হরতাল-অবরোধ না হলে জিডিপি ৭ ভাগ অর্জন করতাম : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জ্বালাও পোড়াও হরতাল-অবরোধের ঘটনা যদি না থাকতো তাহলে আমাদের জিডিপি অর্জনের যেটা লক্ষ্য ছিল সাত ভাগে উন্নীত করা সেটা আমরা অর্জন করতে পারতাম। বিশ্ব মন্দার পাশাপাশি আমাদের দেশে কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের জ্বালাও পোড়াও মানুষ হত্যা, নানা ধরনের কর্মকাণ্ড শত বাধা অতিক্রম করেও আমরা আমাদের জিডিপি ৬ দশমিক ৫১ শতাংশে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি।
সোমবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে একথা বলেন তিনি। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন এসময় বৈঠকে সভাপতিত্ব করছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ভারতের সঙ্গে সিরিজ জিতেছে। আমার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আমি অসুস্থতার জন্য মাঠে যেতে পারিনি। আমি ক্রিকেট দলকে কিছু দিনের মধ্যেই গণভবনে ডাকবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্রিকেট নিয়ে আমাদের অনেকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতেন। কিন্তু আমাদের ছেলেরা কিছুদিন আগে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করেছে এবং ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজ জিতেছে।
নেপাল, ভুটান, ভারত, বাংলাদেশ এর পরিবহন চুক্তির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই পরিবহন চুক্তি আমাদের জন্য অফুরন্ত সুযোগ বয়ে আনবে। আমরা বিশ্বাস করি এখন একটা দেশ এককভাবে এখন উন্নতি করতে পারে না। সামষ্টিক চেষ্টা একান্তভাবে প্রয়োজন। যে কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করার দীর্ঘদিন আমার একটা প্রচেষ্টা ছিল।
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুন্দরবনকে রক্ষা করা, আমার দেশকে রক্ষা করা সেখানে আমার দরদ থাকবে না অন্য কারো বেশি দরদ থাকবে এটা আমি বিশ্বাস করি না। কথায় বলে মায়ের পোড়ে না, মাসির পোড়ে। বাংলাদেশের উন্নতিটা অনেকের ভালো লাগে না, এটা হলো বাস্তবতা।
প্রধানমন্ত্রী তার এক ঘন্টা ১২ মিনিটের বক্তব্যে বলেন, জাতির পিতা যখন যুদ্ধবিধস্ত দেশকে মাত্র সাড়ে তিন বছরে অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন দুর্ভাগ্য এদেশের ‘৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপবিারে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো, জাতীয় চারনেতাকে হত্যা করা হলো। এরপর থেকে এদেশে সংবিধান সম্পূর্ণভাবে অবহেলিত, সংবিধান লঙ্ঘন করে হত্যা ক্যুর রাজনীতি শুরু। জনগণের কোনো অধিকার ছিল না, না ভোটের অধিকার না গণতান্ত্রিক অধিকার, না কথা বলার অধিকার ছিল। মার্শাল মিলেটারি রুল দিয়েই দেশ চলেছে।
তিনি বলেন, ২১টি বছর বাংলাদেশের মানুষ কষ্ট করেছে। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ যখন ‘৯৬ সালে সরকার গঠন করলো তখনই এদেশের মানুষ প্রথম উপলব্দি করলো যে সরকার জনগণের সেবা করে জনগণের কল্যাণে কাজ করে। বাংলাদেশের জনগণের জন্য ‘৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত ছিল বাংলাদেশের স্বর্ণযুগ। তারপর আবার অন্ধকারের অমানিশায় ঢেকে যায় বাংলাদেশ। সাতটি বছর এদেশের মানুষ কষ্ট করেছে। ২০০৮ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করি। ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করি, ১০ বছর মেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা গ্রহণ করি। তারই ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছি বলেই আজ বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি দারিদ্রের হার ও অতি দরিদ্রের হার কমিয়ে আনা, গড় আয়ু বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পদক্ষেপসহ বিভিন্ন অর্জন ও পদক্ষেপের উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপি মন্দার কারণে অনেক দেশ জিডিপি ধরে রাখতে পারেনি, আমাদের দেশেও কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের জ্বালাও পোড়াও মানুষ হত্যা, নানা ধরনের কর্মকাণ্ড শত বাধা অতিক্রম করেও আমরা আমাদের জিডিপি ৬ দশমিক ৫১ ভাাগে ধরে রাখতে ক্ষমত হয়েছি। হয়তো এই বাধাগুলো যদি না আসতে, তিন মাস এক টানা জ্বালাও পোড়াও হরতাল-অবরোধের ঘটনা যদি না থাকতো তাহলে আমরা আমাদের জিডিপি আমাদের যেটা লক্ষ্য ছিল সাত ভাগে উন্নীত করা সেটা আমরা পারতাম এতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি বলেন, আর্থসামাজিক উন্নয়নের দিক থেকে বাংলাদেশ আজ রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। সবাই প্রশংসা করছে।
তিনি বলেন, অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়া নতুন কিছু নয়। আগেও ছিল। ক্ষমতায় আসার পর মালয়েশিয়া, সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশে বাংলাদেশের অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ করার কথা উল্লেখ করেন তিনি। অবৈধভাবে না যাওয়ার ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করছি। তারপরও দুঃখজনক কিছু লোক অবৈধভাবে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের পদক্ষেপের উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ইদানীং একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী মানুষ পুড়িয়ে যেন আত্মতুষ্টি লাভ করে। মানুষ পুড়িয়ে যেন আনন্দ পায়। আমরা সব ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়েছি। জঙ্গিবাদের ব্যাপারে সরকারের জিরো টলারেন্সের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে বিরোধিতাকারীদের সমালোচনা করে বলেন, আমি প্রশ্নকরি ঘনবসতিপুর্ণ এলাকা হচ্ছে দিনাজপুর সেখানে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে, প্রকৃতির সেখানে কী ক্ষতি হয়েছে? কেউ দেখাতে পারবেন কি-না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শেয়ারবাজার যাতে আরো গতিশীল হয় সেজন্য ক্ষুদ্র বিনোয়োগকারীদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারের পদক্ষেপের কারণে শেয়ারবাজার এখন স্থিতিশীল। মাঝেমাঝে কিছু খেলার চেষ্টা করা হয়। আমরা সঙ্গে সঙ্গে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেই। মূল্যস্ফিতি কমিয়ে আনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এটা আমাদের একটা সাফল্য। রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আছে বলেও দাবি করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, আমরা আধুনিক প্রতিরক্ষা বাহিনী গড়তে নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে আমরা ক্ষমতায় এসে যতকাজ করেছি সশস্ত্র বাহিনীর যারা ক্ষমতায় ছিল তারাও এত কাজ করেনি।
বাজেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে বাজেট আমরা দিয়েছে হয়তো পাঁচ শতাংশ ঘাটতি যা প্রতিবছরই দেওয়া হয়, তা সত্ত্বেও আমরা বাস্তবায়ন করবো। সকলে সহযোগিতা করুন, আমরা বাস্তবায়ন করতে পারবো।
তিনি প্রস্তাবিত বাজেটে ধার্যকৃত কয়েকটি খাতে কর হার পরিবর্তন আনার কথা জানান। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের ওপর কর ১০ ভাগ থেকে কমিয়ে সাড়ে সাত ভাগ করার আহ্বান জানান তিনি। গার্মেন্টের ক্ষেত্রে রফতানি শুল্কহার কামানোরও আহ্হবানবান জাান প্রধানমন্ত্রী।
এইচএস/বিএ/পিআর