দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুর কাজ শেষই হচ্ছে না


প্রকাশিত: ০৯:২৭ এএম, ২৮ জুন ২০১৫

রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তা নদীর ওপর নির্মাণাধীন দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুর কাজ বর্ধিত সময়েও শেষ হচ্ছে না। ব্যবস্থাপনায় জটিলতা, আর্থিক সঙ্কট ও রাজনৈতিক অস্থিরতার অজুহাতে নির্দিষ্ট সময়ের পর অতিরিক্ত ১ বছর সময় বাড়ানো হলেও নির্মাণাধীন সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ৬৫ শতাংশ। ফলে ৩য় দফায় ফের বাড়ানো হয়েছে কাজের মেয়াদকাল। তবে এ সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে কী না তা নিয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ২২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তিস্তা নদীর উপর গঙ্গাচড়া-কালীগঞ্জ সড়ক সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুরে গ্রামীণ যোগাযোগ ও অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবে এটিকে অনুমোদন দেয়া হয়।

মহিপুর-কাকিনা রুটে ১২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ফুটপাতসহ ৯.৫ মিটার প্রস্থে ২টি এবার্টমেন্টে, ১৮টি পায়ার সংবলিত মূল সেতুর নির্মাণ কাজের মেয়াদকাল ধরা হয় ২২ মাস। এছাড়া গঙ্গাচড়ার মহিপুর হতে কালীগঞ্জের কাকিনা পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সংযোগ সড়কের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ কোটি টাকা এবং ওই সংযোগ সড়কে তিনটি কালভার্ট ও দুটি ছোট সেতুর নির্মাণ ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ কোটি টাকা। সেই সঙ্গে মূল সেতু ও পুরো সড়ক জুড়ে থাকছে আলোর ব্যবস্থা।

২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দ্বিতীয় তিস্তা সেতু নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন।  
লালমনিরহাট স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের অধীনে কাজের দায়িত্ব পান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘ডাব্লিউ এমসিজি-নাভানা গ্রুপ’।

সরেজমিনে জানা যায়, ২০১৪ সালের জুন মাসে প্রথম দফার মেয়াদ শেষে সেতুর ৪৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় দফায় কাজের মেয়াদ চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট ২২ মাসের পর অতিরিক্ত ১ বছর সময় বৃদ্ধি করা হলেও এ পর্যন্ত ১৮টি পায়ারের ২২৪টি পাইল, ১১টি ক্যাপ এবং লোডটেস্ট ও বেজ কাস্টিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে গার্ডারের কাজ চলছে। অপরদিকে লালমনিরহাট-বুড়িমারী আঞ্চলিক মহাসড়কের সঙ্গে সেতুর সংযোগের জন্য পাঁচটি প্যাকেজের আওতায় পাঁচ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক, তিনটি কালভার্ট ও ছোট্ট দুটি সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আশরাফুল ইসলাম নামের এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, মোট ৮৫টি গার্ডারের মধ্যে ইতোমধ্যে ৩টি গার্ডার বসানো হয়েছে।

এদিকে, ৩য় দফায় ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবারও মেয়াদ বাড়ানো হলেও এ সময়ের মধ্যে মূল সেতুর কাজ শেষ হবে কী না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন সেতু সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী।



ওই এলাকার গজঘণ্টা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কমল কান্ত রায় জাগো নিউজকে বলেন, বর্ষা এলে কাজ বন্ধ থাকে। এছাড়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অন্য জায়গায় কাজ করায় নির্দিষ্ট সময়ে হয়তো কাজ শেষ হবে না।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জেনারেল ম্যানেজার মকবুল হোসেন জাগো নিউজকে জানান, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সময়মতো মালামাল সরবরাহ করতে না পারায় ও আর্থিক সঙ্কটের কারণে কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করা সম্ভব হয়নি। তবে আগামী সময়ের আগেই কাজ শেষ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

লালমনিরহাট এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আল আমিন জাগো নিউজকে জানান, বিভিন্ন কারণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মালামাল সঠিক সময়ে আনতে না পারায় কাজের গতি কিছুটা কমে এসেছিল। এ পর্যন্ত ৬৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ফলে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজের মেয়াদকাল বাড়ানো হয়েছে। তবে কাজের মেয়াদ বাড়লেও কোনো ব্যয় বাড়বে না বলে তিনি দাবি করেন। এছাড়া ওই সময়ের মধ্যেই নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এমজেড/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।