স্বপ্নের দুয়ার খুলছে কাল

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:১৩ এএম, ২৫ অক্টোবর ২০১৭

অবশেষে স্বপ্নের দুয়ার খুলছে। উদ্বোধনের মাধ্যমে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হচ্ছে রাজধানীবাসীর দীর্ঘ প্রতীক্ষার মৌচাক-মালিবাগ-মগবাজার ফ্লাইওভারটি। বৃহস্পতিবার ফ্লাইওভারটি যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। ফলে যানজটের তীব্র যন্ত্রণা থেকে নগরবাসী যেমন রেহাই পাবেন, তেমনি যাতায়াত সময়ও কমবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মৌচাক-মালিবাগ সমন্বিত উড়ালসড়কের মূল নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে আগেই। ধোয়ামোছা, রং, বিদ্যুতের খুঁটি, বাতি লাগানোর কাজও শেষে। উদ্বোধন উপলক্ষে রঙিন সাজে সেজেছে পুরো ফ্লাইওভারটি। নানা রংয়ের পতাকা ছাড়াও দৃষ্টিনন্দন কাপড়ে সাজানো হয়েছে ফ্লাইওভারটি। পুরো ফ্লাইওভার বিভিন্ন রংয়ের লাইটিং করা হয়েছে। শোভা পাচ্ছে রং বেরং এর পতাকা।

উড়াল সড়কটির বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও এই প্রকল্পের পরিচালক সুশান্ত কুমার পাল জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে, এখন শুধু অপেক্ষা উদ্বোধনের। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এটির উদ্বোধন করবেন।

Fly-over1

ছয়টি মোড় অতিক্রম করেছে ফ্লাইওভারটি:

চার লেনের ফ্লাইওভারটি ছয়টি মোড় অতিক্রম করেছে। এগুলো হলো- সাতরাস্তা, বিএফডিসি, মগবাজার, মৌচাক, শান্তিনগর ও মালিবাগ মোড়। তিনভাগে বিভক্ত ফ্লাইওভারটির একটি অংশ সাতরাস্তা-মগবাজার-হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের সামনে পর্যন্ত বিস্তৃত। এই অংশ নির্মাণ করেছে নাভানা কনস্ট্রাকশন। গত বছরের মার্চ মাসে এ অংশ যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়।

আরেক অংশ গেছে মৌচাক থেকে নিউ ইস্কাটন পর্যন্ত। গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর এই অংশের একদিক খুলে দেয়া হয়। এই অংশ নির্মাণ করেছে তমা কনস্ট্রাকশন।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) মোড় থেকে কারওয়ান বাজার অংশ যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয় গত ১৭ মে। এই অংশও তৈরি করেছে নাভানা কনস্ট্রাকশন। উড়াল সড়কের মৌচাক-মালিবাগ-শান্তিনগর-রাজারবাগ-মগবাজার অংশটি এখন খুলে দেয়ার অপেক্ষায় আছে। এটা নির্মাণ করেছে তমা কনস্ট্রাকশন।

Fly-over1

উড়ালসড়কটি দৈর্ঘ্যের দিক দিয়ে দ্বিতীয়:

প্রায় ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ তিন তলা বিশিষ্ট চার লেনের এই ফ্লাইওভারটি ভূমিকম্প সহনশীল। ৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই ফ্লাইওভার দেশে এখন পর্যন্ত যে কয়টি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে, তার মধ্যে মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভারটি দৈর্ঘ্য দ্বিতীয়। প্রথম স্থানে আছে ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার (গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী)। মৌচাক-মালিবাগ চার লেনের এ ফ্লাইওভারে ওঠানামার জন্য ১৫টি র‌্যাম্প রয়েছে।

এটি এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে, যা রিখটার স্কেলে ১০ মাত্রার ভূমিকম্পও সহ্য করতে পারবে। এর প্রতিটি পিলার ১৫০ মিটার পর্যন্ত গভীর করা হয়েছে। এর বিভিন্ন জায়গায় ৮টি বড় মোড় ও তিনটি রেলক্রসিং রয়েছে। রাজধানীর যানজট নিরসনে মালিবাগ-মগবাজার ফ্লাইওভারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Fly-over1

তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা, এফডিসি, মগবাজার, হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল, বাংলামোটর, মালিবাগ, রাজারবাগ পুলিশ লাইন এবং শান্তিনগর মোড়ে ওঠানামা করার ব্যবস্থা রয়েছে। এটার প্রতিটি পিলার পাইলের গভীরতা প্রায় ৪০ মিটার গভীর।

প্রকল্পের ব্যয়:

শুরুতে এই প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। পরে নকশায় পরিবর্তন আনা হয়। শেষ পর্যন্ত ব্যয় বাড়তে বাড়তে ১ হাজার ২১৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকায় দাঁড়ায়। এর মধ্যে সরকার অর্থায়ন করেছে ৪৪২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওএফআইডি) দিয়েছে ৭৭৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা। মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্প ২০১১ সালে একনেকে চূড়ান্ত হয়। ২০১৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ৯ কিলোমিটার লম্বা ফ্লাইওভারটির নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন।

এএস/এমআরএম/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।