গ্রামীণ বাজার উন্নয়নে এমপিদের জন্য প্রকল্প অনুমোদন
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। এর মধ্যে নতুন করে গ্রামীণ এলাকায় বাজার উন্নয়নের জন্য সতেরশ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে।
৪৯১টি উপজেলায় ৫২০টি বাজার নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি উপজেলায় তিনতলা বাজার হবে, যার আয়তন চার হাজার থেকে ১০ হাজার বর্গফুট। এ ছাড়া ১০ হাজার ৯০২ কোটি টাকা ব্যয়ে উত্তরায় নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের জন্য বিভিন্ন ধরনের ১৫ হাজার ৩৬টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মঙ্গলবার শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় দেশব্যাপী গ্রামীণ বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পসহ মোট ৮ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রকল্প অনুমোদনের বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান। অনুমোদিত ৮ প্রকল্পে ব্যয় হবে ১৫ হাজার ২২১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, যার মধ্যে সরকারি ৩ হাজার ৭৬৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সহায়তা ১০ হাজার ৯২৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের আওতায় ১টি করে তিনতলা ৪ হাজার থেকে ১০ হাজার বর্গফুট আয়তনবিশিষ্ট মোট ৫২০টি গ্রামীণ বাজার নির্মাণ করা হবে।
জানা গেছে, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পরে প্রথমবারের মতো এমপিদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে ২০১০ সালের মার্চে ৪ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন করে। ওই সময় প্রত্যেক এমপিকে ১৫ কোটি টাকা ব্যয় করার জন্য বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
এরই ধারাবাহিকতায় গত দশম সংসদের নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে ৬ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয় এমপিদের। ২০১৫ সালের মে মাসে তার অনুমোদন দেয় সরকার। এতে সিটি করপোরেশনের বাইরে এমপিরা বরাদ্দ পেয়েছেন ২০ কোটি টাকা করে, যা আগামী সংসদ নির্বাচনের আগেই শেষ হয়ে যাবে। তাই নির্বাচনের আগে দেশব্যাপী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে গত মাসে ৬৬৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ের জন্য আলাদা প্রকল্পের অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সার্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক এ প্রকল্পের মাধ্যমে টাকা এমপিরা পছন্দমতো মসজিদ, ঈদগাহ, কবরস্থান, মন্দির, শ্মশান, গীর্জা, প্যাগোডা, গুরুদুয়ারা এবং খেলার মাঠ উন্নয়নে ব্যয় করতে পারবেন।
স্থানীয় সরকার বিভাগ বলছে, গ্রামীণ বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণের জীবনযাত্রা ও অর্থনীতি কৃষির উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। কৃষি পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করতে হলে গ্রামীণ হাট/বাজার নির্মাণ জরুরি। গ্রামাঞ্চলে হাট/বাজারের পূর্ণ সুবিধা থেকে গ্রামীণ কৃষক ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা (ব্যবসায়ী) সুযোগ পায় না।
বর্তমান বাজার ব্যবস্থায় কৃষক তার উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণ সুবিধার অভাবে মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে স্বল্প মূল্যে উৎপাদন স্থলেই উৎপাদিত পণ্য বিক্রয় করতে বাধ্য হয়। অন্যদিকে স্থায়ী অবকাঠামো না থাকায় গ্রামীণ বাজারে মালামালের সরবরাহ অপ্রতুল থাকায় ভোক্তাদের অধিক মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয় করতে হয়।
আলোচ্য প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামীণ বাজার ৪ হাজার থেকে ১০ হাজার বর্গফুট নির্মাণ করা হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভৌত অবকাঠামো সুবিধা প্রদান করা হলে কৃষি ও অকৃষি পণ্যের সহজ বাজারজাতকরণের মাধ্যমে কৃষক প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে তার পণ্য বিক্রি করতে পারবে। এক্ষেত্রে ভোক্তারাও প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সহজে ও ন্যায্য মূল্যে ক্রয়ের সুবিধা পাবে।
প্রকল্পটি দেশের সব উপজেলায় বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পল্লী অঞ্চলের কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণ, কৃষি পণ্য ন্যায্য মূল্যে প্রাপ্তি, ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণ, পরিবহন ব্যয় হ্রাস ও প্রকল্প এলাকায় উন্নত হাট/বাজার অবকাঠামো তৈরি হবে।
জানা গেছে, ঢাকায় বর্তমানে ১ কোটি ৮৯ লাখ লোকের বাস। কিন্তু এই মানুষের জন্য বাসস্থান অপ্রতুল। উত্তরায় ২১৪ দশমিক ৪৪ একর জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে। ১৩১টি ভবনে সাড়ে ১২শ বর্গফুটের ১১ হাজার ৪টি ফ্ল্যাট। আর ৪৮টি ভবনে হবে ৪ হাজার ৩২টি ফ্ল্যাট, যার আয়তন এক হাজার ৫০ বর্গফুট। মাধ্যমিক শিক্ষা উপবৃত্তি কার্যক্রমকে আরও ২ বছর বাড়ানো হয়েছে। এতে ৭৩ লাখ ৫৪ হাজার শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পাবে। ১৮৩টি উপজেলায় এটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে ৫৩৮ কোটি টাকা।
অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পগুলো হলো, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জামালপুর-কালিবাড়ী-সরিষাবাড়ী সড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতিকরণ প্রকল্প, স্থানীয় সরকার বিভাগের নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে কঠিন বর্জ্য সংগ্রহ এবং অপসারণ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প, স্থানীয় সরকার বিভাগের চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের মাধ্যমিক শিক্ষা উপবৃত্তি (২য় পর্যায়) প্রকল্প, স্থানীয় সরকার বিভাগের দেশব্যাপী গ্রামীণ বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, বিদ্যুৎ বিভাগের বাকেরগঞ্জ-বরগুনা ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন এবং বরগুনা ১৩২-৩৩ কেভি উপকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের বাংলাদেশ আঞ্চলিক যোগাযোগ প্রকল্প-১, ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো বাস্তবায়ন এবং কাস্টমস আধুনিকায়ন জোরদারকরণ প্রকল্প ।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আজকের সভায় ৮টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ১৫ হাজার ২২১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে ব্যয় সরকারি অর্থায়ন থেকে করা হবে ৩ হাজার ৭৬৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য ৫২৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে ব্যয় হবে ১০ হাজার ৯২৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব জিয়াউল ইসলাম, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল ইসলাম প্রমুখ।
এমএ/ওআর/এমএস