ঢামেকের নিরাপত্তায় সুদক্ষ বাহিনী চান চিকিৎসকরা
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় আনসার নয় আরও সুদক্ষ বাহিনী চান আন্দোলনকারী ইন্টার্ন চিকিৎসক ও অন্য চিকিৎসকরা।
তারা বলছেন, এর আগেও একাধিকার চিকিৎসক, শিক্ষার্থী, ইন্টার্ন চিকিৎসক ও নার্সদের উপর হামলা-মারধরের ঘটনা ঘটলেও জোরালো ভূমিকা পালন করতে পারেননি আনসার সদস্যরা।
সর্বশেষ গত রোববার ঢামেক হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন নওশাদ নামে এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগ তোলেন রোগীর স্বজনরা।
এ নিয়ে চিকিৎসক ও আনসার সদস্যদের সঙ্গে স্বজনদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেট ও চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দেন চিকিৎসকরা। বিপাকে পড়েন বিভিন্ন জেলা শহর থেকে আসা সাধারণ রোগী ও তাদের স্বজনরা।
চিকিৎসক ও আনসার সদস্যকে মারধরের প্রতিবাদে ইন্টার্ন চিকিৎসক ও আবাসিক চিকিৎসারা মঙ্গলবার সকাল থেকে আন্দোলন শুরু করেন নামে। তবে আন্দোলনে দেখা যায়নি আনসার সদস্যদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আসিফ নামে এক চিকিৎসক বলেন, গত ৪ মাসে এ ধরনের ঘটনা একাধিকার ঘটেছে।
কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এর সুষ্ঠু কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। সর্বশেষ চিকিৎসকের হাত ভেঙে দেয়ার ঘটনাও ঘটল।
তিনি বলেন, যে চিকিৎসকরা রোগীদের সেবায়, সুস্থতায় নিরসল চেষ্টা করে যাচ্ছেন তাদের যদি নিরাপত্তা না থাকে তবে স্বাস্থ্যসেবায় চিকিৎসকদের মনেযোগ নষ্ট হয়।
তিনি বলেন, আনসার সদস্যরা ঢামেক ও হাসপাতালের সার্বিক নিরাপত্তায় যথেষ্ট নয়। আমরা আনসার সদস্যদের চাই না। সুদক্ষ আলাদা বাহিনী চাই। যারা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবেন।
আন্দোলনে অংশ নেয়া ইন্টার্ন চিকিৎসক মিরানা আফরোজ জানান, চিকিৎসকদের সুরক্ষা আইন থাকলেও বাস্তবায়ন নেই। আইনের প্রয়োগ যদি থাকত তবে আজ আমাদের এখানে এভাবে চিকিৎসা বন্ধ করে আন্দোলনে দাঁড়াতে হতো না। আমরা আইনের সুস্পষ্ট প্রয়োগ চাই।
আরেক ইন্টার্ন চিকিৎসক মোস্তাফিজুর রহমান মুস্তাক বলেন, ঢামেক কলেজ কর্তৃপক্ষ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদরে সুরক্ষা দিতে পারেনি। রোগীর স্বজনরা, বহিরাগতরা এসে আমাদের মারধর করছে। তবে আমাদের নিরাপত্তা কে দেবে?
এরআগে গত রোববার বিকেলে ঢামেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, চিকিৎসাসেবায় আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে থাকি।
এরপরেও রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে স্বজনদের হাতে চিকিৎসক-আনসার সদস্য মারধরের ঘটনা ন্যাক্কারজনক।
তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রোগীরা এখানে আসেন। তাদের সুস্থতায় আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে থাকি। দক্ষ চিকিৎসকদের দিয়ে এত দ্রুত চিকিৎসা সেবা খুব কম হাসপাতালে দেয়া হয়। কিন্তু এরপরেও চিকিৎসকদের মারধর লাঞ্ছিতের ঘটনা মানা যায় না। এতে তো উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়বেই।
ঢামেক হাসপাতাল পরিচালক বলেন, আমরা কাউকে জিম্মি করিনি। বরং চিকিৎসকদের উপর হামলা হয়েছে। তাদের লাঞ্ছিত করা হয়েছে। এমন ঘটনায় তো একটা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখা হবেই। প্রত্যেকটি কমিউনিটির একটা সেন্টিমেন্ট আছে। সেটাই এখানে হয়েছে। যারা চিকিৎসকদের মারধর করেছেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঢামেক হাসপাতালের সিসিইউয়ের প্রধান অধ্যাপক ডা: ওয়াদুদ চৌধুরী বলেন, পাশে বসে ২০ মিনিট ধরে আমি স্বজনদের বলেছি কেন রোগীর অবস্থা খারাপ। এরপর আমি রাউন্ড শেষে ক্লাসে যাই। পরে এসে আজব কথা শুনতে পাচ্ছি। চিকিৎসকদের কোনো ভুল ছিল না। ম্যানেজমেন্টেরও কোনো ভুল ছিল না।
এদিকে চিকিৎসককে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় রোববার রাতেই মামলা দায়ের করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ওই ঘটনায় রোগীর ৩ স্বজনকে আটকও করেছ পুলিশ।
ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. বিদ্যুৎ কান্তি পালকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের নির্দেশে দেন। সার্বিক ঘটনা খতিয়ে দেখে তদন্ত কমিটির সদস্যদের তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
জেইউ/এনএফ/আরআইপি