সামগ্রী কিনে দিয়ে আস্থা অর্জনের প্রচেষ্টা চালান।

মনমানসিকতা বুঝে তারা মরণোত্তর চক্ষুদান করার অনুরোধ জানান। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে  ইতিবাচক সাড়া পান না।

তিনি আরো বলেন, প্রচার না থাকায় মরণোত্তর চক্ষুদান কার্যক্রমে কাউন্সিলিং করতে গিয়ে তাদের অধিকাংশ সময়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির সন্মুখীন হতে হয়। অধিকাংশ রোগীর স্বজনের কাছে চক্ষুদানের কথা বললে বিস্মিত হন, অনেকে পাগলও ভাবেন। অনেক সময় রোগীর স্বজনরা তাদের ওপর চড়াও হয়ে উঠেন।
আজবুল ইসলাম নামে অপর কাউন্সিলর জানান, মরনোত্তর চক্ষুদান কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে হলে কার্যকর প্রচার বাড়াতে হবে।

দেশের সিনেমা, নাটক, খেলাধুলা, গান, নাচ ও মডেলিংয়ের সঙ্গে জড়িত অভিনয় শিল্পী, খেলোয়াড়, সঙ্গীতশিল্পী, নৃত্যুশিল্পী ও মডেলদের দিয়ে রেডিও টিভিতে মরনোত্তর চক্ষুদান সম্পর্কিত  সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন তৈরি করে ব্যাপক প্রচার চালালে মরণোত্তর চক্ষুদান সম্পর্কে মানুষ জানতে পারবে এবং চক্ষুদানে উৎসাহিত হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেলে যে দুইজন কাউন্সিলর কাজ করছেন তাদের কাউন্সিলর হিসেবে কোন প্রশিক্ষণ নেই। প্রতিবেশী দেশ ভারতে তাদের প্রশিক্ষনের কথা  থাকলেও প্রয়োজনীয় উদ্যোগের অভাবে তা হচ্ছে না।  

সন্ধানী আগামী ২০২০ সালের মধ্যে ৩১ হাজার কর্ণিয়াজনিত অন্ধত্ব দূর করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু বর্তমানে যে ঢিমেতালে কর্ণিয়া সংগ্রহ চলছে সে ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ কোনভাবেই পূরণ হওয়া সম্ভব না।   

চক্ষু বিশেষজ্ঞরা জানান, প্রতি বছর দেশে আনুমানিক ১১ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে শতকরা মাত্র ১ দশমিক ৫ ভাগ মানুষ মরণোত্তর চক্ষুদান করলে এক বছরেই ৩৩ হাজার কর্ণিয়া সংগ্রহ সম্ভব বলে তারা মন্তব্য করেন।   

সন্ধানীর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেন্টাল অনুষদের ডীন অধ্যাপক ডা. আলী আজগর মোড়লের কাছে চক্ষুদান কার্যক্রম এখনো কেন বেওয়ারিশ লাশ নির্ভর রয়ে গেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনও মানুষের মধ্যে এক ধরনের ধর্মীয় গোড়ামি কাজ করছে। তারা মনে করে মৃত্যুর পর চক্ষুদান করলে পাপের ভাগীদার হবে। এ ক্ষেত্রে সন্ধানী বিভিন্ন মেডিকেল কলেজসহ সারাদেশে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচীর মাধ্যমে মানুষের ভুল ভাঙ্গিয়ে মরণোত্তর চক্ষুদানে উৎসাহিত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এমইউ/এআরএস/এএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।