তিন মাস ধরে বিএসএফের হাতে বন্দী কুড়িগ্রামের রনি


প্রকাশিত: ০৯:১০ এএম, ২৯ জুন ২০১৫

আম্মু-আব্বু আমাকে বাড়ি নিয়ে যাও। আমি বাড়ি যাব। এখানে তোমরা নেই, আমার ভাল লাগে না। মোবাইল ফোনে বাবা-মার কাছে এভাবেই আকুতি মিনতি করছিলেন বিএসএফের হাতে আটক হয়ে ভারতের আসাম প্রদেশের ধুবড়ি জেলার একটি শিশু আশ্রমে বন্দী থাকা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কুরুসা ফেরুসা গ্রামের রনি হাসান (৫)।

এদিকে, রনিকে ফেরত পাওয়ার আশায় প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েও সন্তানকে না পেয়ে পাগল রনির বাবা-মা অবশেষে দু’রাষ্ট্রের সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। শিশু রনিকে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ধরে নিয়ে যাওয়ার প্রায় তিন মাস অতিবাহিত হলেও ফেরত দেয়নি আজও।

এদিকে একমাত্র পুত্র সন্তান রনির খোঁজ না পেয়ে মা রুনা খাতুন বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন। তিনি গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছেন। অপরদিকে রনির বাবা জয়নাল আবেদীন ছেলেকে ফেরত পাবার আশায় তিন মাস ধরে প্রসাশনের দ্বারে-দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। রনিকে আটকের খবর শুনে আড়াই মাস আগে দেশে ফিরে বিজিবি আর দালালের পিছনে ঘুরে-ঘুরে সহায় সম্বল শেষ করে ফেলেছেন। তারপরেও সন্তানকে ফেরত পাবার কোন খবর মিলছে না।

রনির দাদা হজরত আলী জানান, নাতিকে ফেরত পেতে জমানো এবং বালারহাট ও ফুলবাড়ির উপজেলার বিভিন্ন হাট থেকে টাকা সংগ্রহ করে দালাল আলতাবকে প্রায় ২৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। দু’মাস ধরে ঘুরানোর পড়ে আলতাব তাদের বলে রনিকে ফেরত আনা আমার পক্ষে আর সম্ভব না তোমরা অন্য কোন উপায় দেখ।

এ বিষয়ে দালাল আলতাব মোবাইলে টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করলে বলেন, এসব টাকা নেয়া হয়েছে যাতায়াত খরচের জন্য। আর বেশ কয়েকবার ফ্লাগ মিটিং এ বিজিবি ও বিএসএফ’র আপ্যায়ন করার জন্য। আমার ব্যক্তিগত কাজে এই টাকা ব্যবহার করিনি।

ফুলবাড়ি উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোসাব্বের আলী বলেন, রনির পরিবারের সদস্যরা এই ইউনিয়নের বাসিন্দা। রনির পরিবারের বাড়ি ভিটেটুকু ছাড়া আর কিছুই নেই তাদের। অভাবের তাড়নায় এই ইউনিয়নের অনেকেই সীমান্তের ওপারে যান জীবিকার জন্য। রনির মা-বাবাও ৬ বছর আগে দিল্লী গিয়েছিল। ছেলেকে ফেরত পাঠানোর সময় বিএসএফের হাতে ধরা পড়ে এখন আসামের একটি আশ্রমে রয়েছে। তিনি দু’রাষ্ট্রের সরকার প্রধানদের সুদৃষ্টি কামনা করে দ্রুত রনিকে ফিরিয়ে দিয়ে পরিবারটি রক্ষার অনুরোধ জানান।

কুড়িগ্রাম ৪৫ বিজিবি’র পরিচালক লে.কর্নেল জাকির হোসেন ঘটনা স্বীকার করে বলেন, বর্তমানে শিশু রনি ভারতের একটি আশ্রমে রয়েছে বলে বিএসএফ এর পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। বিএসএফ আমাদের কাছ রনির বাবা-মায়ের কিছু ডকুমেন্ট এবং রক্ত নিয়েছে নিশ্চিত হবার জন্য। রনিকে ফেরত আনার জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি শিশু রনিকে বাংলাদেশে ফেরত আনতে পারব।

নাজমুল হোসেন/এসএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।