মিটারে চলে না কোনো সিএনজি অটোরিকশা

আবু সালেহ সায়াদাত
আবু সালেহ সায়াদাত আবু সালেহ সায়াদাত , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:০৮ এএম, ২৮ অক্টোবর ২০১৭

 

সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের যাত্রীভাড়ার নৈরাজ্য কিছুতেই থামছে না। যাত্রীদের অভিযোগ, মিটারে চলাচল করে না কোনো সিএনজি অটোরিকশা। এছাড়া অটোরিকশা চালকদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি ও যাত্রীর ইচ্ছানুযায়ী গন্তব্যে যেতে অনীহাসহ রয়েছে নানা অভিযোগ।

সরকারের পক্ষ থেকে পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফেরাতে চেষ্টা অব্যাহত থাকলেও মালিক-চালকদের দৌরাত্ম্যের কারণে অটোরিকশা খাতে নৈরাজ্য আরও বাড়ছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যমতে, ৮৭ ভাগ সিএনজি অটোরিকশা মিটারে চলে না। ৯২ ভাগ অটোরিকশা মিটারের অতিরিক্ত ২০ থেকে ৫০ টাকা বেশি ভাড়া নেয়। যাত্রীর পছন্দের গন্তব্যে যেতে রাজি হয় না ৭৮ শতাংশ অটোরিকশা চালক।

রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর থেকে জরুরি কাজে রামপুরা যাবেন জাকির হোসেন। দীর্ঘক্ষণ বাসের অপেক্ষার পরও অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে বাসে উঠতে পারেননি। তাই বাধ্য হয়ে সিএনজিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তখন শুরু হয় সিএনজি ঠিক করার আরেক যুদ্ধ।

তিনি বলেন, রামপুরা যাওয়ার জন্য তিন জন চালকের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা কেউ যাবে না। এরপর যারা যেতে চাইলো তারা কেউ মিটারে যেতে রাজি না। যেতে ভাড়া লাগবে একদাম সাড়ে ৩০০ টাকা বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন অন্য আরেকজন চালক। অথচ মিটারে গেলে সর্বোচ্চ ১৮০ থেকে ২০০ টাকা লাগত।

গুলশান ১ নম্বর থেকে মতিঝিল যাবেন বেসরকারি চাকরিজীবী ফারজানা খাতুন। তিনি বলেন, চাকরির কারণে প্রতিদিন রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। বাসে অতিরিক্ত ভিড় থাকে আবার সিটিং সার্ভিসের জন্য অনেক বাসের গেইট বন্ধ থাকে। ফলে প্রায় নিয়মিত সিএনজিতে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু সবসময় কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য অনুযায়ী চালকরা যেতে চান না। কোনো সিএনজি কখনই মিটারে যায় না। তারা অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করে সব সময়। যে গন্তব্যে যেতে মিটারে ভাড়া পড়বে ১৫০ টাকা সেই ভাড়া দিতে হয় ৩০০ টাকা। তারা যাত্রীদের জিম্মি করে ভাড়া আদায় করে। আমারা যাত্রীরা তাদের কাছে অসহায়।

২০১১ সালে সিএনজি অটোরিকশার সরকার নির্ধারিত কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া বাড়িয়ে ৭ টাকা ৬৪ পয়সা এবং বিরতিকালীন চার্জ ১ টাকা ৪০ পয়সা করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে ভাড়া ও জমা বাড়ানো হয়। ২০১৫ সালে সিএনজির জমা ৯০০ টাকা এবং যাত্রীদের জন্য প্রথম ২ কিলোমিটারের ভাড়া ৪০ টাকা, পরে প্রতি কিলোমিটার ১২ টাকা এবং বিরতিকালীন চার্জ প্রতি মিনিটে ২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু কোনো সিএনজি চালক এই ভাড়া একদমই মানেন না। বরং তারা তাদের নিজেদের ইচ্ছে মত যাত্রীদের কাজ থেকে ভাড়া আদায় করেন।

এ বিষয়ে সিএনজি চালক আকরাম আলী বলেন, এটা ঠিক যে সিএনজি চালকরা নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া আাদয় করে। কারণ আমাদের মিটারে চলাচল করলে লাভ থাকে না। এমনিতেই জমার টাকা বেশি। দোষ চালকদের হলেও আড়াল থেকে কলকাঠি নাড়ছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশার মালিকরা। তারা নির্ধারিত টাকার চেয়ে প্রতিদিন অতিরিক্ত জমার টাকা আদায় করছেন। আবার যানটি দুই বেলা দুই চালকের কাছে দিচ্ছেন। তাই বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে হয়।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, সিএনজির ক্ষেত্রে এখন সরকার নির্ধারিত জমা ৯০০ টাকা। কিন্তু মালিকরা আমাদের কাজ থেকে ১১০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করে।

বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে সিএনজি অটোরিকশার একজন গ্যারেজ মালিক বলেন, জমার টাকা একটু বেশি না নিলে চলে না। কারণ একটা সিএনজি রাস্তায় চালালে অনেক ধরনের খরচ আছে যা মালিকদেরই দিতে হয়। এছাড়া যেভাবে সব কিছুর দাম বাড়ছে তাতে করে জমার টাকা কিছুটা বেশি না নিলে তো আমরা টিকে থাকতে পারবো না।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, যাত্রীদের জিম্মি করে এই খাতে নৈরাজ্য চালাচ্ছেন মালিক ও চালকেরা। তারা ইচ্ছেমতো জমা ও ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে বিআরটিএ ও ট্রাফিক পুলিশের যৌথ অভিযানের মাধ্যমে মিটারবিহীন চলাচল বন্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে মালিক কর্তৃক অবৈধ অতিরিক্ত জমা আদায় বন্ধে কোম্পানি ভিত্তিক অটোরিকশা পরিচালনা বা সরকারি কোষাগারের জমা আদায় করে তা মাসিক ভিত্তিতে মালিককে বণ্টনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

অনদিকে রাজধানীতে চলাচলকারী বাসে সিটিং সার্ভিস এবং সিএনজি চালিত অটোরিকশা মিটারে না যাওয়ার বিষয়ে গত ২৫ অক্টোবর সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভা শেষে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, রাজধানীতে চলাচলকারী বাসে সিটিং সার্ভিস এবং সিএনজি চালিত অটোরিকশা মিটারে না যাওয়ার বিরুদ্ধে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সিটিং সার্ভিস ও মিটারে সিএনজি (অটোরিকশা) না যাওয়ার বিষয়ে করণীয় ঠিক করার জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি রয়েছে। ওই কমিটি দু-তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবে। ওই রিপোর্টের আলোকে এক সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

এএস/এআরএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।