অভিভাবক শূন্য হওয়ার পথে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ
‘অভিভাবক শূন্য’ হওয়ার পথে সরকারি মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ। সিনিয়র অধ্যাপকসহ প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক সংকটে চিকিৎসা শাস্ত্রের (এমবিবিএস কোর্স) মৌলিক এ বিষয়টিতে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
শুধু এমবিবিএস`ই নয়, উচ্চ শিক্ষার (স্নাতকোত্তর এম.ডি, এমসিপিএস ও ডিপ্লোমা ) কোর্সের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। এমবিবিএস কোর্সে তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের মৌলিক এ বিষয়টি পড়ানো হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের ২৯টি সরকারি মেডিকেল কলেজে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগগুলো নিদারুন শিক্ষক সংকট চলছে। বর্তমানে এ বিষয়ে সর্বসাকুল্যে অধ্যাপক রয়েছেন মাত্র দুই জন। তারা হলেন- ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে কর্মরত বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. হাবিবুজ্জামান চৌধুরী ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চক্রবর্তী।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, প্রফেসর ডা. হাবিবুজ্জামান চৌধুরী আগামী সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে অবসরে যাচ্ছেন। অধ্যাপক প্রণব কুমার চক্রবর্তীর চাকরির মেয়াদ আর মাত্র এক বছর বাকি।
সূত্র জানায়, মৌলিক এ বিষয়টিতে শুধু অধ্যাপকই নয়, সহযোগী, সহকারি ও প্রভাষকের পদেরও রয়েছে নিদারুন সংকট।
সব সরকারি মেডিকেল কলেজ মিলিয়ে ৮ জন সহযোগী অধ্যাপক ও মাত্র ১০ জন সহকারি অধ্যাপক রয়েছেন। এছাড়া অধ্যাপকদের অধিকাংশই ঢাকার তিনটি সরকারি মেডিকেল কলেজে কর্মরত রয়েছেন।
জানা গেছে, শুধু অধ্যাপকই নন, এ বিষয়ে সরাসরি প্রভাষকের সংখ্যা খুবই কম। প্রায় প্রতিটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভিন্ন বিষয়ের স্নাতকোত্তর ও ডিপ্লোমাধারি চিকিৎসকদের দিয়ে পাঠদান চলছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সাবেক একাধিক অধ্যাপক জাগো নিউজকে বলেন, আগামী দু’এক বছরের মধ্যে মৌলিক এ বিষয়ে শিক্ষাদানের মতো অভিজ্ঞ সিনিয়র অধ্যাপক থাকবে না। এছাড়া এমবিবিএস, স্নাতকোত্তর ও ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাস নেয়া, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, সমন্বয় সাধন, পরীক্ষা নেয়া, খাতা দেখা, ফলাফল প্রকাশ, লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন সঠিকভাবে প্রণয়নসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সুচারুভাবে পরিচালনার জন্য যোগ্য লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না।
তারা আরো জানান, বর্তমানে চিকিৎসকরা ফরেনসিক মেডিসিনসহ যে সব বিষয়ে প্রাইভেট প্রাকটিসের মাধ্যমে বাড়তি আয় করা যায় না সে সব বিষয়ে শিক্ষক হতে চান না। তাছাড়া নানা কারণে এ বিভাগের শিক্ষকদের সহসা পদোন্নতি না হওয়ায়ও চিকিৎসকরা এ বিষয়ে শিক্ষক হতে চান না।
বর্তমানে এমবিবিএস কোর্সের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন কোর্স এমসিপিএস এ ১০ জন, এমডি কোর্সে ২ জন ও ডিপ্লোমা কোর্সে ১৪ জন পড়াশুনা করছেন।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)’র একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপকসহ দক্ষ শিক্ষকের অভাবের বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে। এ কারণে তারা হাতে গোনা দু`একজন অধ্যাপককে কিভাবে অবসরে যাওয়ার পরও কাজে লাগানো যায় সে ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করছেন।
তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে এ বিষয়ে অধ্যাপকদের অবসর গ্রহণের পর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোতে রেখে দেয়া যায় কিনা এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা পেশ ও সুপারিশ করবেন বলে জানান।
এমইউ/আরএস/এমএস