‘ধলেশ্বরীকে মেরে ফেলার কাজ চলছে’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:৫৫ পিএম, ২০ অক্টোবর ২০১৭

রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি শিল্প সরিয়ে সাভারের হেমায়েতপুরে নেয়ার মাধ্যমে বুড়িগঙ্গার পর ধলেশ্বরী নদীকে মেরে ফেলার কাজ চলছে বলে মন্তব্য করেছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম।

শুক্রবার রাজধানীর নটরডেম কলেজে আয়োজিত ‘অষ্টম জাতীয় পরিবেশ সম্মেলন’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। সম্মেলনটির আয়োজন করে নটরডেম নেচার স্টাডি ক্লাব।

পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রথমে আমরা কোনো পরিকল্পনা করিনি, যেখানে-সেখানে শিল্প গড়ে তুলেছি। বুড়িগঙ্গা ধ্বংস করেছি। আরও অনেক নদ-নদী ধ্বংস করেছি। এখন ট্যানারি শিল্প সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সাভারে। বুড়িগঙ্গার পর ধলেশ্বরীকে মেরে ফেলার একটা কাজ সেখানে শুরু হয়েছে।

১৯৫০ সালে বুড়িগঙ্গা নদীর তীর ঘেষে হাজারীবাগে শুরু হয় ট্যানারির কার্যক্রম। সেই সময় রাষ্ট্রীয়ভাবে অধিগ্রহণ করা ২১টি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি মালিকার একটি প্রতিষ্ঠান প্রাথমিকভাবে ট্যানারির কার্যক্রম শুরু করে। এরপর ধীরে ধীরে জমজমাট হয়ে ওঠে হাজারীবাগে ট্যানারি । ১৯৬৬ সালের দিকে ট্যানারির সংখ্যা বেড়ে ২০০ ছাড়িয়ে যায়।

হাজারীবাগে ট্যানারির সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে বুড়িগঙ্গা নদী দূষণের পরিমাণ। ট্যানারির বর্জ্যে দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে বুড়িগঙ্গার পানিতে। নদীর পানি পরিণত হয় কালো দূষীত পানিতে। ফলে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে বুড়িগঙ্গার জীববৈচিত্র। সেইসঙ্গে ট্যানারির বর্জ্যে হাজারীবাগে সাধারণের বসবাস প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

ট্যানারির বর্জ্যে বুড়িগঙ্গা দূষণের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বুড়িগঙ্গার আজকে যে অবস্থা, এটা যদি আরও বাড়তে দেয়া হয় তাহলে ঢাকার অস্তিত্ব বিলিন হয়ে যাবে। তবে আশার কথা প্রধানমন্ত্রী এটাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছেন এবং বুড়িগঙ্গার পানি সহনীয় অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে একটি প্রকল্প আমাদের দিয়েছেন।

‘ট্যানারি শিল্পকে ইতোমধ্যে বুড়িগঙ্গার তীর থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এতে বুড়িগঙ্গার সব অসুখ সেরে না গেলেও এমন একটা উন্নতি হয়েছে যেটা দেখার মতো। বড়িগঙ্গায় জীববৈচিত্র্য যেটা একেবারের ছিল না অক্সিজেন শূন্যে চলে আসার কারণে। এখন বুড়িগঙ্গার জীববৈচিত্র্য ফিরে আসছে। মাঝে-মধ্যে দুই একটা গাংচিল বা বক উড়াউড়ি করতে দেখা যায়’ -বলেন নজরুল ইসলাম।

চলতি বছর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সাভারের হেমায়েতপুরের হরিণধরা গ্রামে প্রায় ১৯৯ একর জমিতে গড়ে তোলা চামড়া শিল্পনগরী সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে বুড়িগঙ্গাকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হলেও এই চামড়া শিল্পনগরীটি গড়ে তোলা হয়েছে ধলেশ্বরী নদীর তীরে। ফলে ট্যানারির বর্জ্যে ধলেশ্বরী নদীর পানি নতুন করে দূষিত হচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, বুড়িগঙ্গাকে ধ্বংস করে হাজারীবাগ থেকে চামড়া শিল্প সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এখন প্রতিদিন পত্রিকায় যে সংবাদ দেখি তাতে মনে হচ্ছে ধলেশ্বরীকে মেরে ফেলার একটা কাজ সেখানে শুরু হয়েছে।

নটরডেম কলেজের অধ্যক্ষ ফাদার হেমন্ত রোজারিও’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নটরডেম কলেজের সাবেক ছাত্র ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তাহমিদ।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় তাহমিদ বলেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে। যে কারণে এখন অক্টোবরেও অতিবৃষ্টি হচ্ছে। এ সময়ে অতিবৃষ্টি হওয়ার মানে ধানের ক্ষতি হওয়া। আর ধানের ক্ষতি হলে আমাদের খাদ্যেরও সমস্যা হবে।

এমএএস/জেডএ/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।