ঢামেকে জরুরি চিকিৎসা বন্ধ : ভোগান্তিতে রোগী-স্বজনরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:৫১ এএম, ২৯ অক্টোবর ২০১৭

‘ভাই রোগীরে ভর্তি করান, দেরি করাইয়েন না, নইলে রোগী বাঁচবো না। অনেক দূর থেকে আসছি।’ এভাবেই চিৎকার আর কান্না করে বলছিলেন অন্তঃসত্ত্বা ঝুমুর মামা জাকির হোসেন। কিডনি ও ডায়াবেটিস রোগেও আক্রান্ত ঝুমু। রোববার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে নার্স ডাক্তার ও গেট বন্ধ করে দাঁড়ানো আনসার সদস্যদের সামনে এমন আহাজারি করছিলেন তিনি।

jagonews24

শুধু ঝুমুরের স্বজন নয়, এরকম অর্ধশত রোগী ও তাদের স্বজন ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে অবস্থান নিলেও রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করছে না কর্তৃপক্ষ।

ঢামেক হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন নওশাদ নামে এক রোগীর মৃত্যুর পর ডাক্তারদের মারধর করে রোগীর স্বজনরা। এ খবরে আনসার সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বাধা দিলে তাদেরও মারধর করে তারা। এ ঘটনায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেট ও চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেয় চিকিৎসকরা।

jagonews24

বিভিন্ন জেলা শহর থেকে রোগীরা আসলেও তাদের কাউন্টার থেকে ভর্তি টিকেট দেয়া বন্ধ রয়েছে।

মামা জাকির হোসেন বলেন, ‘ঝুুমু অন্তঃসত্ত্বা। তার ডায়াবেটিস, হার্ট ও কিডনিরও সমস্যা আছে। পটুয়াখালী সদর হাসপাতাল থেকে ঢামেকে আনা হয়েছে। কিন্তু হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কোনো রোগীকে ভর্তি নিচ্ছে না, খুব বিপাকে পড়েছি; আমরা এখন এ রোগী নিয়ে কোথায় যাবো? তারা আমাদের কষ্ট বুঝতেছে না।’

jagonews24

মুন্সিগঞ্জ ভবেরচর থেকে শ্বশুর আবদুল কাদিরকে নিয়ে এসেছেন জামাতা তোফাজ্জল হোসেন। তিনি বলেন, ‘তিনদিন ধরে প্রসাব-পায়খানা বন্ধ। মুন্সিগঞ্জে চিকিৎসা না পেয়ে ঢামেকের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলাম। কিন্তু ভর্তি নিচ্ছে না। রোগীর অবস্থা বেগতিক।’

তোফাজ্জলের স্ত্রী পারভীন বলেন, ‘ওনার খুব কষ্ট হচ্ছে, আমরা বাবা ঝুটঝামেলা বুঝি না, চিকিৎসা নিতে এসে এমন বিপাকে পড়বো বুঝিনি।’

jagonews24

নারায়ণগঞ্জ আড়াইহাজার এলাকা গর্ভবতী মেয়েকে নিয়ে এসেছেন মা অালেয়া। তিনি কান্নাকাটি করে বলেন, ‘প্রসব বেদনা উঠেছে, মেয়ের খুব কষ্ট হচ্ছে, ভর্তি করা জরুরি। কিন্তু ভর্তি নিচ্ছে না। আল্লাহ জানে মেয়ে ও ওর অনাগত সন্তানের কী হবে?’

কুমিল্লা থেকে আসা ডায়রিয়া রোগী আসমা বেগমের বেহাল দশা হলেও হাসপাতালে জায়গা হচ্ছে না। ছেলে শামীম জানান, ‘মায়ের অবস্থা খারাপ কিন্তু রোগীকে অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামাতে দিচ্ছে না।’

jagonews24

ঢামেকের সামনে আরও দেখা যায়- কিশোরগঞ্জ পাকুন্দিয়া থেকে আসা মানসিক রোগী পলি আক্তার সিএনজিতেই বসে অাছেন, মামা মাহবুবুল ছুটোছুটি করছেন। কিন্তু রোগীকে ভেতরে ঢুকতেই দিচ্ছেন না আনসার সদস্যরা, বন্ধ টিকেট বিক্রিও।

সেখানে আরও দেখা যায়- মানিকগঞ্জের শিবালয় থানার বতুনী গ্রামের মন্টু মিয়াকে। ফুলবাড়িয়ায় অজ্ঞানপার্টির খপ্পড়ে পড়ে জ্ঞান হারিয়েছেন তিনি। তাকে ঢামেকে অানেন বিয়াই মোসলেম। তারও ভর্তির ব্যবস্থা হয় না ঢামেকে। এরপর তাকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যায় স্বজনরা।

jagonews24

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে, ঢামেক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও নাক-কান গলা বিভাগের প্রধান ইউসুফ ফকির জানান, চিকিৎসকদের মারধরের ঘটনায় সাময়িক চিকিৎসা বন্ধ করেছে ইন্টার্নরা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জরুরি বৈঠকে বসেছেন। পরে বিস্তারিত জানানো হবে।

শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান জানান, চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনায়, ঘটনাস্থল থেকে রোগীর দুই স্বজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

জেইউ/এমএমজেড/এসএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।