রোহিঙ্গা ইস্যুতে সবকিছুই করছি : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:৪৪ এএম, ১৮ অক্টোবর ২০১৭

রোহিঙ্গা ইস্যুতে সব ধরনের কূটনৈতিক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, কোনোটা বাদ দেয়া হয়নি বলে দাবি করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বুধবার সাম্প্রতিক অগ্রগতি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন মন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘কিছু ভিন্ন মতাবলম্বী আমাদের দেশে আছেন। এটা তো স্বীকার করতে হবে। তারা কিন্তু সামনা-সামনি বলতে সাহস পায় না। এখানে এমন কেউ থাকলে বলে ফেলুন আমি শুনতে রাজি আছি। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রথমেই আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলাপ-আলোচনা শুরু করব। সেটা তো আমরা করছিই, যদি না হয় তবে আমরা জাতিসংঘে যাব। কিন্তু আমরা তো ইতোমধ্যে জাতিসংঘে গিয়েছি, আগেই গিয়েছি। আমরা তো সবগুলো (সবকিছু) করছি, কোনোটা বাদ রাখিনি, যদি রেখে থাকি তাহলে বলেন’

জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী এ পর্যন্ত ৫ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সহিংসতা বন্ধ না হওয়ায় অনুপ্রবেশ ঘটেই চলছে। তবে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের নিরাপদে স্বদেশে ফের পাঠানোই আমাদের এখন মূল লক্ষ্য। এজন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে আমরা দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক ফোরামে নিয়মিত ও নেপথ্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

মাহমুদ আলী বলেন, ‘আমাদের কূটনৈতিক উদ্যোগ ও জনসংযোগ কার্যক্রমের ফলেই আজ আন্তর্জাতিক মহলে রোহিঙ্গা ইস্যুটি এমন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হচ্ছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আরিয়া ফরমূলা সভার আয়োজন এবং সভায় দেয়া সব সদস্যের বক্তব্য থেকে এটি পরিষ্কার যে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক মহল গভীরভাবে নিয়োজিত আছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দেয়া বক্তব্যের কারণে এই সমস্যার মূল যে মিয়ানমারে নিহিত এবং মিয়ানমারকেই যে এই সমস্যা সমাধান করতে হবে তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অনুধাবন করতে সমর্থ হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশের পক্ষে যে জনমত সৃষ্টি হয়েছে তা সামনে আরও দৃঢ় হবে বলে আমরা আশা করছি।’

‘তবে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়টি একদিন, এক মাসে সমাধান হবে না,’ বলেন মাহমুদ আলী।

গত ১৩ অক্টোবর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বিশেষ গোপনীয় ‘আরিয়া ফরমূলা’ সভায় রাখাইন অ্যাডভাইজারি কমিশনের সভায় চেয়ারম্যান কফি আনান বক্তব্য দেন জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ও মিয়ানমারও এই আলোচনায় অংশ নেয়। বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৫ দফা প্রস্তাব বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা কামনা করে বক্তব্য দেয়া হয় সেখানে।’

rohingya

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কফি আনান রোহিঙ্গা নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানান। মিয়ানমারে সহিংসহা বন্ধ করে মানবিক সহায়তা দিতে সেখানে আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রবেশাধিকার দিতেও আহ্বান জানান তিনি।

এ ছাড়া কফি আনান তার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ও প্রত্যাবাসিত নাগরিকদের নিরাপদ জীবন, ও নিশ্চিত জীবিকার নির্বাহের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানান বলে জানান মন্ত্রী।

‘আরিয়া ফরমূলা সভায় সব রাষ্ট্রই কফি আনান প্রতিবেদনের প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছে এবং রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে এটিকে একটি রোডম্যাপ হিসেবে উল্লেখ করে তা বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে। সভায় মিয়ানমারের প্রতিনিধি বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনার কথা উল্লেখ করে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে তাদের গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন’ বলেন মাহমুদ আলী।

আরিয়া সভার শেষে নিরাপত্তা পরিষদের চলতি মাসের সভাপতি ফ্রান্স রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনকে জাতিগত নিধন হিসেবে উল্লেখ করে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাউন্সিলের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।

পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

আরএমএম/এনএফ/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।